ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সাব কমিশন গঠনের প্রস্তাব বাংলাদেশের

আগের সংবাদ

চিকিৎসার ফি নির্ধারণ কতদূর? : বেসরকারি হাসপাতালে সেবা নেন ৮৬ শতাংশ মানুষ, স্বাস্থ্য খাতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে

পরের সংবাদ

সরগরম চারুকলা : চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি

প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শরীফা বুলবুল : চারুকলা প্রাঙ্গণে পা রাখতেই দেখা গেল সাজ সাজ রব। বাঁশ-পেরেকের ঠুকঠাক শব্দ, মাটির সরায় তুলির আঁচড়, কেউ তৈরি করছেন কাগজের পাখি, বাঘ, রাজা, রানি। বর্ষবরণের আর মাত্র ১৪ দিন বাকি। পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতির কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা। সবাই বেশ চনমনে, হাসি-ঠাট্টায় মশগুল।
প্রধান ফটকের বাঁ পাশে শোভা পাচ্ছে জলরঙে তরুণ শিল্পীদের আঁকা চিত্রকর্ম। এর পাশেই দাঁড়িয়ে গভীর অভিনিবেশে আঁকছেন পেইন্টিং শেষ বর্ষের ছাত্র রকি। জলরঙে আকা শিল্পকর্মটিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষের গলায় আটকে যাওয়া কাটা টেনে বের করার চেষ্টা করছেন আরেকজন মানুষ! চিত্রকর্মটির নাম দিয়েছেন তিনি ‘গলার কাঁটা’। ছবিটি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের দেশে মৌলবাদ একটা গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই কাঁটা রাজনৈতিক দলগুলো সরাতে পারছে না বা চাচ্ছে না। এই কাঁটায় আমরা প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত হচ্ছি। দিন দিন যন্ত্রণা বাড়ছেই। আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি। এই বিষয়টি আমি প্রতীকী হিসেবে শিল্পে রূপ দিতে চেয়েছি।
একটু সামনে যেতেই দেখা গেল ড্রইং এন্ড পেইন্টিং বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী দীপাঞ্জলি দত্ত রং-তুলিতে রাঙাচ্ছেন ল²ীর সরা। জিউমেট্রিক ফর্মে তিনি আঁকছেন রানির মুখ।
দীপাঞ্জলি জানালেন, ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে আমরা কাজ করছি। পড়াশোনার পাশাপাশি মঙ্গল শোভাযাত্রার এই কাজগুলো করা আমরা মনে করি এক ধরনের রিফ্রেশমেন্ট। বৈশাখ এক ধরনের উদ্দীপনা নিয়ে আসে মনে। মূলত ২০ মার্চ থেকে পেইন্টিং এবং সরার কাজ শুরু করেছি। তবে এখনো জোরেশোরে শুরু হয়নি। যা তৈরি করেছি তা বিক্রিও হচ্ছে।
দীপাঞ্জলির পাশেই মনোমুগ্ধ এক পদ্ম আঁকছেন নৈঋতা পাল কৃষ্ণা। যেন পুকুরজুড়ে পদ্মটি হাসি ছড়াচ্ছে একাই। তার পাশে বিশাল দাশ আঁকছেন নানা রংয়ের মাছ। মাছ নয় যেন সরার মধ্যে আস্ত একটি ফুলের বাগান। কারুশিল্প দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অর্পিতা দেবনাথ মিতু এঁকে ফেললেন ময়ুরপঙ্খী নাও।
পেইন্টিং শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী এফ এম রাহিম রবি জলরঙে আঁকছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মুখ। তরুণ এই শিল্পীর তুলির আঁচড়ে যেন নিপূণভাবে ধরা দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। যে কারোরই চোখ আটকে যাবে।
গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ফজর আলী আঁকছেন ছোটবেলায় দেখা রাখাল ছেলে ও তার নারী সঙ্গীকে। চমৎকার এক জুটি ধরা দিয়েছে ছোট্ট একটি ক্যানভাসে। ড্রইং এন্ড পেইন্টিং বিভাগের শিক্ষার্থী ফুয়াদ হাসান আদিবাসী ফর্মে ময়ুর আঁকছেন। ময়ুর নয় যেন মায়াবী এক বন। ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগের শিক্ষার্থী সালসাবিল তার ক্যানভাসে তুলে এনেছেন এক কাল্পনিক সমুদ্র। কল্লোলিত সমুদ্র। একই বিভাগের শিক্ষার্থী রাফিন নাওয়ারও কল্পনার সমুদ্র আঁকছেন। তবে এই সমুদ্র একটু অন্যরকম। নীল জল দিগন্তবেষ্টিত। চোখ শীতল করা নীল। তরুণ শিক্ষার্থীদের আঁকা এসব ছবির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে বড় সরা ৮শ থেকে ২ হাজার টাকা, ছোট সরা ৩শ থেকে ৮শ টাকা।
এসব আয়োজনের পেছনে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন চারুকলা অনুষদের ৬৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। তাদেরই

একজন ভাস্কর্য শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী শিমুল কুম্ভকার। তিনি মাঠে বহেরা তলায় বসে স্ট্রাকচার নির্মাণকর্মীদের কাজে তদারক করছেন।
জানতে চাইলে শিমুল কুম্ভকার ভোরের কাগজকে বলেন, শিল্পী রফিকুন নবী গত ১৯ মার্চ লাল ক্যানভাস বানিয়ে হলুদ ও নীল রঙ ব্যবহারের মাধ্যমে পাখি এঁকে, ঢোলের শব্দে বাংলা নববর্ষ ১৪৩০ বরণের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতিপর্বের উদ্বোধন করেন।
তিনি বলেন, এবার ৬ থেকে ৭টি স্ট্রাকচার নির্মাণের কাজ চলছে, আরো বেশিও হতে পারে। সব মিলিয়ে প্রস্তুতি যতটুকু নেয়া সম্ভব, আজ পর্যন্ত সব ঠিকঠাক আছে। যেহেতু রোজা শুরু হয়েছে, তাই আমাদের বিক্রি কম। যে তহবিল থেকে আমাদের অর্থের জোগান হয়, সেটা একটু কমে যাওয়ার কারণে আমাদের একটু ধীরগতি। তবে আমাদের পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, যেন সবাই মিলে ১৪ এপ্রিল মঙ্গল শোভাযাত্রা উদযাপন করতে পারি।
আরেক শিক্ষার্থী সুমিত রায় বলেন, আমরা যেহেতু লোকশিল্পের মোটিভগুলোকে গুরুত্ব দেই, তার ওপর ভিত্তি করে আমরা পেঁচা, রাজা-রানি, ছোট পাখি, বড় পাখি-এগুলো করছি। এছাড়া টেপা পুতুল, ঘোড়া- এই ফর্মগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। এ ছাড়া বিলুপ্তপ্রায় অনেক পাখিও এতে অন্তর্ভুক্ত হবে।
অর্থ বিষয়ে তদারকের দায়িত্বে রয়েছেন আবতাহী রহমান উৎসব। তিনি বলেন, রোজা চলছে। রোজা রেখেই ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী বর্ষবরণ প্রস্তুতিপর্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। কারণ কোনোরকম স্পন্সর ছাড়াই আমরা এ আয়োজন করছি। অনেকে চায় তাদের প্রতিষ্ঠানের স্পন্সর দিয়ে যুক্ত হতে। কিন্তু আমরা তা চাই না। তবে আমরা চাই সব বয়সের মানুষের অংশগ্রহণে এ আয়োজন সফলতা পাক।
মেষ তৈরির দায়িত্বে থাকা মৃৎশিল্প বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী শ্রেষ্ঠ সাহা বলেন, এবারের আয়োজনে ছোট-বড় রাজা-রানি, টেপা পুতুল, সূর্য, পেঁচাসহ আরো কিছু মোটিফ যুক্ত হবে।
চারুকলা অনুষদের ডিন শিল্পী নিসার হোসেন জানান, কয়েকদিনের মধ্যেই নির্ধারণ করা হবে এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য। সেই অনুযায়ী কাজ শুরু করবেন শিক্ষার্থীরা। তবে অর্থ সংগ্রহের জন্য কাজ শুরু হয়ে গেছে। চারুকলার শিক্ষার্থীরা জলরং-অ্যাক্রেলিক চিত্র, সরাচিত্র ও মুখোশের পাশাপাশি নানা হস্তশিল্প তৈরি করছেন। এসব বিক্রির অর্থ থেকে হবে শোভাযাত্রার আয়োজন।
২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশের মঙ্গল শোভাযাত্রা ইউনেসকোর ‘অস্পর্শনীয় শিল্পের’ তালিকাভুক্ত হয়। সরকারের পক্ষ থেকে এ আয়োজনে সম্পৃক্ততা থাকলেও চারুকলার শিক্ষার্থীরা চান নিজেদের মতো শিল্পকর্ম তৈরি করে সেসব বিক্রির মাধ্যমে আয়োজন করতে।
চারুকলার ডিন নিসার হোসেন বলেন, এর ফলে শিল্প ও শিল্পীর সঙ্গে মানুষের সম্পৃক্ততা তৈরি হয়। রমজানের মধ্যে বাংলা নববর্ষ হলে আয়োজনের আকারে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হয়। এবার শোভাযাত্রা চারুকলার সামনে থেকে শুরু করে ঢাকা ক্লাব হয়ে, শিশুপার্ক ঘুরে আবার চারুকলার সামনে পৌঁছে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়