ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সাব কমিশন গঠনের প্রস্তাব বাংলাদেশের

আগের সংবাদ

চিকিৎসার ফি নির্ধারণ কতদূর? : বেসরকারি হাসপাতালে সেবা নেন ৮৬ শতাংশ মানুষ, স্বাস্থ্য খাতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে

পরের সংবাদ

বিদায় ‘চার খলিফা’র একজন : নূরে আলম সিদ্দিকী আর নেই

প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ‘বিরাশি’ বছর জীবনের প্রথমার্থের পুরোটাই স্বাধীনতা সংগ্রামে মুখর। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ৬২ সালের ছাত্র আন্দোলন, ৬৬’র ৬ দফা আন্দোলন এবং বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনসহ সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রেখে দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন তিনি। ছিলেন ছাত্রলীগের সভাপতি, স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক, ডাকসু ভিপি। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ যে চার ছাত্র নেতাকে ওই সময় ‘চার খলিফা’ হিসেবে অভিহিত করা হতো তাদের অন্যতম ছিলেন মুজিববাহিনীর এই অন্যতম কর্ণধার নূরে আলম সিদ্দিকী। গতকাল বুধবার কিংবদন্তি জীবনের ছায়া রেখে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এই সংগঠক।
তৃতীয় জানাজা শেষে সাভারে নিজের করা মসজিদের পাশে ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নূরে আলম সিদ্দিকীকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। এর আগে সকাল ১০টায় তার মরদেহ হেলিকপ্টারে করে ঝিনাইদহে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জানাজার পর বাদ আছর গুলশানের সেন্ট্রাল মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় নূরে আলম সিদ্দিকীকে ‘গার্ড অব অনার’ দেয়া হয়।
এদিকে ভোর রাতে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক নূরে আলম সিদ্দিকীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বর্ণময় জীবন : বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের কিংবদন্তি ছাত্রনেতা, মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক নূরে আলম সিদ্দিকী ১৯৪০ সালের ২৬ মে যশোরের ঝিনাইদহ মহকুমায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তার পিতা ঝিনাইদহের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে আসতে শুরু করেন। ছাত্রলীগের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে ঢাকা কলেজে ভর্তি হোন। কিন্তু সে সময়ের ঢাকা কলেজে অধ্যক্ষ সরাসরি পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। ছাত্রলীগের রাজনীতি এবং শিক্ষা আন্দোলনে জড়িত থাকায় তাকে কলেজ থেকে বের করে দেয়া হয়। পরে জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হয়ে পুনরায় সক্রিয় রাজনীতি শুরু করেন। এরপর আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন নূরে আলম সিদ্দিকী।
স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রারম্ভে ১৯৭০ সালে ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭০-১৯৭২ মেয়াদে ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কও নির্বাচিত হন। সেইসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি পদেও নির্বাচিত হন। ছাত্রলীগ সভাপতি নির্বাচিত হয়ে সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করতে দেশব্যাপী নির্বাচনী প্রচারণা চালান। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেন।
দেশ স্বাধীনের পরে তিনি ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হোন। তবে ১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম ও ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঝিনাইদহ-২ আসনে পরাজিত হয়েছিলেন। তারপর দলীয় সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান একসময়ের এই কিংবদন্তি ছাত্রনেতা। শেখ মুজিবের বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠা ও তার রাজনৈতিক গুরু হিসেবে মূল্যায়নে নূরে আলম সিদ্দিকী এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতার প্রশ্নে আপসহীনতাই শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু করেছে। বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে অবিচল থাকায় তিনি হয়েছেন জাতির জনক। তার রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা, নিজস্ব মতামতের ওপর শ্রদ্ধা এবং তা বাস্তবায়নে সংগ্রামই সমসাময়িক রাজনীতিবিদদের ছাড়িয়ে তিনি হয়েছেন বাঙালির অবিসংবাদিত মহানায়ক, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক। ’
নূরে আলম সিদ্দিকীর ছেলে তাহজীব আলম সিদ্দিকী বর্তমানে ঝিনাইদহ-২ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আরো শোক : নূরে আলম সিদ্দিকীর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী,
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, ঢাকা স্টক একচেঞ্জ, রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়