ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সাব কমিশন গঠনের প্রস্তাব বাংলাদেশের

আগের সংবাদ

চিকিৎসার ফি নির্ধারণ কতদূর? : বেসরকারি হাসপাতালে সেবা নেন ৮৬ শতাংশ মানুষ, স্বাস্থ্য খাতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে

পরের সংবাদ

প্রথম ভূমি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী : মানুষকে ঝামেলামুক্ত ভূমি সেবা দিন > দেশে-বিদেশে থাকা সবার জমির মালিকানা রক্ষার ব্যবস্থা নিয়েছি

প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : জমির মালিকানা সংক্রান্ত সামাজিক-পারিবারিক সমস্যার অবসান ও ঝামেলামুক্ত সেবা নিশ্চিত করতে ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ভূমির মালিকানা সুনির্দিষ্ট করতে ভূমি বণ্টন ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজ করতে হবে। এর ফলে পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যার সমাধান হবে। কেননা সমাজে এটা খুবই সাধারণ ঘটনা যে ভাই-বোন উভয়েই একে অপরকে পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে। ফলে হামলা, হত্যা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। যদি একটি সঠিক ভূমি ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়, তাহলেই এই সমস্যার সমাধান হবে।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল বুধবার দুপুরে ভূমি মন্ত্রণালয় আয়োজিত দেশের প্রথম তিন দিনব্যাপী জাতীয় ভূমি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, আইন সচিব মো. গোলাম সারওয়ার, ভূমি সচিব মুস্তাফিজুর রহমান, রাজবাড়ি সদর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) নূরজাহান আখতার সাথী। অনুষ্ঠানে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সাতটি উদ্ভাবনী উদ্যোগের সূচনা করেন। এগুলো হলো- ল²ীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্মৃতিস্তম্ভ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গুচ্ছগ্রাম কমপ্লেক্স, রেজিস্ট্রেশন-মিউটেশন ইন্টারকানেকশন, স্মার্টল্যান্ড ম্যাপ, স্মার্টল্যান্ড রেকর্ডস, স্মার্টল্যান্ড পিডিয়া, স্মার্ট ল্যান্ড। সারাদেশে

৪০০ উপজেলায় সার্ভিস সেন্টার ও আধুনিক ভূমি অফিস।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেশে-বিদেশে অবস্থানরত সব মানুষের জমির মালিকানা রক্ষার ব্যবস্থা নিয়েছি। আপনি দেশে ও বিদেশে যেখানেই থাকুন না কেন-আপনার সম্পত্তি আপনারই থাকবে। আমরা আপনার অধিকার সুরক্ষিত ও সুরক্ষার ব্যবস্থা নিয়েছি।
জমি সংক্রান্ত পরিষেবা পেতে জনগণকে কিছুতেই ঝামেলার সম্মুখীন করা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা একটি ডিজিটাল ল্যান্ড সিস্টেম তৈরি করছি। তাই এই সমস্যাটি আর থাকবে না। আমাদের ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাতটি উদ্যোগের প্রতিটিই একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
২০১৩-১৪-১৫ সালে সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন তারা রাস্তায় যানবাহনে পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছিল। ছয়টি ভূমি অফিসসহ ৭০টি সরকারি অফিসের ক্ষতি করেছিল। ফলে সারাদেশে ভূমি অফিসগুলোর জরাজীর্ণ অবস্থার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। আমরা আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত উন্নত উপজেলা ভূমি অফিস নির্মাণ করেছি। আজ আমি ৪০০টি উপজেলায় আধুনিক ভূমি অফিস উদ্বোধন করেছি। বিএনপি-জামায়াত চক্র জনগণের সম্পদ ধ্বংস করে আর আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণে কাজ করে। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য জনগণের সেবা এবং শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটি আধুনিক, সময়োপযোগী ও ডিজিটাইজড ভূমি ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই। এজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। অনলাইন ভূমি নামজারি ও কিউআর কোডসহ ডিসিআর ও ভূমি কর ব্যবস্থা চালু করেছি। দেশবাসী এখন ১৬১২২ নম্বরে কল করে বিশ্বের যে কোনো স্থান থেকে নামজারি, খতিয়ান ও ভূমি উন্নয়ন কর দেয়াসহ ভূমি সংক্রান্ত সেবা পেতে পারবেন। এ পর্যন্ত ভূমি অফিসগুলো ১৩ লাখের বেশি ফোন কল পেয়েছে- যার মধ্যে ৬ হাজার ৮০০টি কল বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তিদের কাছ থেকে এসেছে। যে কেউ তার জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে অনুসন্ধান করে তার জমির অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারেন। এই ব্যবস্থা চালুর ফলে জনগণ দ্রুততম সময়ে জমি সংক্রান্ত সেবা পাচ্ছে। ভূমি ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজেশন খুব শিগগিরই সম্পন্ন করা হবে। আধুনিক ব্যবস্থার ফলে ভূমি সংক্রান্ত সেবা থেকে রাজস্ব আদায় বেড়েছে। এ খাত থেকে এ পর্যন্ত ৭৭০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ‘ডেভেলপিং ট্রান্সপারেন্ট এন্ড একাউন্টেবল পাবলিক ইনস্টিটিউশনস’ ক্যাটাগরিতে মর্যাদাপূর্ণ ‘ইউনাইটেড নেশনস পাবলিক সার্ভিস এওয়ার্ড-২০২০’ অর্জনের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় ও ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি (ডব্লিউএসআইএস) এওয়ার্ড ২০২২ অর্জনের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ’স ডিজিটাল ল্যান্ড (ডেভেলপমেন্ট) ট্যাক্স সিস্টেমকে ধন্যবাদ জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে উৎপাদন বাড়াতে আমরা কৃষি ব্যবস্থায় যান্ত্রিকীকরণ করছি। বঙ্গবন্ধু ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমি করমুক্ত এবং দেশের স্বাধীনতার পরপরই কৃষকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব সার্টিফিকেট মামলা বাতিল করে ঘোষণা করেছিলেন, যে কেউ সর্বোচ্চ ১০০ বিঘা জমির অধিকারী হতে পারবে। অতিরিক্ত জমি ভূমিহীনদের বরাদ্দ করা হবে।
তিনি বলেন, দেশবাসীর প্রতি আমি আবারো অনুরোধ করব- কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে হবে। যাতে করে বাংলাদেশকে খাদ্য শস্যের জন্য কারো ওপর নির্ভর করতে না হয়।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উন্নত দেশসহ গোটা বিশ্ব অর্থনৈতিক ও খাদ্য সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। তাই, আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমরা আর আমদানির ওপর নির্ভর করে থাকতে চাই না। আমরা আমাদের নিজস্ব চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত খাদ্য শস্য অন্য দেশে রপ্তানি করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়