সিপিডির সংবাদ সম্মেলন : নবায়নযোগ্য জ¦ালানি নীতি বাস্তবায়নে বড় বাধা দুর্নীতি

আগের সংবাদ

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্মার্ট বাংলাদেশ : মতিয়া চৌধুরী, সংসদ উপনেতা

পরের সংবাদ

সড়কের ইউলুপে কোথাও সুবিধা, কোথাও ভোগান্তি

প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেব দুলাল মিত্র : রাজধানীর প্রধান সড়কে যানজট নিরসনে ইউলুপ করা হয়। এসব ইউলুপে সুবিধা এবং সমস্যা দুই-ই আছে। কিছু ইউলুপ ভালো কাজে এলেও কিছু ইউলুপ এখন সমস্যায় পরিণত হয়েছে। বেশিরভাগ ইউলুপই এত সংকীর্ণ যে গাড়ি ঘোরানোর জায়গা কম থাকায় বাসচালকদের সমস্যা হয়। কোনো কোনো ইউলুপে গাড়ি ইউটার্ন নেয়ার সময় যানজটের সৃষ্টি হয়। কোনো কোনো ইউলুপে উল্টোদিক থেকেও গাড়ি চলাচল করায় ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে। মোটকথা যানজট নিরসনে একের পর এক ইউলুপ ও ফ্লাইওভার তৈরির পরও পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি।
সরজমিনে দেখা গেছে, রামপুরা ইউলুপ কিছুটা কাজে এসেছে। ২০১৬ সালে উদ্বোধনের পর থেকে রামপুরা ইউলুপ সেতু নগরীর পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। হাতিরঝিল হয়ে নগরীর পশ্চিমের সব এলাকা এবং পূর্বের বনশ্রীসহ অন্য এলাকায় সহজে যাতায়াতের পথ তৈরি হয়েছে। বনশ্রী মূল সড়ক থেকে ইউলুপ চত্বর ঘুরে সেতুতে উঠলে নামতে হবে প্রগতি সরণি অথবা হাতিরঝিলের শ্রীশ্রী মহাপ্রভুর মন্দিরের সামনের সড়কে। আবার হাতিরঝিল থেকে সরাসরি প্রগতি সরণিতে প্রবেশ করা যায়। এতে রাজধানীর মেরাদিয়া, বাসাবো, গোড়ান, মাদারটেক, ডেমরা, স্টাফ কোয়ার্টার, গাউছিয়া, ভৈরবসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ সহজেই কুড়িল বিশ্বরোড, গুলশান, বাড্ডা, হাতিরঝিল হয়ে কারওয়ান বাজার, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, শাহবাগ, গুলিস্তানসহ অনেক এলাকায় সহজে যাতায়াত করতে পারছে। তবে ইউলুপের আগেই যানবাহনের দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়, এটিই এখন সমস্যা। এদিকে মালিবাগ থেকেই দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে।
সাতরাস্তার বিজি প্রেস থেকে উত্তরার রাজল²ী কমপ্লেক্স পর্যন্ত সড়কে ১০টি ইউলুপ রয়েছে। যানজট নিরসনে ৩১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে এগুলো নির্মাণ করা হয়। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ২০২১ সালের জুনে উদ্বোধন হয়। রাজল²ী কমপ্লেক্স, আজমপুর, র‌্যাব-১ অফিসের সামনে এবং কাওলা ইউলুপ যানজট নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে। এই সড়কে যানজট কমেছে। এই এলাকায় রাস্তা বেশি চওড়া হওয়ায় সড়ক ব্যবহারকারীরা এই ইউলুপের সুফল পাচ্ছে। তবে এই ইউলুপ দিয়ে উল্টো পথেও বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। কখনো কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও উল্টোপথে চলাচল করে। এতে দ্রুগতির এই সড়কে ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়েছে।
তেজগাঁও এলাকার বিজি প্রেস ও নাবিস্কোর সামনের ইউলুপ যানজট নিরসনে বড় ভূমিকা রাখতে পারছে না। এই ইউলুপে বাসচালকদের ভোগান্তি বেড়ে যায়। মহাখালী বাস টার্মিনালের বাসগুলো নাবিস্কো ইউলুপ ব্যবহারে কোনো সুবিধা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন এনা পরিবহনের বাসচালক মিজান। এই দুই ইউলুপে দীর্ঘসময় চালকদের বসে থাকতে হয়। রাস্তায় কম জায়গা নিয়ে ইউলুপ করা হয়েছে। বাস ঘোরানোর সময় পুরো রাস্তা নিয়েই বাস ঘোরাতে হয়। এ সময় অন্য লেনের যানবাহন চলাচল থেমে যাওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে এই সড়কের ইউটার্ন বা ইউলুপের সমস্যার বিষয়টি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এরপর দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও সিটি করপোরেশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সিটি করপোরেশন মনে করে এই ইউলুপগুলো করায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ যানজট নিরসন হয়েছে।
বনানী চেয়ারম্যানবাড়ীর ইউলুপের পরে আর্মি স্টেডিয়াম পর্যন্ত রাস্তার কোথাও গাড়ি ঘোরানোর জায়গা নেই। এই সড়কের গাড়িচালকদের বনানী যেতে হলে আর্মি স্টেডিয়াম হয়ে প্রায় ২ কিলোমিটার পথ ঘুরে আসতে হয়। উবার চালক লোকমান হোসেন বলেন, এই পথে সঠিক স্থানে ইউলুপ করা হয়নি। তাই আর্মি স্টেডিয়াম ঘুরে আসতে দীর্ঘ জ্যামে পড়তে হয় এবং অনেক বেশি সময় লাগে। আর্মি স্টেডিয়ামের ইউটার্নের জায়গা কম থাকায় গাড়ি ঘোরাতে সমস্যা হয়। গুলশান, বনানী, বারিধারা যেতে হলে এই ভিআইপি সড়কে সব যানবাহনের চালকদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক বলেন, উন্নত দেশের সড়কে ইউটার্ন, ইউলুপ বা ওভারপাস কোনো ব্যক্তির ইচ্ছায় করা হয় না। এগুলো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে করা হয়। কিন্তু ঢাকায় সিটি করপোরেশন ও পুলিশের লোকজনের ইচ্ছা অনুযায়ী এগুলো করার কারণে পুরোপুরি সুফল মিলছে না। রাস্তার প্রস্থ ও যানবাহনের পরিমাণ নির্ণয় না করেই ইউলুপ তৈরি করায় কোথাও কোথাও ভোগান্তি হচ্ছে। ইউলুপগুলোর কোনো ইউনিক ডিজাইন নেই। যেখানে যতটুকু জায়গার সংকুলান হয়েছে সেই অনুযায়ী করপোরেশনের ইঞ্জিনিয়াররা একটা ডিজাইন করে দায় সেরেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়