সিপিডির সংবাদ সম্মেলন : নবায়নযোগ্য জ¦ালানি নীতি বাস্তবায়নে বড় বাধা দুর্নীতি

আগের সংবাদ

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্মার্ট বাংলাদেশ : মতিয়া চৌধুরী, সংসদ উপনেতা

পরের সংবাদ

পরিদর্শন ও নিরীক্ষায় সফটওয়্যারের কাজে চিঠি চালাচালিতেই সময় পার

প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য : কেবল চিঠি চালাচালির মধ্যেই আটকে আছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) সফটওয়্যার অটোমেশনের কাজ। কবে নাগাদ এই কাজ শুরু হবে তা এখনই কেউ বলতে পারছেন না। কর্মকর্তাদের অদক্ষতায় কাজটি ঝুলে গেছে। অবশ্য এ নিয়ে কেউ দায়ও নিতে চাননি।
সংশ্লিষ্টদের মতে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে চিঠি দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছিল, আইসিটি বিভাগের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পূর্ব অনুমোদন ব্যতীত মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থাগুলো আলাদা ডাটা সেন্টার করতে পারবে না। তবু ডিআইএর পরিচালক অধ্যাপক অলিউল্লাহ মো. আজমতগীর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সাবেক সচিব আবু বকর ছিদ্দীকের কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চান, ক্লাউড সার্ভিসে অটোমেশন সফটওয়্যার হোস্টিং এবং ডাটা সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। অথচ নিয়ম অনুযায়ী ক্লাউড সার্ভিসে সরকারি ডাটা সেন্টারেই সংরক্ষণ করতে হয়। কিন্তু অভিযোগ আছে, সাবেক সচিব আবু বকর ছিদ্দীকের কাছে সিদ্ধান্তের নামে চিঠি দিয়ে সফটওয়্যারের পুরো কাজটি অন্তত এক বছর ঝুলিয়ে দেন ডিআইএ পরিচালক অধ্যাপক অলিউল্লাহ মো. আজমতগীর। সচিব আবু বকর ছিদ্দীকের বদলি হলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে নতুন সচিব আসার পর গত ২৯ জানুয়ারি ডিআইএকে একটি চিঠি দিয়ে মন্ত্রণালয় জানায়, সরকারি ডাটা সেন্টারে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ক্লাউড সার্ভিসে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের অটোমেশন সফটওয়্যার হোস্টিং এবং ডাটা সংরক্ষণের জন্য নির্দেশ দেয়া হলো। প্রসঙ্গত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনকালে অবৈধ আর্থিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ আছে ডিআইএর নিরীক্ষা দলের বিরুদ্ধে। মূলত এ বদনাম ঘোচাতে সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিরীক্ষা পরিচালনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু অদক্ষ কর্মকর্তার কারণে এ উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে। ফলে গচ্চা যাবে সফটওয়্যার তৈরি বাবদ খরচ হওয়া অর্ধকোটি টাকাও।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সফটওয়্যার তৈরির সময়ই সার্ভারের ডাটা স্টোরেজ ক্যাপাসিটি বা তথ্য সংরক্ষণ ক্ষমতার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া দরকার ছিল। ডিআইএর একাধিক সাবেক কর্মকর্তা অবশ্য জানান, তথ্য সংরক্ষণের জায়গার বিষয়টি তৎকালীন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হলেও তা আমলে নেয়নি। এতে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিরীক্ষার পরই পূর্ণ হয়ে যায় সার্ভারের স্টোরেজ ক্যাপাসিটি। ফলে ওই সফটওয়্যারের মাধ্যমে আর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। সার্ভিসসংক্রান্ত চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় এখন সফটওয়্যারে কোনো ত্রæটি দেখা দিলে সহযোগিতা পাবে না ডিআইএ। এতে সফটওয়্যার ব্যবহারের নতুন উদ্যোগও বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
ডিআইএ পরিচালক অধ্যাপক অলিউল্লাহ্ মো. আজমতগীর অবশ্য ভোরের কাগজকে ভুলের কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা পুরো বিষয়টি বুঝতে পারিনি। এছাড়া কারিগরি ত্রæটির কারণে কিছুদিন সফটওয়্যারটি ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি, এটা সত্য। আশা করছি, শিগগির আবার সফটওয়্যারটির ব্যবহার শুরু হবে। তবে কবে থেকে এর ব্যবহার শুরু হবে এটা বলতে পারেননি তিনি।
সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের সঙ্গে কথা বলে নিরীক্ষার সময় অবৈধ

আর্থিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগ থেকে রেহাই পেতেই সফটওয়্যারটি তৈরি হয়েছিল। সফটওয়্যারটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল যাতে নিরীক্ষার নামে ঘুষবাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। নিয়ম অনুযায়ী, নিরীক্ষার আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা প্রয়োজনীয় তথ্য ইনপুট দিতেন। আর নিরীক্ষার সময় প্রাপ্ত তথ্য তখনই ইনপুট দিত নিরীক্ষা দল। এতে কম সময়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয়ে যেত নিরীক্ষা প্রতিবেদন। পরবর্তী সময়ে প্রতিবেদনে কোনো তথ্য পরিবর্তন করা সম্ভব হতো না। এতে নিরীক্ষা দলের কারসাজির সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া সফটওয়্যারটির মাধ্যমে শিক্ষা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা চাইলেই অনলাইনে নিরীক্ষা কার্যক্রম তদারকি করতে পারেন। তবে কার স্বার্থে সফটওয়্যারটির কাজ চিঠি চালাচালিতে আটকে যায় তার বিস্তারিত জানা যায়নি। প্রকাশ্যে শুধু পরিচালকের চিঠিই সামনে এসেছে। এই চিঠির বিষয়ে পরিচালক অলিউল্লাহ আজমতগীর অবশ্য বলেন, প্রশাসনিক কারণে অনুমতি নেয়া প্রয়োজন ছিল। এজন্য তিনি চিঠি দিয়ে অনুমতি চেয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিরীক্ষা কার্যক্রম ডিজিটাল করার অংশ হিসেবে অটোমেশন সফটওয়্যার তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল ২০১৭ সালে। সফটওয়্যারটির নাম ডেভেলপমেন্ট অব ওয়েব বেইজ অটোমেশন সিস্টেম ফর দি এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশন এন্ড ডিরেক্টরেট অব ইন্সপেকশন এন্ড অডিট। দরপত্র প্রক্রিয়া ও অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যক্রম শেষে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর কার্যাদেশ পায় আইটি প্রতিষ্ঠান ইথিক্স অ্যাডভান্স টেকনোলজি লিমিটেড। এতে ব্যয় ধরা হয় ৪৭ লাখ টাকার বেশি।
নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, প্রথম দুই বছর ছিল সফটওয়্যার প্রস্তুতি ও উন্নয়নের কাল। পরবর্তী তিন বছর সহায়তাকাল। অর্থাৎ এই সময়ে সফটওয়্যার ব্যবহারে কোনো সমস্যা দেখা দিলে ডিআইএকে সহায়তা করবে আইটি প্রতিষ্ঠান। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। নিয়ম অনুযায়ী, এখন সফটওয়্যার ব্যবহারে কোনো প্রতিবন্ধকতা দেখা দিলে সহযোগিতা পাবে না ডিআইএ। তবে পরিচালক অধ্যাপক অলিউল্লাহ মো. আজমতগীর বলেন, কিছুদিন আগে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ক্লাউড সার্ভিসে সফটওয়্যারটির হোস্টিং ও ডাটা সংরক্ষণের বিষয়ে অনুমোদন পাওয়ার ফলে আশা করছি, সফটওয়্যারটি ব্যবহারে এখন আর সমস্যা হবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়