দুদক চেয়ারম্যান : দুর্নীতি নির্মূলে প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে দুদক

আগের সংবাদ

সড়কে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে : আইন ও বিধিমালার পরও সড়ক আইনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন নেই

পরের সংবাদ

সড়কে অনুমোদনহীন গাড়ি ও দুর্ঘটনা

প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অবাধ এবং বিরতিহীন এক মৃত্যু যাত্রায় পরিণত হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। তবে আমাদের দেশে শুধু সড়কেই যে অবিরাম মৃত্যু ঘটছে এমনটা নয়। মৃত্যু ঘটছে নৌপথ, রেলপথ এমনকি আগুনে পুড়ে নিজ ঘরে কিংবা কর্মস্থলে। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারণী মহল থেকে সড়ক তৈরিতেও আসছে না কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন। যে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে কিছুটা হলেও কমে যেত সড়কে অকাল মৃত্যুর সংখ্যা। এভাবে মৃত্যুর সংখ্যা ভারি হলেও আমাদের নিজেদের সচেতনতার জায়গায় বিন্দুমাত্র পরিবর্তন আসছে না। বেশির ভাগ সময় দেখা যায়, সড়ক কিংবা নদীপথে একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর সরকারিভাবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পাঁচ বা সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তদন্ত কমিটির এ প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখে না। তার মানে দেখা যায়, গতানুগতিক ধারায় এসবের ফলাফল শূন্য। এর মধ্যে কিছু প্রতিবেদন সব উপেক্ষা করে প্রকাশিত হলেও তদন্ত কমিটির সুপারিশ আর বাস্তবায়ন হয় না। সুতরাং এসব দুর্ঘটনার পেছনের কারণ খুঁজে বের করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার যেমন প্রয়োজন রয়েছে তেমনি যানবাহন, চালক, দুর্ঘটনাপ্রবণ রাস্তায় কাঠামোগত পরিবর্তন আনারও খুব দরকার রয়েছে। প্রায়ই দুর্ঘটনায় একটি সাধারণ অভিযোগ পাওয়া যায় আর তা হলো অনুমোদনহীন গাড়ি। সবশেষ খুলনা থেকে ঢাকাগামী ইমাদ পরিবহন সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ১৯ জন যাত্রী নিহত হয়েছেন। খাদে পড়া ইমাদ পরিবহনের এ বাসটি চলাচলের অনুমতি ছিল না। তবুও দুরন্ত গতিতে প্রতিনিয়ত গাড়িটি দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল। ঘটনাটি ঢাকা-খুলনা এক্সপ্রেসওয়ের মাদারীপুরে ঘটেছে। তবে যে দুর্ঘটনা কমাতে আমরা হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে হাইওয়ে এক্সপ্রেস তৈরি করছি সেখানেই কেন বারবার এমন ঘটনা ঘটছে তার কোনো অনুসন্ধান হচ্ছে না। এসব সমস্যার পেছনের কারণ খোঁজা হচ্ছে না। যার ফলে এসব জায়গায় দুর্ঘটনা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পত্রিকার একটি পরিসংখ্যান বলছে, দেশে চলাচলরত ৩৩ শতাংশ যাত্রীবাহী বাসের ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই। এছাড়া ৫৬ শতাংশ বাসের গতি নিয়ন্ত্রক সার্টিফিকেটও নেই। বিআরটিএর জুলাই ২০১৯-এ হাইকোর্টে দাখিল করা প্রতিবেদন অনুসারে দেখা যায়, সারাদেশে ফিটনেস নবায়ন ছাড়াই ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩২০টি যান নিয়মিত চলাচল করছে। তবে যে গাড়িগুলোকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে সেগুলোও রাস্তায় যাত্রী নিয়ে চলার জন্য পুরোপুরি উপযুক্ত কিনা সেটা নিয়েও সন্দেহ রয়ে যায়। সুতরাং এখানেও আমাদের বড় সংকট রয়ে গেছে। পাশাপাশি আমাদের হাইওয়ে পুলিশের কিছু গতানুগতিক আচরণ আর টাকার বিনিময়ে অসৎ পথ অবলম্বন এমন সব দুর্ঘটনার পেছনে অন্যতমভাবে দায়ী। এজন্য শুধু তদন্ত কমিটি করে ছেড়ে দিয়ে কিংবা লাখ লাখ টাকার হাইওয়ে এক্সপ্রেস বানিয়ে রাখলেই সড়কে দুর্ঘটনা কমবে না। বরং এসব দুর্ঘটনার অন্তর্নিহিত কারণ খুঁজে সেসব সমস্যার সমাধান করতে হবে। রাস্তার বাঁক, ইউটার্ন, দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে সতর্ক থাকার বিষয়টি লক্ষ রাখতে হবে। আর বিশেষ করে অনুমোদনহীন গাড়ির বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে দুর্ঘটনা ঘটার আগেই সে গাড়ি শনাক্ত করে নিষিদ্ধ করতে হবে, অন্যথায় শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা এবং সততার বিকল্প নেই। পাশাপাশি পথচারী কিংবা নিজস্ব পরিবহনের চালক হিসেবে আমাদের সচেতনতার জায়গাটিও সমৃদ্ধ করতে হবে। এভাবে সম্মিলিত উদ্যোগের মধ্য দিয়েই সড়কে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব।

রিয়াদ হোসেন : শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়