দুদক চেয়ারম্যান : দুর্নীতি নির্মূলে প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে দুদক

আগের সংবাদ

সড়কে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে : আইন ও বিধিমালার পরও সড়ক আইনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন নেই

পরের সংবাদ

শততম শহীদ মিনার তৈরি করার স্বপ্ন আব্দুস সালামের

প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আয়েন উদ্দীন, বিরুলিয়া, সাভার থেকে ফিরে : ছোটবেলায়ও দেখেছি, কলাগাছ দিয়ে পরম যতেœ শহীদ মিনার বানায় শিক্ষার্থীরা। কিন্তু একুশে ফেব্রুয়ারির পর সেটা আবার ভেঙে ফেলা হয়। দেখে আমার খারাপ লাগে। দেশে এখনো ৩৫ হাজারের বেশি বিদ্যালয়ে স্থায়ী শহীদ মিনার নেই। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোনার আগে অনেক শিশুরই শহীদ মিনার দেখার সুযোগ হয় না। ভাষার জন্য লড়াই-সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের স্মৃতিচিহ্ন শহীদ মিনার বিদ্যালয়ের আঙিনায় না থাকাটা হতাশাজনক। স্কুলে এত কিছু হয়, অথচ একটা স্থায়ী শহীদ মিনার থাকবে না- এ প্রশ্নের জবাব খুঁজে পান না ঢাকার দোহার উপজেলার বিলাশপুরের বাসিন্দা আব্দুস সালাম চৌধুরীর। এ জন্য কারো দিকে চেয়ে না থেকে নিজেই শহীদ মিনার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। নিজের টাকায় স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি করেন ভাষা আন্দোলনে রক্ত দেয়া শহীদদের স্মৃতির মিনার। নিজ এলাকাসহ মাদারীপুর, রংপুর ও কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন স্কুল ও মাদ্রাসায় নির্মাণ করেছেন ৫১টি শহীদ মিনার। ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শহীদ মিনারটি তার ৫২তম নির্মাণ কাজ। ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ রফিকউদ্দীন আহমদকে এটি উৎসর্গ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার এর উদ্বোধন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহাম্মদ নুরুল হুদা। এসময় নিজে ভাইয়ের নামে উৎসর্গ করা শহীদ মিনারটি ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছায় অনুষ্ঠানস্থলে এসেছিলেন শহীদ রফিকের ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম।
ঢাকার উপকণ্ঠ সাভারের বিরুলিয়ায় অবস্থিত ইস্টার্ন

ইউনিভার্সিটি শহীদ মিনারের পাদদেশে কথা হয় আব্দুস সালামের সঙ্গে। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, ২০০৮ সালে বিলাশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলাম। দেখলাম, কলাগাছ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। দেখে মন খারাপ হলো। নিজের ছোটবেলার স্মৃতি ফিরে এলো। তখনই সিদ্ধান্ত নিই, নিজের টাকায় শহীদ মিনার করব।
এরপর শুরু হয় তার স্বপ্ন পূরণের পালা। ঢাকার মেটালিক ও ইলেকট্রিক পণ্য ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বিশালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১৮ সালে প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। এই শহীদ মিনার নির্মাণে তিনি নিজস্ব স্টাইল ব্যবহার করেন। শহীদ মিনারের স্তম্ভ তৈরি করা হয় স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে আর পাকা বেদিতে ব্যবহার করা হয় কালো রঙের টাইলস। শহীদ মিনারের দুপাশে দুটি পলাশ ও শিমুল গাছ লাগানো হয়।
গাছের চারা লাগানো কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনাকালে ফেব্রুয়ারি মাসে শহীদ মিনারে ফুল দিতে পারেনি কেউ। ভবিষ্যতে যদি এরকম সময়ের মুখোমুখি হতে হয়, তখন গাছ দুটির ফুল প্রাকৃতিকভাবে শহীদের শ্রদ্ধা জানাবে। এই আদলে এখন পর্যন্ত ৫২টি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। ১০০টি শহীদ মিনার নির্মাণ করতে চাই। দেশের যে কোনো প্রান্তের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যদি স্থায়ী শহীদ মিনার না থাকে, তাহলে আমাকে জানালে শহীদ মিনার নির্মাণ করে দেয়ার চেষ্টা করব।
ভাষা শহীদের প্রতি আব্দুস সালামের আবেগকে সম্মান জানিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম বলেন, অনেক বিত্তশালী আছে। কিন্তু এরকম উদ্যোগ কেউ নেয়নি। শৈশবে কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার বানিয়ে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানাতাম। স্কুল-কলেজে কোনো শহীদ মিনার ছিল না। এখনো হাজার হাজার স্কুলে শহীদ মিনার নেই।
কবি নুরুল হুদা বলেন, জ্ঞান আসে মানুষের চেতনা থেকে। তারপর ভাষা থেকে। সেই ভাষা মায়ের কাছ থেকে আসে। সুতরাং মাতৃভাষাকে রক্ষা করতে না পারলে মানুষ তার মানবতাকে রক্ষা করতে পারে না। শুধু প্রতীকী শহীদ মিনার থাকলে হবে না। ভাষার প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। ভাষার প্রতি ভালোবাসা আছে বলেই আব্দুস সালাম স্কুল-কলেজে শহীদ মিনার নির্মাণ করে যাচ্ছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়