দুদক চেয়ারম্যান : দুর্নীতি নির্মূলে প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে দুদক

আগের সংবাদ

সড়কে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে : আইন ও বিধিমালার পরও সড়ক আইনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন নেই

পরের সংবাদ

রমজানের আগেই সক্রিয় ছিনতাই ও অজ্ঞান পার্টি : রাতে ও ভোরে ছিনতাই হচ্ছে বেশি > জেল থেকে বেরিয়ে একই অপরাধে জড়াচ্ছে তারা

প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আজিজুর রহমান জিদনী : চলতি মার্চ মাসের শেষের দিকে শুরু হতে যাচ্ছে পবিত্র রমজান। এরই মধ্যে রাজধানীতে বেড়েছে ছিনতাইকারী ও অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য। এ ধরনের অপরাধীরা সাধারণত মৌসুমকেন্দ্রিক সক্রিয় হয়। কিন্তু এবার রমজানের আগেই তাদের তৎপরতা শুরু হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে বেড়েছে উদ্বেগ।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, ছিনতাই ও অজ্ঞান পার্টির শিকার হওয়া ভুক্তভোগীর সংখ্যা অনেক বেশি হলেও পরিসংখ্যানে তা উঠে আসে না। কারণ আইনগত প্রক্রিয়ায় ঝামেলার কারণে অধিকাংশ ভুক্তভোগীই থানায় অভিযোগ করেন না। এছাড়া ছিনতাইকারী ও অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা নিত্যনতুন কৌশল নিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেখানে সক্রিয় হচ্ছেন সে জায়গা পরিহার করে অন্য জায়গা, এমনকি মধ্যরাত ও ভোরকে ছিনতাইয়ের জন্য বেছে নিচ্ছে তারা। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, ছিনতাই ও অজ্ঞান পার্টির বিরুদ্ধে তাদের অভিযান চলমান রয়েছে। প্রায়ই ধরা পড়ছে এসব চক্রের সদস্যরা। গত ৬ মাসে ২৬৮ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।
গত ১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে পৃথক ঘটনায় বাসের ভেতর নারীসহ ৩ জন অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন। তারা হলেন- নাজমা আক্তার (৩৬), আরিফুল ইসলাম (২৫) ও রেজাউল করিম (৩২)। বঙ্গবাজার ও পল্টন এলাকা থেকে তাদের উদ্ধারের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে বাসের ভেতর ইকবাল (৫৫) নামে এক ব্যবসায়ী অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন। চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মো. বাচ্চু মিয়া জানান, স্টমাক ওয়াশ করানোর পর তাকে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করানো হয়। তার সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা খোয়া গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। গত ১ মার্চ রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে শহিদুল ইসলাম (৬০) নামে এক শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে অচেতন করে তার রিকশা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী ইনচার্জ এএসআই মো. মাসুদ মিয়া জানান, ঘটনার দিন ভোরে হাফিজুর রহমানসহ দুজন পথচারী ওই রিকশাচালককে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন। শাহবাগ থানার প্রধান ফটকের দক্ষিণ পাশে অচেতন অবস্থায় পড়েছিলেন প্রতিবন্ধী ওই ব্যক্তি। ধারণা করা হচ্ছে, অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তার ওপর কিছু প্রয়োগ করে তার রিকশাটি নিয়ে চলে গেছে।
এদিকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে বনানী থানাধীন নেভি সদরদপ্তরের উল্টো পাশে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন বেসরকারি মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রতিবেদক মাহমুদুল

হাসান। বাসায় যাওয়ার সময় কয়েকজন ধারালো অস্ত্রের মুখে তাকে জিম্মি করে মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। এ সময় বাধা দিলে তাকে আঘাত করে ও পিস্তল দেখিয়ে চলে যায় দুর্বৃত্তরা। এ প্রতিবেদক ভোরের কাগজকে জানান, এ ঘটনায় বনানী থানায় তিনি জিডি করেছেন। ওই সড়কে শুধু তিনিই নন, গত কয়েক দিনে মাছরাঙা টেলিভিশনের তার আরো ৪ সহকর্মী ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন। জানা গেছে, ওই এলাকায় রাতের বেলা দুটি চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। প্রায়ই তারা এমন ঘটনা ঘটায়। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার মেকআপ খান রোডে গত ২ মার্চ ফাহিম সিকদার (২০) নামে এক যুবককে কুপিয়ে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছে দুর্বৃত্তরা।
অন্যদিকে সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩২ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যার-৩। এ বিষয়ে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন জানান, সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী এ চক্রের সদস্যরা টার্গেটকৃত ব্যক্তির সঙ্গে ঝগড়া বাধিয়ে ছিনতাই করে থাকে। এছাড়া রিকশা অথবা সিএনজি আরোহী যাত্রীদের টার্গেট করে ছিনতাই করে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে প্রায় সবার বিরুদ্ধে মাদক ও ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। বিভিন্ন অপরাধে চক্রের সদস্যরা গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বের হয়ে ফের একই অপরাধে জড়িয়ে যায় বলেও জানান তিনি।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সাইন্স বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ উমর ফারুক গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, আগে ছিনতাই ও অজ্ঞান পার্টি মৌসুমি অপরাধ হলেও এখন সারাবছরই হতে দেখা যাচ্ছে। চলতি মাসে রোজা শুরু হলেও ঈদের সময় এখনো অনেক বাকি। তবে এর আগেই ছিনতাই ও অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য দেখা যাচ্ছে। যদিও ছিনতাই ও অজ্ঞান পার্টির শিকার হওয়া ভুক্তভোগীর সঠিক পরিসংখ্যান কখনো উঠে আসে না।
তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেখানে সক্রিয় হচ্ছেন সে জায়গা পরিহার করে অন্য জায়গা এমনকি মধ্যরাত ও ভোরকে ছিনতাইয়ের জন্য বেছে নিচ্ছে তারা। বিভিন্ন সময় অভিযানে যারা গ্রেপ্তার হচ্ছেন তারা জেল থেকে বের হয়ে ফের একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। যা একটি বড় সমস্যা। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নজরদারি বাড়াতে হবে।
র‌্যাব লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ছিনতাই ও অজ্ঞান পার্টির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান সব সময় অব্যাহত রয়েছে। বিগত ৬ মাসে ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে ৭৯টি অভিযান পরিচালনা করে ২৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়