দুদক চেয়ারম্যান : দুর্নীতি নির্মূলে প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে দুদক

আগের সংবাদ

সড়কে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে : আইন ও বিধিমালার পরও সড়ক আইনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন নেই

পরের সংবাদ

জনমত উপেক্ষা করে বালি মহাল ইজারার তোড়জোড়

প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ডলু নদীর ৪ নং বালি মহাল আবার ইজারা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। স্থানীয় জনমত উপেক্ষা করে প্রশাসনের হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে হতবাক ও ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা। তারা অবিলম্বে জনবিরোধী এ সিদ্ধান্তের পরিবর্তন ও বিতর্কিত বালি মহাল ইজারা প্রক্রিয়া দ্রুত বন্ধ চান। এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে একাধিক লিখিত আবেদন করা হয়েছে জেলা প্রশাসকের কাছে। জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদ করিম বলেন, আমরা অনেক বালু মহালের ইজারা বন্ধ রেখেছি। জেলা প্রশাসন কোন বালি মহাল ইজারা দেবে কোন মহাল ইজারা দেবে না তা ঠিক করে না। উপজেলা প্রশাসনের সুপারিশের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন ইজারা প্রক্রিয়া শুরু এবং সম্পন্ন করে। তবু বিষয়টি নিয়ে যেহেতু আপত্তি ওঠেছে তা আমাদের বিবেচনায় থাকবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিগত বছরগুলোতে ডলু নদীর ৩ ও ৪নং বালি মহাল ইজারার কারণে নদীর দুই তীরে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে অনেকের বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। অসংখ্য পরিবার একমাত্র সহায় সম্বল হারিয়ে পথে বসেছে। তাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন গত বছর ডলু নদীর ৩ ও ৪নং মহালের ইজারা বাতিল করে। ওইসময় ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. প্রফেসর আবু রেজা মুহাম্মদ নিজামউদ্দীন নদভীর প্রচেষ্টায় জেলা প্রশাসন বালি মহাল দুটির ইজারা স্থগিত করে। কিন্তু হঠাৎ জেলা প্রশাসন ডলু নদীর ৪নং বালি মহাল ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অন্যান্য বালি মহালের সঙ্গে। তবে ৩নং বালি মহালের ইজারা বিজ্ঞপ্তি এবার প্রকাশ করা হয়নি। তাদের অভিযোগ, ৪নং বালি মহাল ইজারা নেয়ার জন্য স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র তৎপর। তারা দীর্ঘদিন থেকে অবৈধ ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে বালি উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকার বালু বিক্রি করেছে। ভয়ে স্থানীয়রা তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পান না। তাদের বিরুদ্ধাচারণ করলেই বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। ফলে নদীর দুপাড়ে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের বাড়িঘর বিলীন হয়েছে। অথচ এলাকাবাসীর বাড়িঘর রক্ষায় শিল্পগ্রুপ কেএসআরএমের কর্ণধার মোহাম্মদ শাহজাহান পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা এলাকায় নিজস্ব অর্থায়নে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছেন। বর্তমানে এটিও ঝুঁকির মুখে। এবার ডলু মহাল ৪ ইজারা দেয়া হলে ভাঙনে এটিও বিলীন হতে পারে। এমন আশঙ্কা স্থানীয়দের। তারা মনে করেন, উপজেলা প্রশাসন সরজমিন তদন্ত না করেই প্রভাবশালীদের চাপ কিংবা অর্থের কাছে নতি স্বীকার করেছেন। না হয় গণবিরোধী এমন সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই নিতে পারে না উপজেলা প্রশাসন।
নলুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ মিয়া ইজারা প্রক্রিয়া বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। তিনি বলেন, স্থানীয় জনমত উপেক্ষা করে যদি কেউ হঠকারী সিদ্ধান্ত নেন তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে। আমি প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে নালিশ করব। বন্ধ বালি মহাল আবার ইজারা দেয়ার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ছাড় দেয়া হবে না।
নলুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লেয়াকত আলীও ডলু নদীর ৪নং বালি মহাল ইজারা বন্ধের জন্য লিখিত আবেদন করেছেন জেলা প্রশাসকের কাছে। ওই আবেদনে সুপারিশ করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নিজামউদ্দীন নদভী। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন বর্তমান সরকার ডলু ভাঙন রোধে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছে। এছাড়া বালি মহালের ইজারা নিয়ে পুরো এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিস্তার হবে।
তিনি বলেন, ডলুর বালি উত্তোলন ও বিক্রি নিয়ে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবণতি হবে। প্রাণহানির আশঙ্কাও রয়েছে। অতীতে এমন ঘটনার নজীর রয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে এলাকার হাজারো মানুষ ভাঙনে তাদের বাপ দাদার ভিটিমাটি হারাবে। বিলীন হবে শত শত একর কৃষি জমি। তাই তিনি অনতিবিলম্বে জনস্বার্থে ডলুর ৪নং বালি মহালের ইজার প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানান প্রশাসনের কাছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়