মানবতাবিরোধী অপরাধ : দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে চারজনের আপিল

আগের সংবাদ

ঝিকরগাছা : বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুল পরিদর্শন করলেন উপসচিব

পরের সংবাদ

শি-পুতিন বৈঠক > রাশিয়া চীনের ‘কৌশলগত পার্টনার’ : শি

প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শাহরিয়ার বিপ্লব : রাশিয়াকে ‘কৌশলগত পার্টনার’ হিসেবে বর্ণনা করলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। গতকাল মঙ্গলবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে দ্বিতীয় দিনের বৈঠকের সময় এই মন্তব্য করেন তিনি। ইউক্রেন ইস্যুতে দুই নেতা আরো আলোচনা করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন উভয় দেশের মুখপাত্ররা। ক্রেমলিন বলেছে, দুই দেশের প্রেসিডেন্ট ইতোমধ্যেই ইউক্রেনের জন্য চীনের শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ’ মতবিনিময় এবং ইউক্রেনের জন্য চীনের শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। আগেরদিন পুতিনের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করেন শি জিনপিং- যা প্রায় ৩/৪ ঘন্টা স্থায়ী হয়। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৩টার পর ক্রেমলিনে আবার দুই নেতার আলোচনা হয়।
ক্রেমলিন কী বলছে : দুই নেতার আলোচনা প্রসঙ্গে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রী পেসকভ বলেন, তারা যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন তা স্পষ্ট। তবে এই ইস্যুতে কোনো অগ্রগতি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোনো মূল্যায়ন করব না। ক্রেমলিনের মুখপাত্র প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে উল্লেখ করেছেন যে শি জিনপিংয়ের রাশিয়া সফরের সময় রাশিয়া ও চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা আলাদা বৈঠক করবেন।
চীনের শান্তি পরিকল্পনা : চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন সঙ্কটের রাজনৈতিক নিষ্পত্তির বিষয়ে তাদের অবস্থান তুলে ধরে একটি নথি প্রকাশ করে। এতে যুদ্ধবিরতির আহ্বান, সব দেশের বৈধ নিরাপত্তা স্বার্থের প্রতি শ্রদ্ধা, ইউক্রেনের মানবিক সংকটের মীমাংসা, মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে যুদ্ধবন্দিদের বিনিময় এবং অনুমোদন ছাড়াই একতরফা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাখ্যানসহ ১২টি পয়েন্ট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। নথিতে আলোচনাকে ইউক্রেনের সংকট সমাধানের একমাত্র উপায় হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। মস্কো এবং কিয়েভকে একে অন্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার এবং অবিলম্বে সরাসরি সংলাপ পুনরায় শুরু করার জন্য সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
কূটনৈতিক কভার : চীনা নেতা শি জিনপিং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে এই বছরের শেষের দিকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। যা মস্কোর প্রতি চীনের সমর্থনের আরেকটি প্রদর্শনী। পুতিন সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছেন। মার্কিন শক্তির বিরোধিতা করে একটি নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার নেতা হিসেবে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছেন বলে মনে হচ্ছে। এদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত তার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পর পুতিনকে ‘কূটনৈতিক কভার’ দেয়ার জন্য শিকে অভিযুক্ত করেছে হোয়াইট হাউস।
বন্ধুত্বের বহিপ্রকাশ : রাষ্ট্রীয় সফরে আসার পর ক্রেমলিনে আনুষ্ঠানিক আলোচনার সময় শি পুতিনকে তার ‘প্রিয় বন্ধু’ বলে অভিহিত করেন। বেইজিং এই সফরটিকে একটি শান্তি মিশন হিসেবে উল্লেখ করেছে। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে একটি আনুষ্ঠানিক আলোচনা হবে কিনা তার ইঙ্গিত এখনো মেলেনি।
যৌথ স্বাক্ষর : ক্রেমলিনের মতে শি এবং পুতিন একটি যৌথ নথি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্ক এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরো গভীর করতে সম্মত হয়েছেন বলে আশা করা হচ্ছে। মস্কো তার অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে বেইজিংয়ের উপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে, কারণ যুদ্ধ তার তেল এবং অন্যান্য পণ্য রপ্তানিকে বাধা দিয়েছে। শি এবং পুতিন একের পর এক আলোচনায় এবং রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে অংশ নেন।
পুতিনের বক্তব্য : ফক্স নিউজের সিনিয়র সংবাদদাতা মাইক টোবিন ‘বিশেষ প্রতিবেদন’-এ প্রেসিডেন্ট শি এবং প্রেসিডেন্ট পুতিনের মধ্যে বৈঠকের সর্বশেষ তথ্য দিয়েছেন। পুতিন বলেছেন, রাশিয়া যুদ্ধ শেষ করতে চীনের পরিকল্পনাকে সম্মান করে। চীন তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান আক্রমণের সমাধানে একটি ‘গঠনমূলক ভূমিকা’ পালন করতে চায়। দুই পক্ষের মধ্যে ইউক্রেন ইস্যুতে গভীরভাবে মতবিনিময় হয়েছে। প্রেসিডেন্ট শি জোর দিয়েছিলেন যে, ইউক্রেন ইস্যুতে শান্তির জন্য বিশ্বকণ্ঠ জোরদার হয়েছে। বেশিরভাগ দেশই উত্তেজনা কমাতে সমর্থন করেছে, শান্তির পক্ষে দাঁড়িয়েছে এবং আগুনে জ¦ালানি না দিতে বলেছে। ইতিহাসের পর্যালোচনা দেখায় যে কোনো দ্ব›দ্ব শেষ পর্যন্ত সংলাপ এবং আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে। চীনা পররাষ্ট্রবিষয়ক কার্যালয় বলেছে যে প্রেসিডেন্ট পুতিন চীনের অবস্থানের প্রশংসা করেছেন। নিরপেক্ষ ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান ধরে রাখার জন্য এবং প্রধান আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচারের পক্ষে অবস্থান করার জন্য চীনকে ধন্যবাদ জানান। রাশিয়া এই বিষয়ে গঠনমূলক ভূমিকা পালনের জন্য চীনকে স্বাগত জানিয়েছে।
ইউক্রেন চীনকে উপেক্ষা করতে পারবে কি : ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ আকর্ষণের আশায় রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জন্য ইউক্রেন চীনের সমালোচনা করা থেকে বিরত রয়েছে এমনটি দাবি করেছে পলিটিকো। গতকাল মঙ্গলবারের একটি নিবন্ধে, পলিটিকো জানিয়েছে যে চীনা বিনিয়োগের আকাক্সক্ষার পাশাপাশি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এশিয়ান অর্থনৈতিক শক্তির সঙ্গে লাভজনক বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইছেন। রাশিয়ার সঙ্গে বিরোধে বেইজিংকে একটি সম্ভাব্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দেখছেন। ইউক্রেন পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র নীতি কমিটির প্রধান আলেক্সান্ডার মেরেজকোকে উদ্ধৃত করে নিবন্ধে বলা হয়েছে, আমরা যদি চীনকে আরো কঠোরভাবে সমালোচনা করা শুরু করি তাহলে বেইজিং এটিকে রাশিয়ার প্রতি তার সহায়তা জোরদার করার অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করবে। পলিটিকো উল্লেখ করেছে যে জেলেনস্কি বেইজিংয়ের ১২-দফা পরিকল্পনার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন যে তার দেশ চীনের সঙ্গে এই বিষয়ে কাজ করতে পারে। মেরেঝকো যুক্তি দেন, বেইজিংয়ের প্রতি জেলেনস্কির বর্তমান কৌশলটি বিচক্ষণ। যদিও তিনি চীনের কাছ থেকে প্রকৃত সাহায্যের সামান্যই আশা রাখেন। অবশ্য ইউক্রেনের পশ্চিমা সমর্থকরা প্রস্তাবটিকে খারিজ করে দিয়েছে। বর্তমানে কিয়েভ এবং বেইজিংয়ের মধ্যে সম্পর্ক সংকট পর্যায়ে পৌঁছেছে বলেও তিনি পলিটিকোকে বলেছেন। মেরেঝকো রাশিয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চীনের ধারাবাহিক প্রত্যাখ্যান এবং সেইসঙ্গে ইউক্রেন স্পষ্টভাবে ইউরো-আটলান্টিক একীকরণের পথ বেছে নিয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। এটি কার্যকরভাবে কিয়েভকে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে। মেরেঝকো এমন যুক্তি দিয়েছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়