মানবতাবিরোধী অপরাধ : দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে চারজনের আপিল

আগের সংবাদ

ঝিকরগাছা : বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুল পরিদর্শন করলেন উপসচিব

পরের সংবাদ

লোহাগাড়ায় সরকারি ১২শ গাছ কাটলেন ইউপি সদস্য

প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় প্রায় দুই একর সরকারি খাস জায়গার গাছ কেটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ইউপি সদস্যের নাম আবুল কালাম। তিনি উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য। স্থানীয় একটি সূত্র মতে, ওই ইউপি সদস্য একমাস আগে এসব গাছ কেটে উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করে দিয়েছেন। এছাড়াও, তার বিরুদ্ধে আজিজ নগর ও চুনতি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অধীনে বেশ কটি বনজ গাছ বাগান কাটারও অভিযোগ রয়েছে। চুনতি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অধীনে সাতগড় মসকানিয়া এলাকার মৃত নূরুল আলাম মেম্বারের পাহাড়ের গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলেছে। ফারাঙ্গা, নোয়ারবিল এলাকায়ও দুটি বনাঞ্চলের গাছ কেটে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি চুনতি রক্ষিত বন দখল করে বাড়ি নির্মান করে বর্তমানে বসবাস করছেন।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড মসকানিয়া রবি টাওয়ার এলাকার একটি দুই একর সরকারি টিলার অধিকাংশ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ওই টিলায় ১ হাজার ৫০০টি আকাশমনি গাছ ছিল। এরমধ্যে প্রায় ১২০০টি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। কেটে ফেলা গাছের মূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
যে টিলাটির গাছ কাটা হয়েছে, সেটি চুনতি সংরক্ষিত বনাঞ্চল এলাকায়। তবে বনবিভাগের দাবি, জায়গাটি তাদের নয়, এটি সরকারি খাস জায়গা। এলাকাটি বন্যহাতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর বিচরণক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত। গাছ কাটার পরে টিলাটিতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। এতে টিলাটির অন্যান্য ছোট উদ্ভিদ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন বলেন, বনাঞ্চলে কোনোভাবেই আগুন দেয়া যাবে না। কারণ, আগুনে চারাগাছ ও গাছের বীজ পুড়ে যায় এবং মাটির শক্তি কমে যায়। এতে উদ্ভিদের বংশ বিস্তার করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া বনাঞ্চল আগুনে পুড়ে গেলে প্রাণীদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে। অনেক কীটপতঙ্গ ও পাখির আবাস্থল ধ্বংস হয়। অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের খাবার ধ্বংস হয়। ফলে তারা অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। চুনতি রেঞ্জের সাতগড় বনবিট কর্মকর্তা শাহ আলম হাওলাদার বলেন, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ কাটা হচ্ছে, এমন খবর পেয়ে এক মাস আগে আমরা ওই এলাকায় যায়। ইউপি সদস্য আবুল কালামের নেতৃত্বে গাছগুলো কাটা হচ্ছিল। তিনি আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন এবং মৌখিকভাবে আর গাছ না কাটার অঙ্গীকার করেছেন। পরে আমরা কাগজপত্র দেখে নিশ্চিত হই, জায়গাটি বনবিভাগের নয়। এটি সরকারি খাস জায়গা। তাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমরা উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি। গাছ কাটার অভিযোগ স্বীকার করলেও ওই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। কেটে ফেলা গাছও জব্দ হয়নি। বনবিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, ইউপি সদস্য আবুল কালামের বিরুদ্ধে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ কাটার অপরাধে একটি মামলা হয়েছিল। বন আইনে ওই মামলাটি হয়েছিল ২০১৬ সালে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, যখন আমরা খবর পাই, তখন কয়েকটি গাছ কাটা হয়েছিল। ওই ইউপি সদস্যকে গাছ কাটতে নিষেধ করা হয়েছিল। এরপরে আর গাছ কাটা হয়েছে কিনা জানি না। জায়গাটির ব্যাপারে কাগজপত্র যাচাই করে দেখতে হবে। তারপর প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আবুল কালাম প্রথমদিকে গাছ কাটার অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, গাছ কাটার সময় এসিল্যান্ড ও বনবিভাগের কর্মকর্তারা বাধা দেয়ার পর গাছ কাটা বন্ধ করে দিয়েছি। বন আইনে ২০১৬ সালের মামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে মামলাটি দেয়া হয়েছিল।
এ ব্যাপারে লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ উল্যাহ বলেন, খাস জায়গা থেকে গাছ কাটার বিষয়টি জানতাম না। এখন জানলাম। বিষয়টি আমি দেখছি। তারপর ব্যবস্থা নেব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়