মানবতাবিরোধী অপরাধ : দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে চারজনের আপিল

আগের সংবাদ

ঝিকরগাছা : বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুল পরিদর্শন করলেন উপসচিব

পরের সংবাদ

বিএসএমএমইউ ও আইসিডিডিআর,বির গবেষণা : নারীর করোনাপরবর্তী জটিলতা পুরুষের তুলনায় ৪ গুণ বেশি

প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীরা পরবর্তীতে ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট এবং হৃদযন্ত্রে জটিলতার মতো জটিল স্বাস্থ্য জটিলতার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। উচ্চ রক্তচাপ, দ্রুত হৃদকম্পন ও পা ফুলে যাওয়ার মতো কোভিড পরবর্তী জটিল সমস্যায় পুরুষদের চেয়ে নারীদের মধ্যে দেড় থেকে ৪ গুণ বেশি। করোনা থেকে সেরে ওঠা ৪০ বছরের কম বয়সিদের তুলনায় ৬০ বছরের বেশি বয়সিদের মধ্যে হৃদযন্ত্রের জটিলতা ও ¯œায়ুবিক জটিলতার ঝুঁকি দ্বিগুণ বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
‘লং টার্ম সিকুয়েল অব কোভিড-১৯ : অ্যা লংগিটুডিনাল ফলো-আপ স্টাডি ইন ঢাকা, বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে এই গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করা হয়। কোভিড-১৯ পরবর্তী জটিলতা নিয়ে করা এই গবেষণাটি যৌথভাবে করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)। ইউএসএআইডি-র এলায়োন্স ফর কমব্যাটিং টিউবারকিউলোসিস ইন বাংলাদেশ (এসিটিবি) এর অর্থায়নে পরিচালিত এই গবেষণার ফলাফল গতকাল মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি ব্লকের অডিটোরিয়ামে প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইসিডিডিআরবি এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. তাহামিদ আহমেদ। বক্তব্য রাখেন বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগ) অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম, ইউএসএআইডি এর কর্মকর্তা সামিনা চৌধুরী। বিএসএমএমইউ এর ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত, কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. চৌধুরী মেশকাত আহমেদ এবং আইসিডিডিআররি এর নিউট্রিশন ও ক্লিনিক্যাল সার্ভিস বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী এবং প্রধান গবেষক ডা. ফারজানা আফরোজ গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ঢাকার দুটি হাসপাতালে ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৩০ অক্টোবরের মধ্যে চিকিৎসা নেয়া ৩৬২ জন রোগীর ওপর এই গবেষণা হয়েছে। ১৮ বছরের বেশি বয়সি এসব রোগীদের রোগ শনাক্ত হয়েছিল আরটি-পিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে। এসব রোগীদের সেরে ওঠার এক মাস, তিন মাস ও পাঁচ মাস পর তাদের ফলোআপ করা হয়। গবেষণায় মূলত ¯œায়বিক, শ্বাসযন্ত্র, হৃদযন্ত্র ও মানসিক সমস্যা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল।
অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, কোভিড সারা শরীরেই ক্ষতি করে। নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি কোভিডের কারণে স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে। চোখের নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। অনেকে কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর ঘুমাতে পারেন না। এ নিয়ে আরো গবেষণা হওয়া দরকার। অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর আহ্বান জানান।
ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, কোভিড-১৯ এর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব এবং তার ধরন নির্ণয়ে এই গবেষণার ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু কোভিড আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন তারা যদি নিয়মিত ফলোআপ না করেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা না নেন তবে এই গবেষণার সার্থকতা ¤্রয়িমান হয়ে যাবে।
গবেষণায় দেখা যায়, ৪০ বছরের কম বয়সিদের তুলনায় ৬০ বছরের বেশি বয়সি কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের হৃদযন্ত্রের জটিলতা (উচ্চ রক্তচাপ, দ্রুত হৃদকম্পন, বা পা ফুলে যাওয়া) এবং ¯œায়ুবিক (হাত ও পায়ে অসাড়তা, ঝিম ঝিম করা বা ব্যথা, স্বাদ ও গন্ধের অস্বাভাবিকতা) জটিলতা হওয়ার আশঙ্কা দ্বিগুণ। এই রোগের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলোও নারী-পুরুষ ভেদে আলাদা। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে কোভিড পরবর্তী জটিলতার প্রকোপ দেড় থেকে ৪ গুণ পর্যন্ত বেশি দেখা গেছে। হাসপাতালে ভর্তিকৃত এবং নীবিড় পরিচর্যার (আইসিইউ) প্রয়োজন হয়েছিল এমন রোগীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার আশঙ্কা হাসপাতালে ভর্তি না হওয়া রোগীদের তুলনায় ২ থেকে ৩ গুণ পর্যন্ত বেশি পাওয়া গেছে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত গুরুতর কোভিড থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের নিয়মিত ডায়াবেটিসের ওষুধ সেবন করা সত্ত্বেও রক্তে অনিয়ন্ত্রিত শর্করার আশঙ্কা যাদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়নি তাদের তুলনায় ৯ থেকে ১১ গুণ বেশি ছিল এবং তাই যারা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তাদের বেশি ইনসুলিন প্রয়োজন হয়। একটি শঙ্কার বিষয় হলো হাসপাতালে ভর্তি না হওয়া রোগীদের তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার হার প্রতি ১ হাজার জনে ১০ জন। একইভাবে, কোভিড থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের মধ্যে নতুন করে কিডনি এবং লিভারজনিত জটিলতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল।
গবেষণার আশার দিক হলো, সময়ে সঙ্গে সঙ্গে গবেষনাধীন দুটি গ্রুপের জটিলতাগুলোর বেশিরভাগ কমে গেছে। তবে শ্বাসকষ্ট, দ্রুত হৃদকম্পন, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার, উদ্বেগ, বিষন্নতা ইত্যাদির মতো কিছু সমস্যা ৫ মাস পরও করোনা আক্রান্ত রোগীদের উল্লেখযোগ্যভাবে কমেনি। গবেষণার এই ফলাফল করোনা থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের ফলোআপ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা নেয়ার প্রয়োজনীয়তার নির্দেশ করে। উচ্চ ঝুঁকির কারণে বয়স্ক এবং হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের হৃদরোগ সংক্রান্ত জটিলতার জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা উচিত বলে সেখানে মত দেয়া হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়