মানবতাবিরোধী অপরাধ : দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে চারজনের আপিল

আগের সংবাদ

ঝিকরগাছা : বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুল পরিদর্শন করলেন উপসচিব

পরের সংবাদ

জ্বালানি খাতে ভারতের সহায়তা

প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৮ মার্চ উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে বাংলাদেশের দিনাজপুর প্রদেশের পার্বতীপুর পর্যন্ত ১৩১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন (আইবিএফপিএল) উদ্বোধন করেছেন। ৩৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই পাইপলাইনটি আসামের নুমালিগড় রিফাইনারি থেকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের পার্বতীপুর ডিপোতে ১০ লাখ টন হাইস্পিড ডিজেল বহন করবে।
শিলিগুড়ির নুমালিগড় রিফাইনারির মার্কেটিং টার্মিনাল থেকে শুরু হয়ে বাংলাবান্ধা সীমান্ত চৌকি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশকারী পাইপলাইনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। পাইপলাইনটি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জ¦ালানি চাহিদা পূরণে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের তীব্র জ্বালানি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি পূর্বপ্রতিবেশীকে ভারতের সহায়তার লক্ষ্য সব প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা। এটি দ্বিপক্ষীয় জ্বালানি সহযোগিতার একটি নতুন যুগের সূচনা করবে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের মাধ্যমে উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে তার অব্যবহৃত সুযোগগুলোও অর্জন করতে পারে। সুতরাং বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ই পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে তাদের জ¦ালানি নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে এগিয়ে এসেছে।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার সংঘাত এবং এর ফলে তেল ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে জ¦ালানি ঘাটতির দেশ বাংলাদেশে জ¦ালানি সংকট তীব্রতর হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ গ্যাস কেনা বন্ধ করতে বাধ্য হয় এবং কয়েকটি ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে তার জ¦ালানি নিরাপত্তা ও দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে প্রচলিত জ¦ালানি উৎস থেকে সরে আসতে হবে। ইউক্রেন সংকটের পরে, শক্তি নিরাপত্তা উন্নয়নশীল এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য একটি বড় উদ্বেগ হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে আন্তঃসীমান্ত জ¦ালানি সহযোগিতা সম্ভবত বাংলাদেশকে তার জ¦ালানি সংকট প্রশমনে সহায়তা করতে পারে।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় বাংলাদেশ নেপাল ও ভুটান থেকে ভারত হয়ে বিদ্যুৎ আমদানির অনুমতি দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল। ভারতের বিদ্যমান সঞ্চালন অবকাঠামোর মাধ্যমে বাংলাদেশে ৪০-৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানির জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমোদন চেয়েছে নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ (এনইএ)। ২০২২ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ও নেপাল হাইভোল্টেজ বহরমপুর-ভেড়ামারা আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুৎ সঞ্চালন সংযোগ ব্যবহার করে প্রাথমিক পর্যায়ে নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০-৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানির অনুমতি দেয়ার জন্য ভারতকে অনুরোধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। নেপাল-বাংলাদেশ জ¦ালানি সহযোগিতার জন্য গঠিত সচিব পর্যায়ের জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটির (জেএসসি) সমঝোতা অনুযায়ী, এনইএ এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিদ্যুৎ লাইন ব্যবহার করে একটি ত্রিপক্ষীয় জ্বালানি বিক্রয় ও ক্রয় চুক্তির জন্য ভারতকে অনুরোধ করেছিল।
বাংলাদেশের জ¦ালানি চাহিদা মেটাতে কিছুটা এগিয়ে যাওয়া এই প্রকল্প ছাড়াও বাংলাদেশের খুলনা প্রদেশের রামপালে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রোডাকশনের প্রথম ইউনিটটি ইতোমধ্যে দেশের জাতীয় গ্রিডে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী প্রকল্পটি ভারত কর্তৃক বাংলাদেশকে প্রদত্ত একটি ছাড়ের অর্থায়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হচ্ছে। ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার করপোরেশন ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) গঠন করা হয়।
নির্মাণকাজ শেষ হলে এটি হবে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়াদিল্লি সফরকালে যৌথভাবে এই প্ল্যান্টের প্রথম ইউনিট উন্মোচন করেন।
ঝাড়খন্ডের গোড্ডায় আদানি গ্রুপের ১৬০০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেও বিদ্যুৎ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী গত মাসে বলেছিলেন, গ্রীষ্মের সর্বোচ্চ চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ এই কেন্দ্র থেকে কমপক্ষে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির অপেক্ষায় রয়েছে।
এই প্ল্যান্টের প্রথম ইউনিটটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশের পাওয়ার গ্রিডের সঙ্গে সিনক্রোনাইজ করা হয়েছে এবং কিছু আনুষ্ঠানিকতা এবং উভয় পক্ষের মধ্যে শেষ মুহূর্তের আলোচনার পর, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ভারত ইতোমধ্যে আমাদের ক্রমবর্ধমান জ¦ালানি চাহিদা মেটাতে আমাদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করছে এবং আমরা আশা করি, আগামী মাস এবং বছরগুলোতে এই ভূমিকাটি দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশের জ¦ালানি চাহিদা মেটাতে ভারতের সহায়তার লক্ষ্য হচ্ছে চীনের ওপর দেশটির নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা, যার বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ৮.৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎসে বাংলাদেশের রূপান্তরে সহায়তাকরার প্রস্তাব দিয়েছে বেইজিং। এবার বাংলাদেশের সঙ্গে বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছে নয়াদিল্লি। জলবায়ুবিষয়ক মার্কিন প্রেসিডেন্টের দূত জন কেরি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ গ্রিড শক্তিশালীকরণ এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে রূপান্তরে সহায়তার প্রস্তাব দেন।
ভুটান ও নেপাল থেকে পরিচ্ছন্ন ও সস্তায় জ¦ালানি পেতে বাংলাদেশকে সহায়তা করার ক্ষেত্রেও ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। নয়াদিল্লি বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল) কাঠামোর মধ্যে বিদ্যুৎ বাণিজ্য সম্প্রসারণের প্রস্তাব দিয়েছে এবং নয়াদিল্লির সহায়তায় বর্তমানে এ বিষয়ে বহুপক্ষীয় আলোচনা চলছে। সিকিম এবং অরুণাচল প্রদেশে আসন্ন জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো চালু হলে সেগুলো থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ রপ্তানি করার প্রতিশ্রæতিও দিয়েছে ভারত। তিনি বলেন, পরিচ্ছন্ন জ¦ালানিতে রূপান্তরের জন্য আমরা ভারতের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ আমদানি করতে আগ্রহী। এই রূপান্তরে ভারতের সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বলেন বাংলাদেশের বিদ্যুৎমন্ত্রী। সুতরাং ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন বাংলাদেশকে তার জ্বালানি সংকট কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করার প্রচেষ্টায় একটি বড় মাইলফলক। এটি প্রতিবেশীদের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার জন্য নয়াদিল্লির প্রচেষ্টারও অংশ।

সুফিয়ান সিদ্দিকী : লেখক, ঢাকা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়