মো. মাজেম আলী মলিন, গুরুদাসপুর (নাটোর) থেকে : মামলা জটে যখন হিমসিম খাচ্ছে বিচারালয়, কোর্ট-কাচারিগুলোতে নানা দুর্ভোগ ও অনিয়মের কারণে মামলার ফেরে পড়া বিচারপ্রার্থীদের যখন রুদ্ধশ্বাস অবস্থা, ঠিক তখন জোরদার হচ্ছে গ্রাম আদালত। এক সময়ে বিনা বিচারে গ্রাম্য মোড়লদের দাপটে হতাশাগস্ত ছিল গ্রামের মানুষ। সময়ের আবর্তে আজ সেখানেই ফিরে আসছে শান্তি আর ন্যায় বিচারের ব্যবস্থা। যার কারনে গ্রামের সাধারণ মানুষ খুঁজে পেয়েছে শান্তির নিবাস নামক এক গ্রাম আদালত। যেখানে মাত্র ১শ থেকে ২শ টাকা ফি দিয়েই পেয়ে যাচ্ছেন সমাধান। বেঁচে যাচ্ছে টাকা, লাঘব হচ্ছে কষ্ট।
গ্রাম আদালতে সুষ্ঠু বিচার পেয়ে এভাবেই অনুভুতিগুলো শেয়ার করলেন নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের ৭০ বছরের বৃদ্ধ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোখলেছুর রমান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদে শান্তি নিবাস নামের একটি গ্রাম আদালত স্থাপন করা হয়েছে। সেখানেই সপ্তাহে ২দিন বসছে গ্রাম আদালত। উপস্থিত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, মেম্বার এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বাদী-বিবাদী প্রমাণ ও সাক্ষী-সাবুদসহ হাজির হয়েছেন ওই বিচারলায়ে। বিচারকরা উভয় পক্ষের কথা শুনছেন গভীর মনোযোগ সহকারে। শুনে শান্তিপুর্ণ পরিবেশে ঘোষিত হচ্ছে রায়। সর্বসম্মতিক্রমে ঘোষিত এ রায় উভয়পক্ষ মেনেও নিচ্ছেন নির্দ্বিধায়। গ্রামে বসবাসকারী তৃণমুলের মানুষের আইনগত অধিকার লাভের জায়গা হিসেবে ক্রমেই আস্থা লাভ করছে এই গ্রাম আদালত।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই ইউনিয়নের ১০ গ্রামের ২৮ হাজার ৭৭৫ জন লোক বসবাস করে। সপ্তাহে বুধ ও শুক্রবার বসে শালিসি বৈঠক। ওই বৈঠককে ৫ থেকে ৭টি বিচারকার্য সম্পন্ন হয়। এভাবে প্রতিমাসে ২০ থেকে ২৫টি গ্রাম্য মামলার বিচার কাজ পরিচালিত হয়। যোগেন্দ্রনগর গ্রামের মোঃ মজনু প্রামানিক বলেন, আমাদের এলাকায় কোনো ছোটখাটো মারামারি, জমিজমা নিয়ে কোন্দল, পারিবারিক কোন্দল, প্রতিবেশিদের সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ হলেই আমরা থানায় না গিয়ে প্রথমেই চেয়ারম্যানের শান্তি নিবাসে চলে আসি।
বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, আমি ১৫ বছর ধরে মানুষের সেবায় নিয়োজিত আছি। কিন্তু ইতিপুর্বে গ্রাম্য শালিশ কম হতো। এক বছরে দুই শতাধিক বিচার কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমান সুজা বলেন, গ্রাম আদালতের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্বেও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে বিচার কাজ সম্পন্ন করতে হয়। অনেক সময় কেউ কেউ সাময়িক মন খারাপ করলেও পরবর্তীতে বুঝতে পেরে ভালো বলে।
গুরুদাসপুর রোজী মোজাম্মেল মহিলা অনার্স কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এ এইচ এম একরামুল হক খোকন বলেন, গ্রাম আদালতের সীমাবদ্ধতা রয়েছে অনেক। তার পরেও এর কার্যকারিতা অনেক গুরুত্বপুর্ণ। কারণ ছোটখাটো বিষয় থেকেই জন্ম হয় বড় দুর্ঘটনার। তাই সমস্যাগুলো যদি অংকুরেই শেষ করে দেওয়া যায় তাহলে বড় ঘটনা ঘটে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।