ছিনতাইকারী থেকে দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খান

আগের সংবাদ

বিশুদ্ধ পানি ছাড়াই স্বাস্থ্যসেবা! : উপকূলীয় হাসপাতালগুলোতে বিশুদ্ধ পানির সংকট, দেশের ২১ শতাংশ হাসপাতালে নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা

পরের সংবাদ

সড়কে আর কত প্রাণ যাবে!

প্রকাশিত: মার্চ ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সড়কে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। এমন কোনো দিন নেই, সংবাদমাধ্যমে কোনো সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের খবর থাকে না। সড়কে এ রকম প্রাণহানি মর্মান্তিক, অনাকাক্সিক্ষত। গত রবিবার মাদারীপুরের শিবচরে সড়ক থেকে ইমাদ পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আট ফুট নিচে পড়ে যায়। এতে চালকসহ ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত আরো ২৫ জন। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে পদ্মা সেতু থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে, নিরাপত্তাবেষ্টনীহীন এলাকায়। এক্সপ্রেসওয়ের নিচের আন্ডারপাসের গাইড ওয়ালের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুমড়ে-মুচড়ে যায় বাসটি। জানা যায়, দীর্ঘ সময় বাস চালিয়ে ক্লান্ত ছিলেন ড্রাইভার। বাসটির ফিটনেস সনদের মেয়াদ ছিল না এবং চলাচলের অনুমতিও ছিল না। গত নভেম্বর মাসেও গোপালগঞ্জে দুর্ঘটনা ঘটে বাসটিতে। এসবের পরও বাসটি কীভাবে চলাচল করছিল সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারিও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। ক্লান্ত অবস্থায় চালকের ঘুমিয়ে পড়া, বাসের চাকা ফেটে যাওয়া, দুর্বল ব্রেক বা অত্যধিক গতির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছে পুলিশ। ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে নিরাপত্তাবেষ্টনী থাকলেও পদ্মা সেতু প্রকল্পের অধীন সড়কটির সাড়ে ১১ কিলোমিটার অংশে কোনো নিরাপত্তাবেষ্টনী নেই। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সেতু থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে নিরাপত্তাবেষ্টনীহীন এলাকায়। দুর্ঘটনার কারণ যাই হোক, সড়কে নিরাপত্তাবেষ্টনী না থাকায় হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বাঁধের মতো সড়কটি মাটি থেকে প্রায় আট ফুট উঁচুতে। নিয়ম অনুযায়ী, এমন সড়কে নিরাপত্তাবেষ্টনী থাকা বাধ্যতামূলক। নিরাপত্তাবেষ্টনী থাকলে ক্ষতি কম হতো, এত মানুষের মৃত্যু হতো না। দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা চাই দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের ২০২২ সালের সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মোট ৭ হাজার ২৪টি দুর্ঘটনার মধ্যে শুধু মহাসড়কে ২ হাজার ৩১৩টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর সড়কের বাইরে বা খাদে পড়ে এবং উল্টে ৮৪৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। বুয়েটের এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনার ৮৪ শতাংশ ঘটে অতিরিক্ত গতির কারণে। সড়কে এমন নৈরাজ্যের শেষ কোথায়? নিরাপদ সড়কের দাবিতে ২০১৮ সালের আগস্টে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ পাস করা হয়। কিন্তু গত সাড়ে ৪ বছরেও সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর বিধিমালা প্রণীত হয়নি। আইনের কিছু কিছু ধারা আংশিক বাস্তবায়ন করা হলেও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়ায় সড়কের সার্বিক অবস্থার এখনো কোনো পরিবর্তন হয়নি। সড়কে অব্যবস্থাপনার করুণ পরিণতির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটেই চলেছে বেপরোয়া বাস দুর্ঘটনা। জননিরাপত্তার স্বার্থে এ নৈরাজ্য চলতে দেয়া যায় না। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু একটি জাতীয় সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানের জন্য সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানো এবং দুর্ঘটনাকেন্দ্রিক অপরাধের বিচার-শাস্তি প্রদানের জন্য একটি কার্যকর ও ফলপ্রসূ আইনের প্রত্যাশা অনেক পুরনো। আমরা এর বাস্তবায়ন দেখতে চাই। সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং এজন্য সময়ের ধারাবাহিকতায় সড়ক পরিবহন আইনে যে বিষয়গুলো সংযোজিত হয়েছে, তার কঠোর বাস্তবায়ন জরুরি মনে করছি। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সমাধানের অযোগ্য কোনো বিষয় নয়। এ জন্য দরকার ইতিবাচক চিন্তা ও সমন্বিত পদক্ষেপ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়