ছিনতাইকারী থেকে দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খান

আগের সংবাদ

বিশুদ্ধ পানি ছাড়াই স্বাস্থ্যসেবা! : উপকূলীয় হাসপাতালগুলোতে বিশুদ্ধ পানির সংকট, দেশের ২১ শতাংশ হাসপাতালে নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা

পরের সংবাদ

সোনাদিয়া দ্বীপে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের প্রতিযোগিতা : পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে

প্রকাশিত: মার্চ ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, কক্সবাজার (দক্ষিণ) থেকে : সেন্টমার্টিনের পর এবার সোনাদিয়া দ্বীপে অবৈধ দখল ও স্থাপনা নির্মাণের প্রতিযোগিতা চলছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সোনাদিয়া দ্বীপের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার নির্দেশ আসে চলতি বছরের জানুয়ারিতে। ওই নির্দেশনা দেয়ার পর দুমাস হলেও এখনো দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। আর এই ফাঁকে গত কয়েক মাসে গড়ে উঠেছে আরো বেশ কয়েকটি অবৈধ কটেজ ও স্থাপনা।
ফলে পরিবেশের ভারসাম্য যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি জীববৈচিত্র্য পড়েছে হুমকির মুখে। অন্যদিকে, মাদক বেচাকেনাসহ মানবপাচারের নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হয়েছে এই সোনাদিয়া। স্থানীয়রা মনে করছেন, দ্রুত অবৈধ স্থাপনাগুলো অপসারণের ব্যবস্থা না নিলে, অবৈধ কটেজ ও স্থাপনায় সোনাদিয়া দখল আর দূষণের দ্বীপে পরিণত হবে। যেমনটা ঘটনা ঘটেছে সেন্টমার্টিনে। দখল, দূষণ আর ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে সেন্টমার্টিন। পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, আগামী কয়েক বছরে সেন্টমার্টিন বসবাসের অযোগ্য দ্বীপে পরিণত হবে। সোনাদিয়া দ্বীপও কী তাহলে একই

পরিণতি ভোগ করতে যাচ্ছে।
জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের উত্তর-পশ্চিমে এবং মহেশখালী উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত জীববৈচিত্র্যের অনন্য নিদর্শন এই সোনাদিয়া। এটি বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে। ৯ বর্গকিলোমিটারের এই দ্বীপে নারিকেল, ঝাউ, নিসিন্দা আর কেয়া গাছ রয়েছে।
এ ছাড়াও রয়েছে চিংড়ি, লবস্টার, শামুক, ঝিনুক, ডলফিন, লাল কাঁকড়া, কচ্ছপের বসবাস। অপরদিকে শীতকালে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে পরিযায়ী পাখি ও কচ্ছপ ডিম পাড়তে আসে এই দ্বীপে।
সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, সোনাদিয়া দ্বীপে অবৈধভাবে ইতোমধ্যে ১০-১৫টি কটেজ তৈরি করা হয়েছে। এসব কটেজ মালিকরা লোভনীয় অফার দিয়ে মানুষের সোনাদিয়া দ্বীপে রাতযাপনের জন্য আহ্বান করছেন। অনেক পর্যটক সোনাদিয়ার অপরূপ সৌন্দর্য্যে অভিভূত হয়ে অবৈধভাবে অনিরাপদ রাতযাপন করছে।
ইতোমধ্যে দ্বীপে মাদক সেবন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবাধে মেলামেশা ও রাতযাপন, দ্বীপে ঝাউগাছ কেটে আগুন জ্বালানো, উচ্চৈঃস্বরে গানবাজনা করা, লাল কাঁকড়ার বিচরণ স্থানে ফুটবল ও ভলিবল খেলা, কচ্ছপের ডিম পাড়ার স্থানে তাবু স্থাপন এবং মাদক বেচাকেনাসহ ইত্যাদি অপকর্মের নিরাপদ আস্তানা হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) এক পত্র সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ জানুয়ারি সোনাদিয়া ইকো-ট্যুরিজম পার্কের অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা অবৈধ কটেজ অপসারণসহ দ্বীপে পর্যটকদের অবৈধভাবে রাতযাপন নিষিদ্ধকরণের জন্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) উপসচিব মোহাম্মদ নাজমুল হাসান স্বাক্ষরিত ওই পত্রে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, সোনাদিয়া দ্বীপে অসাধু ব্যবসায়ীরা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে একাধিক স্থাপনা নির্মাণ করেছে।
সেখানে আগত পর্যটকরা মাদক সেবনসহ অনৈতিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে। এ ছাড়াও ১৯৯৯ সালে সোনাদিয়া দ্বীপকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হয়। এ আইনে সোনাদিয়া দ্বীপে যে কাজগুলো নিষিদ্ধ করা হয় সেগুলো হলো- প্রাকৃতিক বন কর্তন বা আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা। সব ধরনের শিকার ও বন্যপ্রাণী হত্যা থেকে বিরত থাকা। ঝিনুক, কোরাল, কচ্ছপ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী ধরা বা সংগ্রহ বেআইনি। প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থল ধ্বংসকারী সব ধরনের কার্যকলাপ বন্ধ করা।
ভূমি এবং পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট বা পরিবর্তন করতে পারে এমন কাজ না করা। মাটি, পানি, বায়ু এবং শব্দ দূষণকারী শিল্প বা প্রতিষ্ঠান স্থাপন না করা। মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর ক্ষতিকারক যে কোনো ধরনের কার্যাবলি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। নদী-জলাশয়- লেক-জলাভূমিতে বসতবাড়ি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পয়ঃপ্রণালি সৃষ্ট বর্জ্য ও তরল বর্জ্য নির্গম
ণ এবং কঠিন বর্জ্য অপসারণ।
যান্ত্রিক বা ম্যানুয়াল বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে পাথরসহ অন্য যে কোনো খনিজসম্পদ আহরণ না করা। তাই পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদের নির্দেশ দেয় বেজা।
তবে নির্দেশনার দুমাস হলেও মহেশখালী উপজেলা প্রশাসন কিংবা কক্সবাজার জেলা প্রশাসন থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান জানান, সোনাদিয়ার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও রাতযাপন নিষিদ্ধের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পত্র হাতে পেয়েছেন। তবে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর আগে প্রস্তুতি দরকার। খুব শিগগিরই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইয়াছিন জানান, সোনাদিয়ার পরিবেশ রক্ষা করতে হলে কোনো অবস্থাতেই পর্যটকদের রাতযাপন করতে দেয়া যাবে না। প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংস হয় এমন কাজ করা যাবে না। পরিবেশের ক্ষতি না করে সরকার সেখানে ইকোট্যুরিজম করতে যাচ্ছে।
এদিকে কক্সবাজার রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক ও পরিবেশবাদী সাংবাদিক নেতা সায়ীদ আলমগীর বলেন, সোনাদিয়া দ্বীপের অস্তিত্ব ধ্বংস হয় এমন কাজ বা উন্নয়ন থেকে বিরত থাকা দরকার।
আর যারা সোনাদিয়ার বন উজাড় করে কটেজের নামে স্থাপনা করছে তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে ২০২৩ সালের প্রথম দিন থেকে পর্যটকদের রাতযাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। চলতি ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন মহেশখালী থানার ওসি প্রণব চৌধুরী। তিনি আরো বলেন, বিশেষ প্রয়োজনে বহিরাগত কারো রাত্রিযাপন করতে হলে প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে। তবে দিনের বেলা সোনাদিয়া দ্বীপ ভ্রমণে কোনো বাধা নেই। কিন্তু তাদের বিকাল ৪টার মধ্যে সোনাদিয়া দ্বীপ থেকে ফিরে আসতে হবে।
সোনাদিয়া দ্বীপে পর্যটকদের রাত্রী যাপনে বিধিনিষেধ আরোপের পর নতুনভাবে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা অপসারণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ভ্রমণে আসা পর্যটকদের জন্য গড়ে তোলা স্থায়ী-অস্থায়ী বাণিজ্যিক কটেজ অপসারণ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়