ছিনতাইকারী থেকে দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খান

আগের সংবাদ

বিশুদ্ধ পানি ছাড়াই স্বাস্থ্যসেবা! : উপকূলীয় হাসপাতালগুলোতে বিশুদ্ধ পানির সংকট, দেশের ২১ শতাংশ হাসপাতালে নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা

পরের সংবাদ

কাজে আসছে না মুহুরী সেচ প্রকল্প : কোটি কোটি টাকা ক্ষতির শঙ্কায় সোনাগাজীর বোরো চাষিরা

প্রকাশিত: মার্চ ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সৈয়দ মনির আহমদ, সোনাগাজী, ফেনী থেকে : ফেনীর সোনাগাজীতে বোরো চাষ করে পানির অভাবে ক্ষতির মুখে হাজারো কৃষক। বোরো মৌসুমে ধান চাষ করে পানির সংকটে পড়েছেন তারা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুহুরী সেচ প্রকল্প কৃষকদের চাষাবাদের কাজে আসছে না। উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা জুড়ে ৫২টি খাল রয়েছে। মুহুরী নদীতে মিঠা পানি, বড় ও ছোট ফেনী নদীতে নোনা পানি থাকলেও বাধার কারণে খালগুলোতে পানি যাচ্ছে না।
গত কয়েক বছর ধরে শত কোটি টাকা ব্যায়ে খালগুলো সংস্কার করা হয়েছিল। তবুও খালে পানি আসছে না। পানি পাওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেও কোনো প্রতিকার পায়নি কৃষকরা। সব দপ্তর থেকে খালে পানি সরবরাহ করার আশ্বাস দিলেও খালগুলোতে এখনো পানি সরবরাহ হয়নি। অনেক কৃষক গ্রামের পুকুর থেকে পানি কিনে জমিতে সেচ দিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সোনাগাজী উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৫০০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৮০০ হেক্টর। এর মধ্যে উচ্চফলনশীল (উফশী) ১ হাজার ৫০০ হেক্টর ও হাইব্রিড চাষ হয়েছে ৩০০ হেক্টর। এছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে আরো ১ হাজার ২০০ হেক্টর চাষাবাদ হয়েছে। চাষকৃত ধাগুলোর মধ্যে রয়েছে বিআর-১৬, ব্রি-২৮, ২৯, ৬৭, ৬৮,৭৪, ৮৮, ৮৯, ৯২, বিনা-১০, ২৪, হাইব্রিড ব্র্যাক-১১, রূপালী, দোয়েল, সম্পদ, হীরা-২, ময়না, টিয়া।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- উপকূলীয় এ উপজেলায় কৃষকদের নীরব কান্না যেন দেখার কেউ নাই। মৌসুমের শুরুতে কৃষি দপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা পানি দেয়ার কথা বলেছিলেন। তাই কৃষকরা লক্ষমাত্রার চেয়ে অধিক আবাদ করেছেন। এখন কেউ দায়িত্ব নিতে রাজি নয়। শুরুর দিকে পানি থাকলেও এখন খালে কোনো পানি নেই। ধানের জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। ফাটল দেখা দিচ্ছে অনেক জমিতে।
ইতোমধ্যে সব দপ্তরে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে তবুও সরজমিনে কেউ দেখতে আসেননি। তারা সব চেষ্টা করে যাচ্ছেন, জমি ও চারা রক্ষার জন্য। প্রণোদনা দিয়ে হলেও বোরো আবাদ রক্ষার দাবি কৃষকদের।
চর ছান্দিয়ার কৃষক আবদুস সালাম জানান, খালে পানি না থাকায় পুকুর থেকে পানি কিনে জমিতে দিয়েছেন। কিন্তু সেই পুকুরের পানিও শুকিয়ে গেছে। সদর ইউনিয়নের চরখোয়াজ গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, বড় আশা করে দেড় একর জমিতে বোরো আবাদ করেছি। পানি সংকটে আমিসহ অনেক চাষির মাথায় হাত পড়েছে।
পানির সংকটের কারণে আমাদের সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে। চরচান্দিয়া ইউনিয়নের লন্ডনী পাড়ার কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, তিনি ও তার কয়েকজন সহযোগী কৃষক ব্যাংক, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ৫০ একর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। পানি সরবরাহের জন্য সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি। ধানখেত পানির অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। সামনে বৃষ্টি না হলে বিকল্প ব্যবস্থা করে হলেও বোরোর জমি রক্ষা করতে হবে। চরগণেশ গ্রামের জামাল উদ্দিন বলেন, পাউবো কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে সেচ কার্ড দিয়েছেন। পানির জন্য টাকাও রিচার্জ করেছি। পানিও পাচ্ছি না, রিচার্জকৃত টাকাও ফেরত পাচ্ছি না। চরদরবেশ ইউনিয়নের চরসাহাভিকারী গ্রামের ওসমান গণি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ দিয়েছেন এক ইঞ্চি কৃষি জমিও যাতে খালি না থাকে। অথচ আমরা চাষাবাদ আজকে নিঃস্ব হয়ে গেছি। সবুজ ধান ক্ষেতে পানির অভাবে চারখার হয়ে যাচ্ছে। পানি না পেলে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হবে কৃষকদের।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার বলেন, উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৫শত হেক্টর। আবাদ হয়েছে প্রায় তিন হাজার হেক্টর। দ্রুত সময়ের মধ্যে খালে পানি সরবরাহ করতে না পারলে ধানের চরম ক্ষতি হবে। এতে কৃষকদের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হবে। এর ফলে আমাদের বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ভেস্তে যাবে। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে যাচ্ছি। পানি সংকটের কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে আগামীতে বোরোসহ অন্য ফসল চাষেও আগ্রহ হারাবেন।
জানতে চাইলে সোনাগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন ভোরের কাগজকে বলেন, কৃষকদের পানি সমস্যার কথা আমরা জেনেছি। নিয়মিত পাউবো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে পাউবো পানি সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান ভূঞা ভোরের কাগজকে বলেন, বেশ কয়েকটি খালে মাটি ভরাট হয়ে গেছে। কৃষকদের দাবির প্রেক্ষিতে পাউবোর প্রকল্প পরিচালক রাফিউজ সাজ্জাদ খালগুলো পরিদর্শন করেছেন। মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পেশ করেছি। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় নদীর পানির নাব্যতাও সংকট রয়েছে। দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়