ছিনতাইকারী থেকে দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খান

আগের সংবাদ

বিশুদ্ধ পানি ছাড়াই স্বাস্থ্যসেবা! : উপকূলীয় হাসপাতালগুলোতে বিশুদ্ধ পানির সংকট, দেশের ২১ শতাংশ হাসপাতালে নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা

পরের সংবাদ

অগ্নিঝরা মার্চ : হত্যাযজ্ঞের নীলনকশা চূড়ান্ত

প্রকাশিত: মার্চ ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : একাত্তরের ২১ মার্চ ছিল রবিবার। লাগাতার চলা অসহযোগ আন্দোলনের ২০তম দিন। ইয়াহিয়ার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর আন্দোলনের গতি আরো বেগবান হয়। ঢাকা শহরের মোড়ে মোড়ে স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের মিছিল, সমাবেশ। দলে দলে সবাই ছুটছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে। বাঙালি বুঝতে পারে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পাকিস্তানি প্রেসিডেন্টের বৈঠক ছিল প্রহসন মাত্র। এইদিন সকালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ভবনে ইয়াহিয়া খানের পঞ্চম দফা বৈঠক হয়। সেটি ছিল অনির্ধারিত বৈঠক। ৭০ মিনিটের ওই বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ।
আবার এদিন সকালে পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জোসেফ ফারল্যান্ড বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে তার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে মিলিত হন। ফারল্যান্ড বঙ্গবন্ধুকে এমন কিছু প্রস্তাব দিয়েছিলেন যাতে বঙ্গবন্ধু তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তখনই সেসব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। বলেন, আমি আমার জনগণকে পাকিস্তানের শেয়ালদের হাত থেকে মুক্ত করে আমেরিকান বাঘদের হাতে তুলে দিতে পারি না।
ধানমন্ডির বাসভবনে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম কৌঁসুলি এ কে ব্রোহির সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বসেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর স্পষ্ট ঘোষণা, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ অহিংস অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। নীতির প্রশ্নে কোনোই আপস নেই এবং আমাদের ভূমিকা অত্যন্ত পরিষ্কার। ধানমন্ডির বাসভবনে সবমবেত জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, বুলেট-বেয়োনেট দ্বারা কখনো সাড়ে সাত কোটি বাঙালির দাবিকে স্তব্ধ করা যাবে না। গুজব ও বিভেদ সৃষ্টিকারীদের সম্পর্কে সতর্ক থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে সন্ধ্যায় পিপলস পার্টিপ্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো কড়া সেনা পাহারায় প্রেসিডেন্ট ভবনে যান। সেখানে দুই ঘণ্টার বেশি সময় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। তবে ওই বৈঠক সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানা যায়নি। ভুট্টোকে বিমানবন্দর থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নিয়ে আসার সময় রাস্তার দুপাশে পথচারীরা ভুট্টোবিরোধী স্লোগান দেয়।
ওইদিন সেনাবাহিনীর লোকেরা হোটেল কর্মচারীদের জামায় কালোব্যাজ ও বাংলার পতাকা খুলে ফেলার জন্য চাপ দেয়। তবে বাঙালি হোটেলকর্মীরা পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেন, তারা ‘ভাত-পানি’ বন্ধ করে দেবেন। পরে সামরিক কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি সামলাতে কয়েকজন সামরিক সদস্যকে সরিয়ে নেয়। হোটেল লাউঞ্জে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকরা সেদিন ভুট্টোর দেখা পাননি। হোটেলে পৌঁছে ভুট্টো সরাসরি লিফটে চড়েন। সাংবাদিকরা লিফটে উঠতে চাইলে ভুট্টোর প্রহরীরা অস্ত্র উঁচিয়ে বাধা দেয়। রাতে ভুট্টো ও ইয়াহিয়া দুই ঘণ্টা স্থায়ী এক গোপন বৈঠকে মিলিত হন এবং ২৫ মার্চের গণহত্যার নীলনকশা চূড়ান্ত করেন। কিন্তু রাতে বিদেশি সাংবাদিকদের ভুট্টো বলেন, ‘সব ঠিক হয়ে যাবে।’ পরদিন দৈনিক ইত্তেফাক ভুট্টোর ঢাকা সফরের বর্ণনা দিয়ে খবর প্রকাশ করে। শিরোনাম ছিল, ‘হঠ যাও- সব কুছ ঠিক হো যায়ে গা।’
চট্টগ্রামের পলো গ্রাউন্ডে ন্যাপপ্রধান আবদুল হামিদ খান ভাসানী বিশাল এক জনসভায় পরিষ্কার ঘোষণা দেন, এসব আলোচনা করে কোনো ফল আসবে না। এ দেশের কেউ আজ আর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে মানে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়