ইন্ডিয়ান হায়ার এডুকেশন মিট উদ্বোধন

আগের সংবাদ

ভোরের কাগজ, এনজিও ফোরাম ও বাউইনের সেমিনারে বক্তারা : এসডিজি ৬ অর্জনে কার্যক্রম বেগবান করার তাগিদ

পরের সংবাদ

মৈত্রী পাইপলাইন জ্বালানি খাতে সম্ভাবনা

প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২০, ২০২৩ , ২:৩৭ পূর্বাহ্ণ

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৮ মার্চ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের উদ্বোধন করেন। এটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম আন্তঃসীমান্ত জ্বালানি পাইপলাইন, যা আনুমানিক ৩৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। পাইপলাইনটিতে প্রতি বছর এক মিলিয়ন মেট্রিক টন (এমএমটিপিএ) হাইস্পিড ডিজেল (এইচএসডি) পরিবহন করার ক্ষমতা রয়েছে। এটি প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সাতটি জেলায় হাইস্পিড ডিজেল সরবরাহ করবে। মৈত্রী পাইপলাইন ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় জ্বালানি প্রকল্প, যার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে জ¦ালানি সহযোগিতা বাড়বে। এটি আন্তঃসংযোগের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ, যেহেতু এটি বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তের মধ্য দিয়ে যায়। এটি শক্তির ক্ষেত্রেও আঞ্চলিক একীকরণের পথ প্রশস্ত করবে। পাইপলাইনটি বাংলাদেশের জ্বালানি ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে, যা বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটাতে এবং আমদানিকৃত জ¦ালানির ওপর দেশের নির্ভরতা হ্রাস করতে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া অন্য দেশগুলোও এতে উপকৃত হবে। অতএব জ্বালানি সহযোগিতার একটি নতুন যুগের অভিজ্ঞতা হবে।
২০১৭ সালের এপ্রিলে এনআরএল ও বিপিসির মধ্যে ভারত থেকে বাংলাদেশে হাইস্পিড ডিজেল পাইপলাইন বিক্রির জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পরের বছর অক্টোবরে এনআরএল এবং বিপিসি বাংলাদেশের কাছে গ্যাস তেল (ডিজেল) বিক্রির জন্য দ্বিতীয়, ১৫ বছরের চুক্তিতে সম্মত হয়। তবে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনকে দুদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, বিশেষ করে জ্বালানি খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। পাইপলাইনটি পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) বিপণন টার্মিনাল থেকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের পার্বতীপুর স্টোরেজে (বিপিসি) জ¦ালানি পরিবহন করবে। পাইপলাইনটি দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রে কিছু বড় পরিবর্তন আনবে। প্রথমত, ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের অন্যতম প্রধান সুবিধা হলো এটি বাংলাদেশকে প্রাকৃতিক গ্যাসের একটি নির্ভরযোগ্য উৎস সরবরাহ করবে, যা কয়লা এবং তেলের মতো অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় একটি পরিষ্কার এবং আরো দক্ষ শক্তির উৎস। এটি বাংলাদেশে বায়ুদূষণ এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করতে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। উপরন্তু পাইপলাইনটি বাংলাদেশে, বিশেষত গ্রামীণ অঞ্চলে জ্বালানি অ্যাক্সেস এবং সাশ্রয়ী মূল্যের উন্নতিতে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই পাইপলাইন জ্বালানি ও অন্যান্য জ্বালানি উৎস আমদানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে উভয় দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বাড়াতে সহায়তা করবে। তৃতীয়ত, ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন উভয় দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে। চতুর্থত, ডিজেল আমদানির মাধ্যমে বাংলাদেশের জ্বালানি শিল্পের বহুমুখীকরণ সহজ হবে। জ্বালানির প্রধান উৎস হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে।
অবশেষে ভুটান এবং নেপালও পাইপলাইন প্রকল্প থেকে উপকৃত হবে। দুই দেশ আঞ্চলিক জ্বালানি বাজারে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবে এবং একটি নির্ভরযোগ্য জ্বালানি উৎসে অ্যাক্সেস পাবে। পাইপলাইন প্রকল্পটি দক্ষিণ এশিয়ায় ইন্টিগ্রেশন এবং কানেক্টিভিটি বাড়ানোর এই অঞ্চলের সর্বাধিক লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। পাইপলাইন প্রকল্পটি দুই দেশের মধ্যে ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক বিনিময়কে শক্তিশালী করবে। এই প্রকল্প দুদেশের মধ্যে জ্বালানি সহযোগিতার একটি নতুন যুগের প্রতিনিধিত্ব করছে এবং আগামী বহু বছর ধরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে সমর্থন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সুমাইয়া জান্নাত : উদ্যোক্তা ও উন্নয়ন কর্মী, চট্টগ্রাম।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়