ইন্ডিয়ান হায়ার এডুকেশন মিট উদ্বোধন

আগের সংবাদ

ভোরের কাগজ, এনজিও ফোরাম ও বাউইনের সেমিনারে বক্তারা : এসডিজি ৬ অর্জনে কার্যক্রম বেগবান করার তাগিদ

পরের সংবাদ

আলোর মুখ দেখেনি স্থল বন্দরসহ কুষ্টিয়ার ৩ অর্থনৈতিক অঞ্চল

প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নুর আলম দুলাল, কুষ্টিয়া থেকে : বার বার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও বিভিন্ন জটিলতায় এখনো অন্ধকারেই নিমজ্জিত কুষ্টিয়ার অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণকাজ। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন- কুষ্টিয়ায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, শিল্পনগরী ও স্থলবন্দর গড়ে উঠলে এ অঞ্চলের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়বে।
তবে জেলার ভেড়ামারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জমি হস্তান্তর ও কুমারখালীতে বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনে জমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন হলেও দৌলতপুর সীমান্তে ভারতের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজতর করতে প্রাগপুরে স্থলবন্দর স্থাপন দীর্ঘদিনের দাবি থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল আলোর মুখ দেখলে নতুন নতুন কর্মস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ভাগ্যবদলের নিয়ামক হয়ে উঠবে বলেও বলে মনে করেন বিশেজ্ঞরা।
দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর থেকে লালনশাহ সেতু হয়ে জাতীয় মহাসড়কে মাত্র ২০ কিলোমিটার ও ওপারে পশ্চিমবঙ্গের শিকারপুরে ভারতের জাতীয় মহাসড়ক। ব্রিটিশ আমলে মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর একটি সেতু ছিল। সে সময় ব্যবসা-বাণিজ্য ও মানুষের যাতায়াতের অন্যতম রুট হিসেবে ব্যবহার করা হতো প্রাগপুরকে। কালক্রমে ওই সেতু বিলীন হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় ব্যবসা-বাণিজ্য। তাই ব্যবসা-বানিজ্য সহজতর করতে পথটি আবারো চালু করা দীর্ঘদিনের দাবি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।
তথ্য মতে, অর্থনৈতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় প্রস্তাবিত প্রাগপুরে স্থলবন্দর বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে ব্যাপক সম্ভাবনার সৃষ্টি হবে। এছাড়া প্রাগপুরে স্থলবন্দর বাস্তবায়ন হলে ঢাকা-কলকাতার দূরত্ব কমবে ১০০ কিলোমিটার। যা দুই দেশের পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বিশাল সাশ্রয় হবে। প্রাগপুরে স্থলবন্দর বাস্তবায়িত করতে অবকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রেও বড় অর্থের দরকার হবে না।
মহাসড়ক কাছাকাছি হওয়ায় অনায়াসে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা যাবে। শুধুমাত্র মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণ করলেই হবে। বৈধ পথে পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হলে বন্ধ হবে চোরাচালানসহ অবৈধ পথে পণ্য আনা-নেয়া। এতে প্রচুর রাজস্ব পাবে সরকার। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান। তাই প্রস্তাবিত স্থলবন্দরটির দ্রুত বাস্তবায়ন চান স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুরের সংসদ সদস্য আ ক ম সরোয়ার জাহান বাদশা ভোরের কাগজকে বলেন- আমি দীর্ঘদিন থেকে দৌলতপুর উপজেলায় একটি স্থলবন্দরসহ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জাতীয় সংসদে দাবি জানিয়ে আসছি। এর প্রেক্ষিতে ভারতের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারে মধ্যে চিঠি চালাচালিও হয়েছে। আমাদের অর্থসচিব বেশ কয়েকবার এলাকা পরিদর্শনও হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এর বেশি কিছু নজরে পড়েনি।
তবে খুব দ্রুতই সরকারের এমন একটি ভালো উদ্যোগ বাস্তবায়ন হবে বলে বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় স্থলবন্ধর হলে কুষ্টিয়াসহ বৃহত্তর খুলনা বিভাগে অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি নতুন মাত্রা যোগ হবে।
তথ্য মতে- অর্থনেতিক ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত হওয়ায় ঐতিহাসিক গুরুত্ব¡ দিয়ে সরকার স্থলবন্দর তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। তৎকালীন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান কুষ্টিয়ায় সফরে এসে প্রাগপুর সীমান্তে স্থলবন্দর স্থাপনের ঘোষণা দেন। এরপর সরেজমিনে স্থলবন্দরের সম্ভাব্যতা যাচাই করে নৌপরিহবন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দল। ভূমি জরিপসহ অন্যান্য কাজও হয়েছিল। তবে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও প্রাগপুরে স্থলবন্দর স্থাপনের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়নি।
এদিকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের কার্যক্রম। ২০১৫ সালের ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমঝোতা স্মারক সইয়ের মধ্য দিয়ে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এজন্য ভেড়ামারা উপজেলার চরমোকারিমপুর, আরাজিসারা এবং চর প্রাগপুরে মৌজায় প্রায় ৫০৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়।
রেলওয়ে এবং সরকারের অব্যবহৃত জমি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় এ এলাকাটিকেই বেছে নেয় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য। ২০১৭ সালে ১০ জুন জেলা প্রশাসন ৩১২ একর খাস জমির দলিল প্রকল্প কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। এরপর থেকে এ প্রকল্পের দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি হয়নি। এখনো দফায় দফায় স্থান পরিদর্শনের মধ্যেই রয়ে গেছে কার্যক্রম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, গ্যাস সহজলভ্যতার জন্য দেশের ২২টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে উপযোগী স্থান হিসেবে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলাকে বিবেচনা করে ভারত সরকার এবং সে দেশের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা মনে করেন, ভেড়ামারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হলে এ এলাকায় তথা কুষ্টিয়ায় ব্যাপক উন্নয়ন হবে। হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া ভেড়ামারা-মিরপুর আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন- আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ভেড়ামারা এলাকায় একটি অর্থনৈতিক জোন স্থাপন করা। সে লক্ষ্যে ভেড়ামারা লালন শাহ সেতুর উত্তর পাড় রেলওয়ের জায়াগাও নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই পর্যন্ত কাজ শেষ হয়ে আছে। এর বেশি কিছু কার্যক্রম নজরে আসছে না। আমি আশাবাদি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চালিকা শক্তিকে আরো গতিশীল করতে সরকার ভেড়ামারায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করতে খুব দ্রুত সিন্ধান্ত নেবেন।
অন্যদিকে শুধুমাত্র জমির রেকর্ড জটিলতায় ভুল থাকার কারণে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনে বিলম্ব হচ্ছে। বিসিক শিল্পনগরীর জন্য বার বার সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। বিসিকের থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও ঋণ নিয়ে শিল্পে জড়িয়ে অনেকে সফলতা পেলেও কেউ কেউ নানাবিধ কারণে পুঁজি পর্যন্ত হারিয়ে পথে বসেছে।
মুলতঃ নির্ধারিত জায়গা না থাকায় অপরিকল্পিত ও বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে উঠেছে কুমারখালীর তাঁতসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান। কুমারখালীতে বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনের দাবি উঠে আসছে বহুদিন থেকেই।
বিএনপি জোট সরকার জিলাপীতলায় এর জায়গা নির্ধারণও করেছিল। কিন্তু সরকার পরিবর্তন হলে সেটা ভেস্তে যায়। পরবর্তীতে বর্তমান সরকারে আমলে সাবেক এমপি আব্দুর রউফ চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হন।
কুমারখালীতে অর্থনৈতিক জোন হিসেবে গড়তে নতুন, আধুনিক ও পরিকল্পিত একটি বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেও তা আলোর মুখ দেখেনি। ইতোমধ্যে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়কের কুমারখালী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পাশের ডোবা ভরাট করে ১০০ দশমিক ৫৬ একর জায়গায় শিল্পনগরী করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও জটিলতায় তা ভেস্তে গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া কুমারখালী-খোকসা আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ বলেন, কুমারখালী তাঁত শিল্পের জন্য জগত বিখ্যাত। সেই ধারাবাহিকতায় এখানে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল খোলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সে লক্ষ্যে জমিও অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তবে নানা জটিলতায় তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তিনি বলেন, খুব তাড়াতাড়ি জটিলতা কাটিয়ে কুমারখালীতে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজ শুরু হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়