নায়িকা মাহি ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা

আগের সংবাদ

শিবচরে বাস খাদে, নিহত ১৯ : আন্ডারপাসের দেয়ালে ধাক্কা লেগে দুমড়েমুচড়ে যায় বাসটি > আহত ১৫ জনের ৮ জন ঢামেকে

পরের সংবাদ

র‌্যাব-এলাকাবাসী সংঘর্ষ : সোনারগাঁওয়ে গুলিতে বৃদ্ধ নিহত

প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নারায়ণগঞ্জ ও সোনারগাঁও প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে এক হত্যা মামলার আসামি ধরতে গিয়ে র‌্যাবের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনের সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে আবুল কাসেম (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন ফার্মেসি ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির (৫৮)। সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় র‌্যাবের চার সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন বলে র‌্যাব দাবি করেছে। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে সোনারগাঁওয়ের সাদিপুর ইউনিয়নের বরগাঁও গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তবে নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, র‌্যাব পরিচয়ে সাদাপোশকধারী একদল লোক গুলি করে হত্যা করেছে আবুল কাসেমকে।
র‌্যাব জানায়, শুক্রবার সকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের সাদিপুর ইউনিয়নের গজারিয়াপাড়া এলাকার একটি মাঠ থেকে রোজিনা ইসলাম নামে এক গার্মেন্টস কর্মীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই হত্যা মামলার আসামিকে শনাক্ত করে র‌্যাবের একটি টিম শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে সাদিপুর ইউনিয়নের বরগাঁও এলাকায় অভিযানে যায়। এ সময় র‌্যাবের দল ওই হত্যা মামলার আসামি গার্মেন্টস কর্মী সেলিমকে গ্রেপ্তার করে গাড়িতে তোলার সময় সে চিৎকার চেঁচামেচি ও হৈচৈ করে লোকজন জড়ো করে। পরে স্থানীয় লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে র‌্যাবের ওপর হামলা চালায়। র‌্যাবের ওপর গুলি ছোড়ে আসামিকে ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করে বলে র‌্যাব দাবি করে। আত্মরক্ষার্থে র‌্যাব সদস্যরা পাল্টা গুলি ছোড়ে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়। পরে র‌্যাব সদস্যরা আসামি সেলিমকে নিয়ে চলে আসে।
র‌্যাব-১১ সিও লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, রাতে আসামি ধরতে গেলে স্থানীয় প্রায় দুই আড়াইশ লোকজড়ো হয়ে র‌্যাবের ওপর হামলা করে ও গুলি চালায়। র‌্যাব আত্মরক্ষার্থে পাল্টাগুলি ছোড়ে। রাতে কোনো হতাহাতের খবর পাইনি। সকালে জানতে পারি একজন মারা গেছে। সে কার গুলিতে মারা গেছে সেটি এখন নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে স্থানীয়দের হামলায় র‌্যাবের চার সদস্য আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
র‌্যাব সিও রোজিনা ইসলাম হত্যা সম্পর্কে বলেন, প্রাথমিকভাবে জানতে পারি একই গার্মেন্টেসে চাকরি করার কারণে নিহত রোজিনা ইসলামের সঙ্গে সেলিমের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এতে তাদের মধ্যে শাররিক সম্পর্ক হয়। পরে রোজিনা ইসলাম সেলিমকে বিয়ে জন্য চাপ দিলে সে নানা টালবাহানা শুরু করে। সেলিমের জন্য অন্যত্র বিয়ে ঠিক করছে এই খবরে পেয়ে রোজিনা ইসলাম শুক্রবার ভোরে সেলিমের বাড়িতে যাচ্ছিল অবস্থান নেয়ার জন্য। এই খবর পেয়ে সেলিম রোজিনাকে গলা কেটে হত্যা করে লাশ মাঠের মধ্যে রেখে পালিয়ে যায়। র‌্যাব ওই মামলার আসামি সেলিমকে গ্রেপ্তার করেছে। সে এখন র‌্যাবের হেফাজতে আছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান।
নিহতের স্ত্রী রাজিনা ইসলাম জানান শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে তিনি ও তার স্বামী শৌচাগারে যেতে বের হন। এ সময় বাড়ির পাশেই চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ শুনতে পান। তারা সেখানে গিয়ে দেখেন শার্ট ও গেঞ্জি গায়ে একদল লোক তাদের পূর্বপরিচিত সেলিম নামে এক তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিককে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। সেলিম কান্নাকাটি করছে। এ সময় বৃদ্ধ, ওই লোকদের কাছে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে সাদা পোশাকধারীরা ওই বৃদ্ধকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে সেখান থেকে চলে যেতে বলেন। মারধরের পর বৃদ্ধ ক্ষিপ্ত হয়ে চিৎকার চেঁচামেচি এবং সাদা পোশাকধারীদের গালাগাল করেন। এ সময় সাদা পোশাকধারীদের একজন গুলি করে। তার দাবি, র‌্যাবের গুলিতে তার স্বামী মারা গেছে।
এদিকে স্থানীয়রা জাানান, গভীর রাতে গুলির শব্দ পাওয়ার পর এলাকার মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়েছে বলে ঘোষণা আসে। তখন স্থানীয় লোকজন বাড়ি থেকে বের হয়ে এলে ওই সাদা পোশাকধারীরা তাদের উদ্দেশে গুলি ছোড়ে। এ সময় হুমায়ুন কবীরের পায়ে গুলি লাগে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া হুমায়ুন কবিরের গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আহত হুমায়ুন কবিরের ছেলে সজিব জানান, তিনি একজন ফার্মেসি ব্যবসায়ী। হাসপাতালে তার দুই পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে। দুই পা থেকে তিনটি বুলেট বের করা হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, চেঁচামেচির শব্দ শুনে গ্রামের সবার মতো বাবা ঘর থেকে বের হয়ে যান। পরে শুনি র‌্যাব গুলি করেছে। সেই গুলিতে আহত হয়েছেন আমার বাবা।
সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন সিজান বলেন, রাত ৩টা ১০ মিনিটে মো. দ্বীন ইসলাম নামে এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ এক বৃদ্ধকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরীক্ষা করে দেখা যায় হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই ওই বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। তার নাভির উপরে একটি বুলেটের চিহ্ন আছে। হাসপাতালে ভর্তি করানোর সময় দ্বীন ইসলাম নিজেকে বৃদ্ধের ছেলে বলে পরিচয় দিয়েছেন। নিহত বৃদ্ধ আবুল কাসেম ওই এলাকার প্রয়াত কদম আলীর ছেলে। তিনি পেশায় একজন বাঁশ বেতের হস্তশিল্পী।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, রাতে একটি হত্যা মামলার আসামি ধরতে গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে র‌্যাবের সংঘর্ষ হয়। পরে আমরা জানাতে পারি সেখানে একজন নিহত হয়েছে। বৃদ্ধ আবুল কাসেম কীভাবে মারা গেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। র‌্যাবের ওপর হামলার ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসাপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়