নায়িকা মাহি ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা

আগের সংবাদ

শিবচরে বাস খাদে, নিহত ১৯ : আন্ডারপাসের দেয়ালে ধাক্কা লেগে দুমড়েমুচড়ে যায় বাসটি > আহত ১৫ জনের ৮ জন ঢামেকে

পরের সংবাদ

মন্দিরের আট দোকান ভাঙলেন এমপি রতন!

প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বিরুদ্ধে এবার মন্দিরের আট দোকান ভাঙার অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, নিজ উপজেলা সুনামগঞ্জের ধরমপাশায় সংসদ সদস্যের বাবার নামের মাধ্যমিক স্কুল ও কালীবাড়ি মন্দির কমিটির মধ্যে জায়গা নিয়ে দ্ব›দ্ব তৈরি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানে এসে মন্দিরের তৈরি করা আটটি দোকানকোঠা তার লোকজনকে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়ায় এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। আগামী মঙ্গলবার দোকানকোঠা ভাঙার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে -এমন খবরে এলাকায় দুপক্ষই সংগঠিত হচ্ছে। সংসদ সদস্য অবশ্য বলেছেন, ‘সব কিছুই রটনা, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, মিথ্যাচার’।
এলাকাবাসী জানান, ব্রিটিশ শাসনামলে উপজেলার সুখাইড়ের জমিদার মথুর চন্দ্র রায় বাহাদুর সুখাইড় কালী মন্দিরের নামে ৪৫ শতাংশ জমি লিখে দেন। মন্দিরের পাশে ১৯৪২ সালে একটি হাইস্কুলও প্রতিষ্ঠা হয়। তাতে জমি ছিল ১৮ শতাংশ। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির সময় স্কুলের শিক্ষকরা এলাকা ছাড়লে স্কুলটি বন্ধ হয়ে যায়।
২০০০ সালে আবার সেখানে স্কুল করার উদ্যোগ নেয়া হয়। তিন বছর পর সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। পরে ২০১১ সালে মোয়াজ্জেম হোসেন রতন সুনামগঞ্জ-১ (ধরমপাশা-জামালগঞ্জ-তাহিরপুর ও মধ্যনগর) আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৩ সালে সরকারি খাস জমিতে নিজের বাবার নামে আব্দুর রশিদ মেমোরিয়াল হাইস্কুল নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ওই স্কুলের ভবন নির্মাণের সময় মন্দিরের কিছু জমি স্কুলভবনে ঢুকেছে বলে দাবি করেন স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এখন আবার মন্দিরের জমিতে স্কুলের সিঁড়ি নির্মাণ করতে চাইলে, স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বাধা দেন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হন স্থানীয় সংসদ সদস্য।
বৃহস্পতিবার আব্দুর রশিদ মেমোরিয়াল হাইস্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার

বিতরণ অনুষ্ঠানে স্কুলের ভবন ও জমি নিয়ে কথা তোলেন সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। এসময় তিনি মন্দিরের আটটি দোকানকোঠা স্থানীয় প্রশাসনকে ভাঙার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আপনারা না ভাঙলে আমার লোকজনই এটি ভাঙবে।’ এরপর থেকে এলাকায় এ নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। মন্দির কমিটির লোকজন বলেছেন, আগামী মঙ্গলবার শুনেছি এটি ভাঙার চেষ্টা করা হবে। তারা তা প্রতিহত করবেন।
ধরমপশা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক ঝুটন দাস বললেন, জমিদারের দান করা জমি আছে ৬৩ শতাংশ, এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ মন্দিরের জন্য। অন্যটুকু স্কুলের জন্য। এমপি সাহেব তার বাবার নামে করা স্কুল নিজে জমি দিয়ে করলেই সুন্দর দেখাত, তিনি তা করেননি। এখন যেহেতু স্কুলভবনের জন্য জমি প্রয়োজন সুখাইড় জুনিয়র স্কুলের নামে যে জমি ছিল, সেই ১৮ শতাংশ জমি দিতে সবাই সম্মত হয়েছেন। কিন্তু মন্দিরের ৪৫ শতাংশ থেকে কেউ জমি দিতে রাজি নন। তাছাড়া দোকানকোঠার আয় দিয়ে মন্দিরের প্রতিদিনের পূজা অর্চনার খরচ মেঠানো হয়। এটি কিভাবে ভাঙার কথা বলা হয়। একই ধরনের মন্তব্য করলেন, গ্রামের তরুণ কামনা দাস ও পিযুষ কান্তি দাস।
গ্রামের বাসিন্দা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নবনী কান্ত দাস বললেন, ১৯৬৪ সালের এসএ রেকর্ডে কালীমন্দিরের নামে ৪৫ শতাংশ জমি রেকর্ড হয়েছে। বর্তমান রেকর্ডে কিভাবে ২২ শতাংশ মন্দির এবং ২৩ শতাংশ এমপি সাহেবের বাবার নামে রেকর্ড হলো প্রশ্ন রেখে বললেন, স্কুলের একটি ভবনের কিছু অংশ মন্দিরের জমিতে করা হয়েছে। যেহেতু ভবন উঠে গেছে, সেটা না ভাঙারই পক্ষে মন্দির কমিটি কিন্তু এখন আরো জমি ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে। এটা কেউ মানতে নারাজ। তাছাড়া পূজা অর্চনার খরচ মেটানোর দোকানকোঠাগুলো ভাঙার কথা শুনে সবাই ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
ধরমপশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ বিলকিস বলেন, সম্প্রীতি বজায় রেখে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেয়ার চেষ্টা করছি। আশা করি পারব।
ধরমপশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সীতেশ চন্দ্র সরকার জানান, ‘মন্দির এবং স্কুলের জমি চিহ্নিত করার পরই বলা যাবে, কার জমি কে দাবি করছে। এর আগে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। সংসদ সদস্য মহোদয় নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিষয়টি দেখার জন্য, আমি বলেছি দুপক্ষের কাগজপত্র দেখে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমপি সাহেব নিজের লোক দিয়ে মন্দিরের দোকানকোঠা ভেঙে ফেলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, আমি মন্দিরের স্থাপনা ভাঙার কথা বলিনি। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এর আগেও হয়েছে। এখনো হচ্ছে। সামনে নির্বাচন, যারা এ আসনে প্রার্থী হতে চায় তারাই আমার বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র করে নির্বাচনের মাঠ গরম করতে চায়। এটা কোনো বিষয় নয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়