নায়িকা মাহি ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা

আগের সংবাদ

শিবচরে বাস খাদে, নিহত ১৯ : আন্ডারপাসের দেয়ালে ধাক্কা লেগে দুমড়েমুচড়ে যায় বাসটি > আহত ১৫ জনের ৮ জন ঢামেকে

পরের সংবাদ

বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন : সাশ্রয়ী দ্রুত নিরবচ্ছিন্নভাবে জ¦ালানি তেল সরবরাহ হবে

প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন দেশের জ¦ালানি খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে। সাশ্রয়ী, দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্নভাবে দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় জ্বালানি সরবরাহে মাইলফলক হবে। পরিবহন খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। বছরে আড়াই লাখ টন ডিজেল ভারত থেকে আমদানি করা হবে। জ¦ালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পেট্রোল ডিজেল ও অকটেন- এই তিন ধরনের জ¦ালানির মধ্যে দেশে ডিজেল সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়। যানবাহন থেকে শুরু করে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ডিজেলের প্রয়োজন হয়। চাহিদার বিপরীতে বিভিন্ন দেশ থেকে বড় জাহাজে ডিজেল আমদানি করা হয়। ওইসব বড় জাহাজ থেকে আবার ছোট জাহাজে লোড করে চট্টগ্রাম বন্দরে অথবা খুলনার দৌলতপুর ঘাটে নিতে হয়। পরবর্তী সময়ে এই দুই স্থান থেকে তেলের ওয়াগনে ভরে পার্বতীপুরের ডিপোতে নেয়া হতো। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ডিজেল মজুত করতে দীর্ঘ সময় ও অনেক অর্থের প্রয়োজন হয়। আবার পরিবহন বা শ্রমিক ধর্মঘটনসহ বিভিন্ন কারণে ডিজেল সরবরাহে অনেক বেশি সময় লাগতো এবং ঝুঁকিও থাকতো। এখন বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল সরবরাহ শতভাগ ঝুঁকিমুক্ত ও সাশ্রয়ী হবে। এছাড়া সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সহজেই জ¦ালানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে বাংলাদেশে ডিজেল আমদানির লক্ষ্যে ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে ভারত সরকারের সঙ্গে একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি হয়। ওই বছরের অক্টোবর মাসে নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেডের (এনআরএল) বাংলাদেশে ডিজেল রপ্তানির জন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সঙ্গে ১৫ বছর মেয়াদি আরো একটি চুক্তি হয়। ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাইপলাইন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।
জানা গেছে, দেশের জ¦ালানি সংকট নিরসনে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ভারতের অর্থায়নে এই প্রকল্পে ৩ হাজার ৬২৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়। চলতি বছরের জুন মাসে পাইপলাইন নির্মাণকাজের জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের ৪ মাস আগেই কাজ শেষ হওয়ায় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী অপারেশনাল কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। ভারতের নুমালিগড় থেকে শিলিগুড়ি হয়ে এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল বাংলাদেশের দিনাজপুরে আসবে। দিনাজপুরের পার্বতীপুর ডিপোতে ডিজেল পৌঁছবে। এই ডিপো থেকে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে প্রতিদিন অতিরিক্ত ২৯ হাজার টন জ¦ালানি তেল মজুত সক্ষমতা বাড়বে। ১৩১ দশমিক ৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে পাইপলাইনের বাংলাদেশ অংশে ১২৬ কিলোমিটার এবং ভারতের অংশে ৫ কিলোমিটার এই পাইপলাইনের বিস্তৃতি। এই পাইপলাইন স্থাপনের ফলে উত্তরাঞ্চল এলাকায় একটি জ্বালানি বলয় তৈরি হয়েছে। জ¦ালানি মজুতের জন্য ২৯ হাজার ট্যাংক টার্মিনাল নির্মাণে কাজ চলছে। আগে থেকেই ১৫ হাজার টন জ¦ালানি মজুতের ট্যাংক টার্মিনাল রয়েছে। ভারতীয় তেল পাওয়ার পর উত্তরাঞ্চলের জন্য প্রায় ৬০ দিনের জ¦ালানি তেলের মজুত রাখার ব্যবস্থা হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাইপলাইনে জ¦ালানি তেল সরবরাহ সংক্রান্ত যে চুক্তি রয়েছে তাতে ধাপে ধাপে জ¦ালানির সরবরাহ বাড়বে। চুক্তি অনুযায়ী প্রথম তিন বছর ৬ লাখ টন জ¦ালানি পাবে বাংলাদেশ। প্রতি বছর পাবে ২ লাখ টন। চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ বছর পর্যন্ত প্রতি বছর ৩ লাখ টন এবং সপ্তম থেকে দশম বছরে প্রতি বছর ৫ লাখ টন জ¦ালানি আমদানি করতে পারবে। পরবর্তী বছরগুলোতে বার্ষিক ১০ লাখ টন জ্বালানি ভারত থেকে বাংলাদেশে আসবে। এর ফলে ভবিষ্যতে ডিজেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ জ¦ালানির অভাবে বাংলাদেশকে কোনো সংকটে পড়তে হবে না।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, পাইপলাইনে ভারত থেকে ডিজেল আমদানির ফলে ডিজেলের দাম এখন অনেকাংশে কমে যাবে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে প্রতি ব্যারেলের প্রিমিয়াম প্রাইস পড়ছে প্রায় ১১ ডলার। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল আনলে আমাদের খরচ পড়বে ৫ দশমিক ৫০ ডলার। এই হিসাবে প্রায় ৬ ডলার প্রিমিয়াম বাবদ সাশ্রয়ী হবে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তায় বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন কার্যকর অবদান রাখবে। এই ডিজেল এলে দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় সাশ্রয়ী উপায়ে, দ্রুততম সময়ে ও নিরবচ্ছিন্নভাবে জ¦ালানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে- এটা দেশের জন্য একটি মাইলফলক।
ডিজেলের মান প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি প্রতিমন্ত্রী জানান, ভারত থেকে আমদানিকৃত ডিজেলের মান বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণ করবে। মান যাচাই করব। একটা স্পেসিফিকেশন ঠিক করে দেয়া হয়েছে। ভারত সেই স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী তেল সরবরাহ করবে। তেলের মধ্যে সালফারের উপস্থিতি থাকবে ১০ পিপিএম। এই মান পুরোপুরি বিশ্বমানের।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়