নায়িকা মাহি ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা

আগের সংবাদ

শিবচরে বাস খাদে, নিহত ১৯ : আন্ডারপাসের দেয়ালে ধাক্কা লেগে দুমড়েমুচড়ে যায় বাসটি > আহত ১৫ জনের ৮ জন ঢামেকে

পরের সংবাদ

এবার নারায়ণগঞ্জে ভবনে বিস্ফোরণ থেকে আগুন : নিহত ১, আহত ও দগ্ধ ৯

প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জের ডালপট্টি এলাকায় একটি বাণিজ্যিক ভবনে বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আওলাদ হোসেন (৪০) নামে একজন নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবারের এ ঘটনায় আহত ও দগ্ধ হয়েছেন আরো ৯ জন।
দগ্ধরা হলেন- রিকশাচালক রেজাউল করিম (৫০), জগদীশ সরকার (৬৫) ও মো. শাহজাহান (৪০)। আর আহতরা হলেন- দিনমজুর হযরত আলী (৪০), মোহাম্মদ হোসেন (৪০), মুদি দোকানের কর্মচারী রবি দত্ত (৪০), মো. জাকির হোসেন (৪১), ট্রাকচালক মো. বিল্লাল হোসেন (৪৫) ও ৫০ বছর বয়সি অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি।
জানা গেছে, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। সেটি ভেঙে ফেলার জন্য মালিক ইলিয়াস দেওয়ানকে ৩ বার চিঠি দেয়া হলেও তিনি তা পালন করেননি। নারায়ণগঞ্জে এমন ৪২টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার জানান, নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ মোড়ে একটি দোতলা ভবনে বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। সকাল ৯টা ১ মিনিটে সংবাদ পাওয়া মাত্র ৯টা ৬ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরে আরো ৫টি ইউনিট যোগ দিয়ে ১০টা ২৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তিনি আরো বলেন, বিস্ফোরণে ভবনের পেছনের অংশ ধসে পড়ে। ধসে পড়া অংশ থেকে ৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
শতাধিক বছরের পুরনো এই দোতলা ভবনের নিচতলায় ৮টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ভবনের দক্ষিণ অংশের ভাড়াটিয়া গরিবে নেওয়াজ সল্টের মালিক জামাল দেওয়ান জানান, রোজার আগের দিনগুলোতে বেশি বেচাকেনা হওয়ায় তিনিসহ ব্যবসায়ীরা অন্য দিনের চেয়ে একটু আগেই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলেন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ভবনের উত্তর অংশের ভাড়াটিয়া রাজল²ী ভাণ্ডারের মালিক রাজন দোকান খুলে পূজার জন্য আগরবাতি জ্বালানোর চেষ্টা করেন। এসময় তার কক্ষে প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এরপরই ভবনে আগুন লেগে যায়। এলাকাবাসী দৌড়ে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে বাইরে আনার কিছুক্ষণের মধ্যে রাজল²ী ভাণ্ডারের অংশসহ উত্তর অংশ ধসে পড়ে। এসময় ভবনের পাশ দিয়ে যাওয়া বেশ কয়েকজন লোড-আনলোডের কাজ করা শ্রমিক আহত হন।
তিনি আরো জানান, ভবনটি অনেক বছরের পুরনো। দোকানের নিচ দিয়ে গ্যাস ও স্যুয়ারেজের লাইন আছে। প্রায়ই পাইপের লিকেজ থেকে দোকানে গ্যাস ঢুকত। এর আগেও একবার এখানে আগুন লেগেছিল।
নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসি আনিচুর রহমান জানান, আহত ও দগ্ধদের ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) হাসপাতাল এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নেয়া হয়। আহতদের মধ্যে আওলাদ হোসেন নামে একজন ঢামেক হাসপাতালে মারা গেছেন। তিনি লোড-আনলোড শ্রমিক ছিলেন বলে জানা গেছে।
আওলাদের সহকর্মী আলমগীর হোসেন ঢামেক হাসপাতালে জানান, তারা নারায়ণগঞ্জ সদর নিতাইগঞ্জ ডালপট্টি এলাকায় ট্রাক থেকে মালামাল নামচ্ছিলেন। রাস্তায় জ্যাম ছিল। এমন সময় হঠাৎ পাশের একটি দোতলা ভবনে বিস্ফোরণ হয়। এতে সেখানকার ইট এসে তাদের মাথায় পড়ে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়। আহতদের দ্রুত ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাদের মধ্যে আওলাদকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া জানান, ৭ জনকে নিয়ে আসা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন মারা গেছেন। ভর্তি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন এসএম আইউব হোসেন জানান, রেজাউলের ৭ শতাংশ, শাহজাহানের ৫০ শতাংশ ও জগদীশের ১০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তাদেরকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ভবনটির ভাড়াটিয়া জামাল দেওয়ান জানান,

এলাকাটি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে। ওয়ার্ড কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস জানান, ভবনটির মালিক ইলিয়াস দেওয়ান। তিনি রাজধানীর বনানীতে থাকেন। বেশ কয়েক বছর আগেই এ ভবনকে সিটি করপোরেশন ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যবহারের অযোগ্য হিসেবে ঘোষণা করে। তাকে ৩ বার এ ভবন ভেঙে ফেলার জন্য চিঠি দেয়া হয়, কিন্তু তিনি ভাঙেননি। এ ভবনে আগেও একবার একই ধরনের আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।
ভবন না ভাঙার কারণ জানতে ইলিয়াস দেওয়ানের মোবাইল ফোন নম্বরে বেশ কয়েকবার ফোন দেয়া হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিজেরা না ভাঙলে সরকারিভাবে ভেঙে দেয়ার নিয়ম রয়েছে। এজন্য জেলা প্রশাসন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস ও পিডব্লিউডির সমন্বয়ে একটি কমিটি রয়েছে। সেই কমিটি কেন ভবনটি ভাঙার উদ্যোগ নেয়নি- এমন প্রশ্নের জবাবে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ জানান, আজ রবিবার অফিসে এলে এ বিষয়ে কথা বলবেন।
একই প্রশ্নের জবাবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের টাউন প্ল্যানার মাঈনুল ইসলাম জানান, আমরা বেশ কয়েক বছর আগে এরকম ৪২টি ভবনের তালিকা তৈরি করি। কিন্তু এসব ভবন ভাঙার ক্ষেত্রে আইনগত বাধা, ভবন মালিকদের অংশীদারত্ব- এমন নানা সমস্যা থাকে। এজন্য ভাঙা যায়নি। এ ভবনটি কী ধরনের সমস্যার কারণে ভাঙা হয়নি তা কাগজপত্র দেখে বলতে হবে। তবে আমরা দুএকদিনের মধ্যে ভবনটি ভেঙে ফেলার ব্যবস্থা করছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়