আশালতা : নজরুলের উত্থান-পতনময় জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য নাম

আগের সংবাদ

বর্ষায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কা চট্টগ্রাম নগরবাসীর : চসিক-চউক ব্যস্ত দোষারোপে

পরের সংবাদ

সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন : একতরফা ভোটে নিরঙ্কুশ জয় আওয়ামীপন্থিদের

প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেক : হামলা-মামলা ও বিএনপিন্থি আইনজীবীদের ভোট বর্জনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়লাভ করেছে আওয়ামীপন্থি আইনজীবী প্যানেল। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৪টি পদে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ প্যানেল বিজয়ী হয়। সভাপতি পদে সিনিয়র এডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও সাধারণ সম্পাদক পদে এডভোকেট আব্দুন নুর দুলাল পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। তবে এই নির্বাচনে অনিয়ম, ভোট চুরির অভিযোগ এনে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুন নুর দুলাল গতকাল শুক্রবার তার জয়লাভ করার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সব পদে আমরা বিজয়ী হয়েছি। বৃহস্পতিবার রাত ৩টায় আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ৩১ মার্চের পরে নতুন কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
সুপ্রিম কোর্ট বারের ২০২৩-২৪ মেয়াদের কার্যকরী কমিটির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বাদে অন্যরা হলেন- সহসভাপতি পদে মোহাম্মদ আলী আজম ও জেসমিন সুলতানা, কোষাধ্যক্ষ পদে মাসুদ আলম চৌধুরী, সহসম্পাদক পদে নুরে আলম উজ্জ্বল ও হারুনুর রশিদ। কার্যনির্বাহী সদস্য পদে মনোনীত ৭ প্রার্থী হলেন- মো. সাফায়েত হোসেন সজীব, মহিউদ্দিন রুদ্র, শফিক রায়হান শাওন, সুভাষ চন্দ্র দাস, নাজমুল হোসেন স্বপন, মো. দেলোয়ার হোসেন ও মনিরুজ্জামান রানা।
সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে ২৩ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণার পর থেকে সমিতি প্রাঙ্গণে উত্তেজনা শুরু হয়। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পাল্টাপাল্টি নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটি করেন আওয়ামী ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। পরে দুই পক্ষের সমঝোতায় গত ২ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মনসুরুল হক চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত

উপকমিটি গঠন করা হয়। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে গত সোমবার পদত্যাগ করেন মো. মনসুরুল হক চৌধুরী। সেদিন থেকে আবার উত্তেজনা চরমে ওঠে। পরবর্তী আহ্বায়ক কে হবে, এটি নিয়ে গত মঙ্গলবার (ভোটের আগের দিন) সন্ধ্যা থেকে সুপ্রিম কোর্টে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক হিসেবে মো. মনিরুজ্জামানকে মনোনীত করেন। অন্যদিকে বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীরা এ এস এম মোকতার কবির খানকে মনোনীত করেন। মনিরুজ্জামান নির্বাচনী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ব্যালট পেপারে সই করতে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সমিতির তিনতলার সম্মেলনকক্ষে যান। এতে আপত্তি জানান বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। তারা কিছু ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেন। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল ও হট্টগোল হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। উত্তপ্ত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে পরদিন বুধবার সকাল থেকেই সমিতি ভবন ও প্রাঙ্গণে বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি ছিল। দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনের সামনে হাতাহাতি ও হট্টগোল হয়। ভোটের প্রথমদিন (বুধবার) সাংবাদিকদের উপর হামলা করে পুলিশ। পুলিশ বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের ভোট কেন্দ্রে থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। এ অবস্থায় ভোট বর্জন করেন তারা। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ভোটকেন্দ্রের সামনে চেয়ার ভাঙচুর ও প্যান্ডেল ছিড়ে ফেলেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। পরে আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ব্যালট পেপার চুরি ও ছিঁড়ে ফেলা এবং নির্বাচন সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র বাইরে ফেলে দেয়ার অভিযোগে শাহবাগ থানায় মামলা করেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান। মামলায় বিএনপিপন্থী আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কুদ্দুসসহ ১২ জন আইনজীবীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০০ জনকে আসামি করা হয়।
এই ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্রশাসনিক কর্মকর্তা রবিউল হাসানের করা আরেকটি মামলায় সালাহ উদ্দিন রিগ্যান নামে এক আইনজীবীর একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আহমেদের আদালত শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন।
এদিকে ভোটের দ্বিতীয় দিন (বৃহস্পতিবার) সকালে বিএনপিপন্থি অনেক আইনজীবীর চেম্বারে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। এই উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে একতরফাভাবে সুপ্রিম বারের ভোট গ্রহণ শেষ হয়। ভোট গ্রহণ শেষে নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত উপকমিটির সদস্য আসাদুজ্জামান মনির বলেছিলেন, এবারের নির্বাচনে ৮ হাজার ৬০২ জন ভোটারের মধ্যে দুদিনে ৪ হাজার ১৩৭ ভোট পড়েছে।
ভোট বর্জনের আগ পর্যন্ত এবার নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের সভাপতি পদে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রার্থী ছিলেন। অন্য প্রার্থীরা হলেন- সহসভাপতি পদে এডভোকেট হুমায়ুন কবির মঞ্জু ও সরকার তাহমিনা সন্ধ্যা, সহসম্পাদক পদে ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন ও এডভোকেট মো. আব্দুল করিম এবং কোষাধ্যক্ষ পদে রেজাউল করিম। কার্যনির্বাহী সদস্য পদে এডভোকেট আশিকুজ্জামান নজরুল, ফাতিমা আক্তার, ফজলে এলাহি অভি, ব্যারিস্টার ফয়সাল দস্তগীর, এডভোকেট শফিকুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান আহাদ ও রাসেল আহমেদ প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে অনিয়ম, ভোট চুরির অভিযোগ করে গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে লক্ষ করেছি যে দেশের অন্য সব নির্বাচনের মতো সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সমিতির নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক চরিত্রের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আইনগতভাবে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলেও নির্বাচনের নাটক সাজিয়ে একতরফাভাবে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের অবৈধভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। এ সময় তিনি পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়