আশালতা : নজরুলের উত্থান-পতনময় জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য নাম

আগের সংবাদ

বর্ষায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কা চট্টগ্রাম নগরবাসীর : চসিক-চউক ব্যস্ত দোষারোপে

পরের সংবাদ

সরকারি টাকায় ৩০০ জনের কক্সবাজারে প্রমোদভ্রমণ!

প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গাইবান্ধা প্রতিনিধি : উপজেলা রেজিস্ট্রি অফিসে স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর বা দলিলের সময় ইউনিয়ন পরিষদের কোষাগারে জমা রাখা এক শতাংশ (১%) টাকা সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় না করে কক্সবাজারে প্রমোদভ্রমণের অভিযোগ উঠেছে। এ ভ্রমণে পরিবারসহ অংশ নেন ইউএনও, চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যসহ অন্তত ৩০০ জন। উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা ও পরিষদের সব সদস্য পাঁচদিনব্যাপী এ ভ্রমণের আয়োজন করেন। ব্যয় মেটানো হয় স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর বা জমি রেজিস্ট্রির ইউনিয়ন পরিষদের এক শতাংশ (১%) টাকা উত্তোলন করে। ঘটনাটি ঘটেছে গাইবান্ধা জেলার অন্যতম গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে আলোচনার ঝড় উঠেছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক অলিউর রহমান বলেন, এক শতাংশের টাকায় ভ্রমণের কোনো বিধান নেই। এই টাকা ইউনিয়ন পরিষদের কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে ব্যয় করতে হবে। ওই টাকা দিয়ে প্রমোদ ভ্রমণ হয়ে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদের কক্সবাজার ভ্রমণ সূচিতে জানা যায়, গত ১ মার্চ দুপুর আড়াইটায় গোবিন্দগঞ্জ থেকে বাসযোগে যাত্রা শুরু হয়। ভ্রমণ শেষে ৬ মার্চ সকাল ১০টায় কক্সবাজার থেকে গোবিন্দগঞ্জে ফেরেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভ্রমণকারীরা জানান, ইউএনওসহ উপজেলা পর্যায়ের ১৩ জন কর্মকর্তা, অনেক কর্মচারী ও ১১ জন ইউপি চেয়ারম্যান ও তাদের পরিবারসহ প্রায় ৩০০ জন প্রমোদ ভ্রমণে অংশ নেন। পরিষদের আমন্ত্রণে কক্সবাজারে ভ্রমণে অতিথি ছিলেন গোবিন্দগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান। রিজার্ভ করা ছয়টি যাত্রীবাহী চেয়ারকোচে প্রায় ২৫০ জন এবং বাকি ভিভিআইপিরা বিমানযোগে কক্সবাজার যাতায়াত করেন। এ ছাড়া একটি ট্রাক ভাড়া করা হয়। সেখানে ছিলেন প্রায় আটজন বাবুর্চি, ১০টি খাসি ও রান্নার অন্য মালামাল।
তবে উপজেলার চারজন ইউপি চেয়ারম্যান ও আটজন কর্মকর্তা জানান, এ ভ্রমণে ১২ জন উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা প্রায় ৬০ হাজার টাকা চাঁদা দেন। এ ছাড়া আর কারো কাছ থেকে কোনো চাঁদা নেয়া হয়নি। উপজেলার মোট ১৭ ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর বা জমি রেজিস্ট্রি করের ইউনিয়ন পরিষদ অংশের এক শতাংশের ১৭ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে। কোনো কোনো চেয়ারম্যানের কাছ থেকে বেশি টাকা নেয়া হয়েছে। কিন্তু ৩০০ জনের পাঁচদিনব্যাপী যাতায়াত, থাকা-খাওয়া মিলে মোট আনুমানিক ২৮ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদ অংশের এক শতাংশের টাকা প্রদানের কথা স্বীকার করেছেন। কক্সবাজার ভ্রমণকরা একজন ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, এক শতাংশ থেকে আমি দেড় লাখ টাকা তুলেছি। এরমধ্যে এক লাখ টাকা ভ্রমণের জন্য দিয়েছি। বাকি টাকার উন্নয়ন কাজ করব। টাকা সমন্বয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, মাটির কাজ তো, সমন্বয় করে নেব। আরেক চেয়ারম্যান বলেন, আমি কক্সবাজার যাইনি। পরিবার নিয়ে মেম্বররা গেছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা চাপ দিয়ে আমার কাছ থেকে ওই ফান্ডের এক লাখ টাকা নেন। একই মন্তব্য করলেন আরেক ইউপি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, কক্সবাজার যাইনি। তারপরও আমাকে এক শতাংশের এক লাখ টাকা দিতে হয়েছে। উপজেলা পরিষদের অধীনে কাজ করতে হয়। টাকা না দিয়ে উপায় নেই। এভাবে ১৭টি ইউনিয়নের প্রত্যেক চেয়ারম্যানের কাছ থেকে এক শতাংশের টাকা নেয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন ইউপি সচিব বলেন, ২ লাখ টাকার চেক পাওয়া গেছে। সেটা ক্যাশ করে সেদিনই উপজেলায় দিয়ে আসা হয়েছে। কোনো প্রকল্প নেয়া হয়নি।
এদিকে ঘটনাটি উপজেলার সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সচেতন নাগরিক মহল বলছেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে কৃচ্ছতাসাধনের কথা বলছেন, সেখানে সরকারি টাকায় কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে প্রমোদভ্রমণ করা দুর্নীতির সামিল।
গোবিন্দগঞ্জ নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মতিন মোল্লা বলেন, পাঁচদিনের এ ভ্রমণে যে এক শতাংশ টাকা ব্যয় হয়েছে, সেটা স্থানীয়ভাবে আলোচনার ঝড় তুলেছে। সবার মধ্যে ক্ষোভ আছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফ হোসেন মুঠোফোনে সাংবাদিকদের কাছে কক্সবাজার ভ্রমণের কথা স্বীকার করেন। কার টাকায় কক্সবাজার গেছেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সবাই তার নিজ টাকা দিয়ে গেছেন। স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর বা জমি রেজিস্ট্রি করের এক শতাংশের টাকা দিয়ে ভ্রমণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। আমরা তাদের বরাদ্দ দেই। তারা কাজ করবে, আমরা কাজ দেখব। তারা নিজের টাকায় না কোন টাকায় পিকনিকে গেছে, সেখানে আমার কিছু বলার কিছু নেই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়