আশালতা : নজরুলের উত্থান-পতনময় জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য নাম

আগের সংবাদ

বর্ষায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কা চট্টগ্রাম নগরবাসীর : চসিক-চউক ব্যস্ত দোষারোপে

পরের সংবাদ

খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ ডুমুরিয়া

প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া খুলনা থেকে : একসময় দেশে লোকসংখ্যা কম ছিল, আবাদি জমির পরিমাণ ছিল বেশি। সে সময় অনেক মানুষ পেটপুরে খেতে পায়নি, আবার অনাহারেও থাকতে হয়েছে। কারণ উৎপাদন ছিল খুবই কম। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখানো পথে বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের প্রচেষ্টায় আবাদি জমির পরিমাণ কমে গেলেও দেশের বর্ধিত জনসংখ্যার কেউ না খেয়ে থাকে না। দেশ আজ খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এরই ধারাবাহিকতায় খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা।
এখন সময় এসেছে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের অর্থায়নে ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিস গড়ে তুলেছে আটলিয়া আইপিএম মডেল ইউনিয়ন। আইপিএম মডেল ইউনিয়ন গঠনের উদ্দেশ্য- উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে আটলিয়া ইউনিয়নকে নিরাপদ সবজি উৎপাদনে আদর্শ ইউনিয়ন হিসেবে পরিচিত করা।
যেখানে আটলিয়া ইউনিয়নে ৩টি ব্লকে দল গঠন ও পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে ২৫ জন করে মোট ৫০০ জন কৃষকের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে নিরাপদ সবজি উৎপাদন গ্রুপ। প্রতিটি গ্রুপে রয়েছে ৫০০ শতক করে জমি।
গ্রুপভুক্ত কৃষকদের দেয়া হচ্ছে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকদের নিরাপদ সবজি উৎপাদনের গুরুত্ব, সবজি উৎপাদনে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহারসহ ধাপে ধাপে মাঠ পর্যায়ে সমস্যা ও সমাধানে আলোচনা করা হচ্ছে।
গত রবি মৌসুমে ইউনিয়নের বরাতিয়া, চুকনগর ও আটলিয়া ব্লকে মানসম্মত বীজ, জৈব সার, ফেরোমন ফাঁদ, হলুদ আঠালো ফাঁদ, নীল আঠালো ফাঁদ, জৈব বালাইনাশক ব্যবহারসহ অন্যান্য পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ২০টি কৃষক গ্রুপের ১০০ একর জমিতে উৎপন্ন করা হয়েছে নিরাপদ সবজি। এসব সবজির মধ্যে ছিল ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, টমেটো, শিমসহ আরো অনেক সবজি, যাতে কীটনাশকের যত্রতত্র ব্যবহার কমিয়ে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য উপযোগী করে সবজি উৎপাদন করা হয়েছে। কীটনাশক ব্যবহার করা হয়েছে ওসমানী পদ্ধতিতে অর্থাৎ সবজি উৎপাদনে সঠিক ওষুধ, সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায় এবং সঠিক নিয়মে কীটনাশক কৃষকেরা ব্যবহার করেছে। সেক্ষেত্রে একদিকে যেমন কৃষকরা উৎপাদন করেছে নিরাপদ সবজি অন্যদিকে দামটাও পেয়েছে একটু বেশি।
বর্তমান খরিপ-১/২০২২-২৩ মৌসুমেও আটলিয়া ইউনিয়নের ওই একই গ্রুপে নিরাপদ সবজি উৎপাদনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যেখানে মানসম্মত বীজ, জৈব সার, ফেরোমন ফাঁদ, হলুদ আঠালো ফাঁদ, নীল আঠালো ফাঁদ, জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের পাশাপাশি সবজি উৎপাদনে ব্যবহার হচ্ছে পলিমালচ ও নেট হাউস।
প্রথমদিকে কৃষকরা পলিমালচ ব্যবহারে একটু অনাগ্রহী হলেও পরবর্তীতে সাধারণভাবে সবজি চাষ ও পলিমালচ ব্যবহার করে সবজি চাষের চাক্ষুষ পার্থক্য অবলোকন করেছে। পাশাপাশি নেট হাউসের মধ্যে সবজিগুলোর একদিকে যেমন পোকামাকড়ের উপস্থিতি নেই বললেই চলে অন্যদিকে গাছের বৃদ্ধি লক্ষণীয়।
ইতোমধ্যে মো. সালাহ উদ্দিন সরদার, প্রকল্প পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা; মো. ফরিদুল হাসান, অতিরিক্ত পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খুলনা অঞ্চল, খুলনা; কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন, উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, খুলনাসহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আটলিয়া আইপিএম মডেল ইউনিয়নের কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন এবং সুষ্ঠু কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মো. ইনসাদ ইবনে আমিন ভোরের কাগজকে বলেন, ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে আমরা আটলিয়া ইউনিয়নকে নিরাপদ সবজি উৎপাদনে মডেল বানানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। যেখানে নিরাপদ সবজি উৎপাদনের কলাকৌশলগুলো সুন্দরভাবে গ্রুপভুক্ত কৃষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে অবহিত করা হচ্ছে।
আর এ কার্যক্রমে অর্থায়ন করছে পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্প। ইতোমধ্যে আমরা গত রবি মৌসুমে ১০০ একর জমিতে নিরাপদভাবে সবজি উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমান খরিপ-১ মৌসুমেও পরিবেশবান্ধব কৌশল কাজে লাগিয়ে সবজি উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এর মধ্যে টমেটো, শিম, বরবটি, পটোল, শসা, বেগুনসহ রয়েছে আরো অনেক সবজি। উৎপাদিত সবজিগুলো একদিকে যেমন খেতে সুস্বাদু অন্যদিকে শরীরের জন্য নিরাপদ। আগামীতে শুধু একটি ইউনিয়ন নয় বরং সমগ্র উপজেলায় নিরাপদ সবজি উৎপাদনে আমি ও আমার টিম বদ্ধপরিকর।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়