শেয়ারট্রিপ : অনলাইনে তারিখ পরিবর্তন ও রিফান্ড সেবা চালু

আগের সংবাদ

চিকিৎসা ব্যয়ে পিষ্ট রোগীরা : চিকিৎসায় রোগীর নিজস্ব ব্যয় প্রায় ৭০ শতাংশ, সবচেয়ে বেশি ব্যয় ওষুধ কিনতে- ৬৫ শতাংশ

পরের সংবাদ

হামলা-মামলায় শেষ সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন

প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : নজিরবিহীনভাবে আওয়ামীপন্থি ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের হট্টগোল, ধাক্কাধাক্কি ও মামলায় শেষ হলো সুপ্রিম কোর্ট বারের দুই দিনব্যাপী নির্বাচন। বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে দৃশ্যত একতরফা এই নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৪ হাজার ১৩৭টি, যা মোট ভোট সংখ্যার অর্ধেক। গত বুধবার প্রথমদিন সকাল ১০টায় ভোট শুরুর কথা থাকলেও উভয়পক্ষের আইনজীবীদের ধাক্কাধাক্কি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায়

এবং সঠিক সময়ে ভোটগ্রহণ শুরু হয়নি। পরবর্তীতে বিএনপিপন্থি আইনজীবী ও সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের পর বেলা ১২টায় ভোট শুরু হয়। উত্তেজনার রেশ গতকাল বৃহস্পতিবারও বিরাজ করেছিল। সরজমিন দেখা যায়, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। নির্বাচনের দ্বিতীয় দিনেও দেশের সর্বোচ্চ আদালতপ্রাঙ্গণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাড়ে পাঁচশর বেশি সদস্য অবস্থান নিয়েছেন। দ্বিতীয় দিনের ভোট সকাল ১০টার পর শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের ভোটকেন্দ্রে দুই দলের আইনজীবীরা এসে জড়ো হন। সুপ্রিম কোর্ট বারের মূল ফটকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা জোরে জোরে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।
আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ব্যালট পেপার চুরি ও ছিঁড়ে ফেলা এবং নির্বাচনসংক্রান্ত আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র বাইরে ফেলে দেয়ার অভিযোগে শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান। মামলায় বিএনপিপন্থি আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কুদ্দুসসহ ১২ জন আইনজীবীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্রশাসনিক কর্মকর্তা রবিউল হাসানের করা আরেকটি মামলায় সালাহ উদ্দিন রিগ্যান নামে এক আইনজীবীর একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আহমেদের আদালত শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন। এদিকে গতকাল সকালে বিএনপিপন্থি অনেক আইনজীবীর চেম্বারে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। সকালে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আট সদস্যের আপিল বিভাগে ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, আদালতপ্রাঙ্গণে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। আজ (বৃহস্পতিবার) কক্ষে তালা লাগানো আছে, অনেকের রুমের চারপাশে পুলিশ দেয়া হয়েছে। বাইরে থেকে এ ঘটনার পেছনে কেউ আছে কিনা তা দেখতে হবে। এই অঙ্গনে এটা কি অনুমোদিত? তারা সমিতির জ্যেষ্ঠ সদস্যদেরও নির্যাতন করেছে। আমরা সুরক্ষা চাচ্ছি। সমিতির নির্বাচনে বিএনপি প্যানেল থেকে সম্পাদক প্রার্থী মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, সমিতির নির্বাচন হয় সবসময় উৎসবমুখর। তবে এবার কী হলো? আজও আমি রুমে ঢুকতে পারিনি। রুমের বাইরে থেকে তালা লাগানো। কক্ষের সামনে পুলিশ রয়েছে। হাজার হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অনেক আইনজীবী আহত হয়েছে। পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। গতকালের ঘটনা দেখেছেন- পুলিশ কীভাবে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বের করে দিয়েছে। আমরা কী অপরাধ করেছি? আমি প্রার্থী- আমি কেন ভোটকেন্দ্রে থাকতে পারব না?
নির্বাচনে প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে ঘায়েল করতে মামলা করা হয় উল্লেখ করে রুহুল কুদ্দুস বলেন, এরপর রাতে মো. মনিরুজ্জামান (নির্বাচন উপকমিটির আহ্বায়ক) সাহেব বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। আমাকে ও সভাপতি প্রার্থীসহ অনেককে আসামি করা হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় আরেকটি মামলা করেছে সমিতির প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে দিয়ে। সেখানে সমিতির বর্তমান কমিটির ৬ জন সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।
সমিতির সভাপতি পদপ্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, নজিরবিহীন ঘটনা। ভোটকেন্দ্রে ৩-৪শ পুলিশ ঢুকে ধাক্কা দিতে থাকে। সবাই পড়ে যাচ্ছিল আর পুলিশ পা দিয়ে মাড়িয়েছে। আমার পায়ে ব্যথা আমি ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছি না। অনেক আইনজীবী এবং সাংবাদিকদের আহত করা হয়েছে। এ সময় প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী তার খাস কামরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকে যেতে বলেন।
সুপ্রিম কোর্টের বার নির্বাচন ঘিরে বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আলাপ করেন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলাপ হয়। পরে তিনি এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, বার নির্বাচন ঘিরে চলমান অস্থিরতার সমাধানে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতি কাছে যান। তখন প্রধান বিচারপতি এ সময় আমার সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপের কথা বলেন। প্রধান বিচারপতিকে উদ্ধৃতি করে তিনি বলেন, বার একটি প্রাইভেট সংগঠন। এটি বারের বিষয়। প্রধান বিচারপতির কিছু করার নেই। এটা আদালতের বিষয় না। আদালতের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। বারে বিজ্ঞ, সিনিয়র আইনজীবীরা আছেন। বারের পরিবেশ যেন সুষ্ঠু থাকে সেভাবে সিদ্ধান্ত নিতে বলেন প্রধান বিচারপতি।
অনুমতি ছাড়া সুপ্রিম কোর্টপ্রাঙ্গণে পুলিশের অবস্থান নিয়ে আইনজীবী মহলে প্রশ্ন ওঠে। বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ২০০৬ সালে পুলিশ বারের ভেতর ঢুকে আমাদের বেধড়কভাবে পিটিয়েছিল। কোনো কারণ ছাড়াই পেটানো হয়েছিল। বারের সামনে রাস্তায় ফেলে পেটানো হয়েছিল। তবে এবার আদালতে পুলিশ আবস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বার থেকে চিঠি দিয়ে পুলিশ আনা হয়েছে। তবে নির্বাচনে সাংবাদিকের ওপর পুলিশি হামলার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক বলে মনে করেন তিনি।
গতকাল ভোটগ্রহণ শেষে কথা হয় নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত উপকমিটির সদস্য আসাদুজ্জামান মনিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, সকাল ১০টার পর থেকে শুরু করে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভোট চলে। এবারের নির্বাচনে ৮ হাজার ৬০২ জন ভোটারের মধ্যে দুদিন ৪ হাজার ১৩৭ ভোট পড়েছে।
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে কাযর্করী কমিটির সভাপতি পদে একটি, সহসভাপতি পদে দুটি, সম্পাদক পদে একটি, কোষাধ্যক্ষ পদে একটি, সহসম্পাদক পদে দুটি এবং কার্যকরী কমিটির সদস্য পদে ৭টি পদসহ সর্বমোট ১৪টি পদে নির্বাচন হচ্ছে। বর্তমানে সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪টি পদের মধ্যে বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদকসহ ৭টি পদে আছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা। সহসম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষসহ অপর ৭টি পদে আছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়