শেয়ারট্রিপ : অনলাইনে তারিখ পরিবর্তন ও রিফান্ড সেবা চালু

আগের সংবাদ

চিকিৎসা ব্যয়ে পিষ্ট রোগীরা : চিকিৎসায় রোগীর নিজস্ব ব্যয় প্রায় ৭০ শতাংশ, সবচেয়ে বেশি ব্যয় ওষুধ কিনতে- ৬৫ শতাংশ

পরের সংবাদ

মডেল মসজিদ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী : রোজায় নিত্যপণ্যের সংকট সৃষ্টি করা গর্হিত কাজ

প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : পবিত্র রমজানে নিত্যপণ্যের সংকট সৃষ্টির অপচেষ্টা অত্যন্ত ‘গর্হিত কাজ’ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসবের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, কেউ যেন খাদ্যে ভেজাল না দিতে পারে, মজুতদারি বা কালোবাজারি নিত্যপণ্যের সংকট সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার তৃতীয় ধাপে দেশব্যাপী আরো ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, ধর্ম সচিব কাজী এনামুল হাসান। সারাদেশে ৫৬৪টি মসজিদের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রমজানে কিছু ব্যবসায়ী জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেয়। এটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। রমজান কৃচ্ছ্রতা সাধনের সময়। মানুষ যাতে ভালোভাবে ধর্মকর্ম ও রোজা পালন করতে পারে সেদিকেই দৃষ্টি দেয়া উচিত। ঠিক সেই সময় জিনিসের দাম বাড়িয়ে মানুষকে বিপদে ফেলার মানে হয় না। আমি সম্মানিত ইমাম, মুয়াজ্জিম আর খাদেমদের অনুরোধ করব, আপনারা জুম্মার নামাজের খুতবায় এই কালোবাজারি, মজুতদারি বা খাদ্যে ভেজাল দিয়ে মানুষকে কষ্ট দেয়ার গর্হিত কাজ সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করবেন। তাহলে মানুষের মধ্যে অতিরিক্ত মুনাফা নেয়ার প্রবণতা নিশ্চয়ই কমবে।
নি¤œআয়ের মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, সেজন্য পারিবারিক কার্ড চালুর কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা অধিক দামে চাল কিনে ৩০ টাকা মূল্যে বিভিন্ন পরিবারকে দিচ্ছি। রোজায় আরো এক কোটি মানুষকে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল দেব। একেবারেই কর্মক্ষমতাহীনদের বিনাপয়সায় আমরা ৩০ কেজি করে চাল দিচ্ছি।
তিনি বলেন, এদেশের একটি মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। আমরা বিনামূল্যে ঘরবাড়ি ও জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। কৃষিতে ভর্তুকি দিচ্ছি। শ্রমিকদের কল্যাণে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছি। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছি। বিদেশগামীদের জন্য প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকে বিনা জামানতে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করেছি। কেউ দালালের খপ্পরে পড়ে বিদেশে গিয়ে শেষে ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরবে, এটা আমরা চাই না। তাই সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৪ বছরে আমরা ইসলামের খেদমতে বহু পদক্ষেপ নিয়েছি। ২০১৩ সালে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির স্বীকৃতি দিয়েছি। আরবি, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় পবিত্র কুরআনের ডিজিটাল ভার্সন তৈরি করেছি। বিশ্বের সব প্রান্তের মানুষ ইন্টারনেটের মাধ্যমে এ তিনটি ভাষায় পবিত্র কুরআন পড়া ও শোনার সুযোগ পাচ্ছেন। আমরা জাতীয় শিক্ষা নীতিতে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা এবং মসজিদভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমকে জাতীয় শিক্ষানীতির অন্তর্ভুক্ত করেছি।
তিনি বলেন, ৩১২৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫ বছর মেয়াদি মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের ৭ম পর্যায় আমরা অনুমোদন দিয়েছি। এ প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ২১ লাখ

৫১ হাজার শিক্ষার্থীকে প্রাক-প্রাথমিক, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। প্রকল্পে ৭৫

হাজার ৮৮৩ জন আলেমের সম্মানির ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদ্রাসা স্থাপন ও পরিচালনা’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন করেছি। এ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ১ হাজার ১০টি দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বার্ধক্য ও অসহায় ইমাম-মুয়াজ্জিনদের কল্যাণে আমরা ‘ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট’ গঠন করেছি। এখান থেকে দুস্থ ইমাম-মুয়াজ্জিনদের এককালীন আর্থিক সাহায্য ও সুদমুক্ত ঋণ আমরা দিচ্ছি। করোনাকালে দেশের মসজিদগুলোর আয় কমে যাওয়ায় প্রায় আড়াই লাখ মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনের অনুকূলে ৫ হাজার টাকা হারে ১২২ কোটি ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছি। প্রায় ১৪ হাজার কওমি মাদ্রাসায় ৮ কোটি ৬৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ইসলামের খেদমতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা, বিশ্ব ইজতেমা বাংলাদেশে আয়োজন ও এজন্য জায়গা দিয়েছেন। কাকরাইল মসজিদের জায়গা তিনি দিয়েছেন। কম খরচে হজ পালনের জন্য হিযবুল বাহার জাহাজ কিনেছেন। রেডিও টিভিতে অধিবেশনের শুরু ও সমাপ্তিকে কুরআন তিলাওয়াতের ব্যবস্থাও তিনি নিয়েছিলেন।
‘৭০’র নির্বাচনের আগে বঙ্গবন্ধু যে ঐতিহাসিক বেতার ভাষণ দিয়েছিলেন তার চুম্বকাংশ উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইনসাফের ইসলামে বিশ্বাসী। আমাদের ইসলাম হযরত নবী করীম (সা.) এর ইসলাম, যে ইসলাম জগৎবাসীকে শিক্ষা দিয়েছে ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র।’ আমাদের সরকারের এটাই প্রচেষ্টা সারাদেশে ইসলাম ধর্মকে নিয়ে কেউ যেন বাড়াবাড়ি করতে না পারে। সত্যিকারের ইসলামিক শিক্ষা মানুষ যেন পেতে পারে। যা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ও আমাদের নবী করিম (সা.) বলেছেন। আর এদেশের মানুষ যাতে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকের পথে না যায়, সেজন্য ধর্ম সম্পর্কে আরো বেশি প্রচার ও প্রসারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ সমান অধিকার ভোগ করবে। যার যার ধর্ম সে সে পালন করবেন। কেননা শেষ বিচার আল্লাহ রাব্বুল আলামিন করবেন। বিচারের ভার আল্লাহ মানুষকে দেননি। কেউ এই ধর্ম পালন করে না বলে তাকে খুন করে ফেলা ইসলামের শিক্ষা নয়। এটা আমি যেমন বিশ্বাস করি তেমনি যারা আল্লাহতে বিশ্বাস করেন এবং নবী করিম (সা.) এর নির্দেশ মানেন তারাও বিশ্বাস করবেন। আর এই খুন-খারাবি করতে গিয়ে বিশ্বের কোনো কোনো জায়গায় আজকে ধর্মকেই অসম্মান করা হচ্ছে। দুর্নাম দেয়া হচ্ছে, সবচেয়ে শান্তির ধর্মের নামে কুৎসা দেয়া হচ্ছে কিছু লোকের জন্য। যেটা আমাদের জন্য দুঃখজনক। যার যার দ্বীনি বিশ্বাস সে সে পালন করবে মর্মে তিনি পবিত্র কুরআনের নির্দেশ ‘লাকুম দিনুকুম ওয়ালিয়াদিন’ উল্লেখ করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়