শেয়ারট্রিপ : অনলাইনে তারিখ পরিবর্তন ও রিফান্ড সেবা চালু

আগের সংবাদ

চিকিৎসা ব্যয়ে পিষ্ট রোগীরা : চিকিৎসায় রোগীর নিজস্ব ব্যয় প্রায় ৭০ শতাংশ, সবচেয়ে বেশি ব্যয় ওষুধ কিনতে- ৬৫ শতাংশ

পরের সংবাদ

বঙ্গবন্ধুর সোনার মানুষ অন্বেষণ

প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

২০২৩ সালের ১৭ মার্চে এসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন এবং একইদিন জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার জন্য ‘সোনার মানুষ’ অন্বেষণ করতে হচ্ছে আমাদের। জাতির পিতার জন্মদিনে জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এ রকম দিন এখনকার প্রজন্মের জীবনে সত্যিই অভিনব। তাছাড়া ১৯৯৭ সাল থেকে জাতীয় শিশু দিবস পালন করা শুরু হলেও বঙ্গবন্ধুকে নিবিড়ভাবে জানার সুযোগ এ প্রজন্মের হয়েছে গত ১৪ বছরে। তারা জেনেছে, স্বাধীনতার আগে থেকেই বঙ্গবন্ধু শিশুদের ভালোবাসতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যতে দেশ গড়ার নেতৃত্ব দিতে হবে আজকের শিশুদেরই। তাই শিশুরা যেন সৃজনশীল মুক্তমনের মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে তিনি সব সময়ই তা প্রত্যাশা করতেন। তিনি যে সোনার মানুষ খুঁজেছেন তা এই শিশুদের সুষ্ঠু বিকাশের মধ্য দিয়ে তৈরি করা সম্ভব বলে আমরা মনে করি।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন মাটির মানুষ ও সাধারণ মানুষের নেতা। এজন্য তার সহজ-সরল আচরণ শত্রæ-মিত্র সবাইকে আকৃষ্ট করত। মানুষের কল্যাণের জন্য নিবেদিত ছিলেন তিনি আজীবন। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর জন্মদিন জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়। কারণ তিনিও শিশুদের ভালোবাসতেন। বিশ্বের সব মহামানব শিশুবান্ধব ছিলেন, শিশুদের প্রিয় ছিলেন। মহান নেতা হয়েও, রাজনৈতিক কাজে ব্যস্ততা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু কখনো তার শিশুপুত্র রাসেলকে আদর করতে ভোলেননি। কোথাও যেতে তিনি রাসেলকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন। শিশু রাসেলও তাকে খুব ভালোবাসতো। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তার ‘আমাদের ছোট্ট রাসেল সোনা’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘রাসেল আব্বাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করতো। আব্বাকে মোটেই ছাড়তে চাইতো না।’ তিনি আরো লিখেছেন, ‘রাসেলের সব থেকে আনন্দের দিন এলো যেদিন আব্বা ফিরে এলেন। এক মুহূর্ত যেন আব্বাকে কাছ ছাড়া করতে চাইতো না। সব সময় আব্বার পাশে ঘুরে বেড়াতো।’ শিশুরা সুন্দর স্বপ্ন দিয়ে তাদের নিজস্ব জগৎ নির্মাণ করে। বঙ্গবন্ধুও তার রাজনৈতিক জীবন স্বপ্ন দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন। লালিত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করেছিলেন। শিশুদের সার্বিক কল্যাণের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে শিশু আইন প্রণয়ন করেন। পরবর্তীকালে তারই আলোকে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, শিশু হাসপাতাল ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠিত হয়। এছাড়া শিশুদের জন্য আরো নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
বঙ্গবন্ধু ১৯৭২-এর মার্চ মাসে রাষ্ট্রীয় সফরে সোভিয়েত ইউনিয়ন গিয়েছিলেন। সে সময় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের পরামর্শে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা, পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারের অত্যাচারের দৃশ্য নিয়ে ৫ থেকে ১২ বছরের ১৫-১৬ জন শিশুর আঁকা ছবি সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট ব্রেজনেভকে উপহার হিসেবে দেয়ার জন্য গণভবন ‘সুগন্ধা’য় উপস্থিত হন। সঙ্গে ছিলেন ড. আবদুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দীন ও লুৎফুল হায়দার চৌধুরী। শিশুদের আঁকা ছবিগুলো বঙ্গবন্ধুর হাতে তুলে দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু ছবি দেখে মুগ্ধ হয়ে বলেন, আমার দেশের শিশুরা এমন নিখুঁত ছবি আঁকতে পারে, এসব না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। তিনি আরো বলেছিলেন, ‘আজকের কর্মব্যস্ত সারাটা দিনের মধ্যে এই একটুখানি সময়ের জন্য আমি শান্তি পেলাম। শিশুদের সান্নিধ্য আমাকে সব অবসাদ থেকে মুক্তি দিয়েছে।’ বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘শিশু হও, শিশুর মতো হও। শিশুর মতো হাসতে শেখো। দুনিয়ার ভালোবাসা পাবে।’ সোনার মানুষ ঠিক এ রকমই চেয়েছিলেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়ন করেন। সংবিধানের ২৮(৪) অনুচ্ছেদে শিশুদের অগ্রগতির বিশেষ বিধান প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে এবং রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে শিশুদের জন্য অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাসহ মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা, সুযোগের সমতা, অধিকার ও কর্তব্য এবং জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শিশু উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষাকে করেন বাধ্যতামূলক। ১৯৭৩ সালে ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে করা হয় জাতীয়করণ। শিশুদের সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭৪-এর ২২ জুন শিশু আইন প্রণয়ন করেন। এর ১৫ বছর পর জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ তৈরি করে। বাংলাদেশ ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ ঘোষিত শিশু অধিকার সনদের অন্যতম অনুস্বাক্ষরকারী দেশ। গ্রহণ করা হয়েছে জাতীয় শিশু নীতি ২০১১, জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি ২০১০। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত শিশু নীতিকে আরো যুগোপযোগী করতে ঘোষিত হয় শিশু আইন ২০১৩। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ প্রণয়ন করা হয়। পথশিশু, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশু, বিদ্যালয় থেকে ঝরেপড়া ও প্রতিবন্ধী শিশুদের কল্যাণে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। পরিত্যক্ত শিশুদের সেবা ও ভাতা প্রদান, পথশিশুদের পুনর্বাসনসহ তাদের জীবনমান উন্নত করতে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। শিশু শিক্ষা ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে স্কুল টিফিন, শিশুর জন্য নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করতে গ্রহণ করা হয়েছে বিভিন্ন কার্যক্রম। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে বই বিতরণের মধ্য দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে করা হয়েছে জনকল্যাণমুখী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা নামক মহাকাব্যের ‘মহাকবি’, তিনি বিশ্ব মিডিয়ার দৃষ্টিতে ‘পোয়েট অব পলিটিক্স’। তার ছিল দুর্নিবার গ্রন্থপ্রীতি। তিনি ছিলেন সচেতন পাঠক। মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু, উইনস্টন চার্চিল, আব্রাহাম লিংকন, নেলসন ম্যান্ডেলা, জন এফ কেনেডি, ফিদেল ক্যাস্ত্রো প্রমুখ রাজনৈতিক নেতার মতো যখনই অবসর পেতেন তখনই তিনি বইয়ের বিচিত্র জগতে হারিয়ে যেতেন। বঙ্গবন্ধু যে প্রচুর শিল্প-সাহিত্যের বই পড়তেন তা তার ভাষণ, বক্তৃতা, চিঠিপত্র আর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ এবং ‘আমার দেখা নয়াচীন’ থেকেই প্রমাণ পাওয়া যায়।
বঙ্গবন্ধু একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে কেবল সাধারণ মানুষ কিংবা কৃষক-শ্রমিকদের সুখ-দুঃখের সঙ্গী ছিলেন না তিনি ছিলেন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রতিনিধি। স্বাভাবিকভাবে স্বীয় শ্রেণির শিল্পী-সাহিত্যিকদের প্রতি তার আগ্রহ ছিল। তাছাড়া পূর্বেই বলা হয়েছে তিনি সাহিত্যের একজন অনুরাগী পাঠক ছিলেন। ১৯৭০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি বলেন- ‘শিল্পী, কবি ও সাহিত্যিকবৃন্দের সৃষ্টিশীল বিকাশের যে কোনো অন্তরায় আমি এবং আমার দল প্রতিহত করবে।’ (আতিউর রহমান, ‘বাঙালি সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক বঙ্গবন্ধু’) ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের বিজয় অর্জনের পরপরই বঙ্গবন্ধু কাজী নজরুল ইসলামকে অনুরোধ করে ঢাকায় নেন। ১৯৭২ সালের ২৫ মে ঢাকায় কবির বাসায় যাবার সময় ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর থেকে বের হয়ে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা আবৃত্তি করতে করতে পথ হেঁটেছেন বঙ্গবন্ধু। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র সূত্র অনুযায়ী আব্বাসউদ্দিনের ভাটিয়ালি গান শুনে মুগ্ধ হয়েছেন তিনি। এই কণ্ঠশিল্পীর বাংলা ভাষা রক্ষার আকুতিতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সংগ্রামে অবদান রাখেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী হয়েও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে ‘স্যার’ সম্বোধন করতেন। প্রত্যক্ষ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ১৯৭১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমি আয়োজিত অনুষ্ঠানে বলেছিলেন- ‘এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিজেদের লেখনীর মধ্যে নির্ভয়ে এগিয়ে আসুন, দুঃখী মানুষের সংগ্রাম নিয়ে সাহিত্য সৃষ্টি করুন। কেউ আপনাদের বাধা দিতে সাহস করবে না।’ (দৈনিক ইত্তেফাক ১৬/২/১৯৭১)
মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনায় তিনি সবসময়ই কাছে পেয়েছেন শিল্পী-সাহিত্যিকদের। জসীমউদ্দীন, সুফিয়া কামাল, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, হাশেম খান, সমরজিত রায় চৌধুরী প্রমুখ কবি ও চিত্রশিল্পী এবং কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়, খ্যাতনামা কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার পারিবারিক ছবি রয়েছে। ১৯৭৩ সালে ফরাসি লেখক আঁদ্রে মালরোর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। বাংলাদেশ বেতারের নিজস্ব শিল্পীদের মাঝেও তাকে দেখা গেছে। ১৯৭৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমির অনুষ্ঠানে তিনি বলেন- ‘মানবাত্মার সুদক্ষ প্রকৌশলী হচ্ছেন দেশের সুধী সাহিত্যিক, শিল্পী, শিক্ষাব্রতী, বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতিসেবী।’ সোনার মানুষ গড়ে তোলার জন্য এদের ভূমিকা ছিল মুখ্য। এজন্য তাদের প্রতি তার প্রাণের টান এত। অন্নদাশঙ্কর রায়ের স্মৃতিচারণে আছে, ১৯৭৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মন্মথ রায়কে বাম পাশে ও তাকে দক্ষিণ পাশে বসিয়ে সেদিন নানা অন্তরঙ্গ কথা বলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি অসুস্থ কবি হুমায়ূন কাদির, আবুল হাসান ও মহাদেব সাহাকে সুচিকিৎসার জন্য বার্লিন, মস্কো, লন্ডন প্রেরণ করেন এবং একটি কবিতা লেখার জন্য দাউদ হায়দারকে ধর্মীয় মৌলবাদীদের হাত থেকে রক্ষা এবং নিরাপত্তা দিয়ে কলকাতায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। কবি আল মাহমুদকে জেল থেকে মুক্ত করে শিল্পকলা একাডেমিতে নিয়োগ প্রদান করেন। তিনি ছিলেন নাটকের একজন সুহৃদ। টেলিভিশন ও মঞ্চ নাটকের ওপর থেকে প্রমোদকর ও সেন্সর প্রথা সহজতর করেছিলেন নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে। চলচ্চিত্রের উন্নয়নে তার অবদান ছিল। প্রাদেশিক পরিষদে এফডিসির বিল উত্থাপন করেন বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল। তখন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন ছিল চলচ্চিত্র বিষয়ক দপ্তর। ১৯৭৫ সালের ২৫ মার্চ ‘বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক’ প্রদান করা হয় বাংলাদেশের ১৮ এবং ভারতের ৪ জন বিশিষ্ট শিল্পী, সংস্কৃতিসেবী ও বেতারকর্মীকে। অর্থাৎ কবি-শিল্পী-সাহিত্যিকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন বঙ্গবন্ধু। স্বাধীন বাংলাদেশের উন্নয়নে তিনি যুক্ত করেছিলেন শিক্ষক-প্রকৌশলী ও পেশাজীবীদের, শিল্পী-সাহিত্যিকদের প্রশাসনের সঙ্গে রেখেছিলেন। শিল্প-সংস্কৃতির একজন রসবোদ্ধা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেশ-বিদেশের কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীদের গভীর সম্পর্ক ছিল। এজন্য ১৫ আগস্টের (১৯৭৫) হত্যাকাণ্ড রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সঙ্গে অভিঘাত রাখে শিল্পী, সাহিত্যিক ও কবিদের চেতনায়। পরবর্তীতে তারা তাদের লেখনীতে সামাজিক দায়িত্ব পালন করেন। মূলত জাতিকে এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হতে প্রেরণা জুগিয়েছেন শিল্প-সাহিত্য সমাজের ব্যক্তিবর্গ। বঙ্গবন্ধুর শিল্প সংস্কৃতি ভাবনায় শিশু এবং দুঃখী মানুষের কথা বারবার উচ্চারিত হয়েছে। লোকজ সংস্কৃতির প্রতি তার আগ্রহ ছিল বিস্তর। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সোনারগাঁওয়ে ‘বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন’ স্থাপন করেন বঙ্গবন্ধুর প্রেরণায়। ১৯৭২ সালের ১-৫ মার্চ সোভিয়েত ইউনিয়ন সফরকালে সেখানকার নেতৃবৃন্দের জন্য উপহার হিসেবে তিনি নিয়ে যান কচি-কাঁচার মেলার শিশুদের আঁকা চিত্রকর্ম। রাজনীতি করে যেমন গরিব কৃষক ও শ্রমিকের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছেন তেমনি শিল্প-সংস্কৃতির চেতনাসম্পন্ন উপযুক্ত জাতি গঠনে নিবেদিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৬ সালের রাজনৈতিক দলবিধির ১০ ধারায় মৃতব্যক্তির মাহাত্ম্য প্রচার নিষিদ্ধ করে খুনি সরকারের তরফ থেকে এক ঘোষণা দেয়া হয়। ফলে ২১ বছর ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি নিষিদ্ধ ছিল। ১৯৯৬ থেকে পুনরায় ব্যবহৃত হতে থাকে শব্দটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতির পিতার আদর্শ প্রতিষ্ঠার যুগ শুরু হয়। একই সঙ্গে জাতীয় শিশু দিবসের প্রচলন সেই আমল থেকেই। তারই ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনা সরকার গত ১৪ বছর ধরে সোনার মানুষ গড়ে তুলতে আত্মনিয়োগ করেছে এবং এগিয়েছে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে। আর এই ভবিষ্যতের বাংলাদেশে স্মার্ট নাগরিককে অবশ্যই সোনার মানুষ হতে হবে।

ড. মিল্টন বিশ্বাস : অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়