শেয়ারট্রিপ : অনলাইনে তারিখ পরিবর্তন ও রিফান্ড সেবা চালু

আগের সংবাদ

চিকিৎসা ব্যয়ে পিষ্ট রোগীরা : চিকিৎসায় রোগীর নিজস্ব ব্যয় প্রায় ৭০ শতাংশ, সবচেয়ে বেশি ব্যয় ওষুধ কিনতে- ৬৫ শতাংশ

পরের সংবাদ

ঝরেপড়া শিক্ষার্থী পাঠদানের নামে সরকারি অর্থ হরিলুট

প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মসিউর রহমান ফিরোজ, সাতক্ষীরা থেকে : ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের পাঠদানের নামে সরকারি অর্থ হরিলুটের অভিযোগে সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থা ‘সাস’ নামের একটি এনজিওর বিরুদ্ধে।
করোনাকালীন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮ থেকে ১৪ বছরের ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের পাঠদানের লক্ষ্যে ২০২০ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা প্রকল্প-৪ ‘ড্রপ আউট অব স্কুল স্টুডেন্ট এডুকেশন’ ২২ কোটি টাকার শিক্ষা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দয়িত্ব পায় সাস নামের এনজিও। কিন্তু নেই স্কুল, নেই কোনো ঝরেপড়া শিক্ষার্থী। নেই আসবাবপত্র, নেই উপকরণ সরবরাহের জন্য কোনো ঠিকাদার। আছে মাত্র কয়েকটি নি¤œমানের ভাড়া করা ঘর। কাজ চলে অফিস রেজুলেশনের মাধ্যমে। ঘর নির্মাণ ও উপকরণ সামগ্রীতে লুটতরাজ চালিয়ে সাসের কর্মকর্তারা মোটা অঙ্কের টাকা হজম করেছেন। সরজমিন গিয়ে জানা যায়, ছয়টি উপজেলায় তিন ভাগের এক ভাগও কেন্দ্র নেই। যেগুলো আছে বেশির ভাগ কেন্দ্রে শিক্ষক/সহায়ক শির্ক্ষাথীদের পাঠদান না থাকায় সেগুলো গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগির খামারে রূপ নিয়েছে। যেসব ছাত্রছাত্রী এখানে ভর্তি করা হয়েছে প্রায় সবাই পার্শ^বর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী। যে কারণে কেন্দ্রগুলোতে শিক্ষার্থী আসে না। সাতক্ষীরা সদরসহ তালা, কলারোয়া, দেবহাটা, কালিগঞ্জ ও আশাশুনি উপজেলায় একই অবস্থা। অথচ প্রতি তিন মাস পরপর সাস, কেন্দ্রপ্রতি সমুদয় টাকা উত্তোলন করছে।
জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর কার্যালয় সূত্র বলছে, সরকার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরেপড়া সব শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে ৮ থেকে ১৪ বছরের ছেলে মেয়েদের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা প্রকল্প-৪ কার্যক্রম’ বাস্তবায়নে ২০২০ সালে সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থা (সাস) অনুমতি পায়।
নির্ধারিত সময়ের ২০ মাস পর ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ সালে তারা প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করে। আরো জানায়, জেলা সদরসহ ছয়টি উপজেলায় ৪২০টি কেন্দ্রে ১২ হাজার ৬০০ শিক্ষার্থীর তালিকা তৈরি করে এনজিও সাস প্রকল্পটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহযোগিতায় বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের মেয়াদ ৪২ মাস হলেও সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষ বলছে প্রকল্পটি স্বল্প সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এই তথ্য অস্বীকার করে বলেছে করোনাকালীন সময়ে ঝরেপড়া শিক্ষার্থী দেড় হাজারের মধ্যে। অথচ এনজিও সাস প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তথ্য দিয়েছে জেলায় সাড়ে ১২ হাজারের বেশি ঝরেপড়া শিক্ষার্থী রয়েছে। যে কারণে এই প্রকল্প নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধুম্রজাল। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিভাবক রুবেল, হাফিজুল, রহিমা, বিপুল, গোপালসহ কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, খাতায় প্রায় সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের এখানে ভর্তি করা হয়েছে। ৫/৬ বছরের বাচ্চাদেরও দেখা যায়। যার কারণে ৩/৪ জনের বেশি শিক্ষার্থী আসে না। ক্লাস হয় না। যারা আসে তারা পার্শ^বর্তী সরকারি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী। তারা আরো বলেন, ভর্তির সময় তাদের বাচ্চাদের অনেক কিছু দেয়ার আশ্বাস দেন সাস কর্মকর্তারা। কিন্তু শুধু বই আর খাতা দিয়েছে। বয়স জানতে চাইলে বলেন ৫/৬ বা ৭ হতে পারে।
বিভিন্ন উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা বলেন, আমাদের অনেক ছাত্র-ছাত্রীকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তাদের স্কুলে ভর্তি করেছে। এখন তারা ৫/৬ বছরের বাচ্চাদেরও তাদের স্কুলে ভর্তি করছে। শুনেছি ঝরেপড়া বাচ্চারা লেখাপড়া করবে। কিন্তু কোনো ঝরেপড়া বাচ্চা তাদের স্কুলে পড়ে কিনা সন্দেহ আছে।
সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থা (সাস)-এর পরিচালক শেখ ইমান আলীর সঙ্গে প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি রেগে বলেন, আমার টাকা আমি যা পারি করব তাতে জনগণের কী। আমি সাতক্ষীরার ছেলে, উড়ে আসিনি। আমি গভ. কলেজে পড়াশোনা করেছি। তখন আমার কাছে পিস্তল ছিল। ভাই সব বাদ দেন। আমার লোক আপনার সঙ্গে দেখা করবে।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো সাতক্ষীরার উপপরিচালক সরোজ কুমার দাস বলেন, প্রকল্পটি দেরিতে শুরু হওয়ায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। নোংরা পরিবেশে স্কুল ও ঝরেপড়া শিক্ষার্থী বাদে ভর্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন আমি ইতোমধ্যে চিঠি দিয়েছি নোংরা পরিবেশে স্কুল স্থানান্তর ও ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে স্কুলে ভর্তি করার জন্য। অন্য বিষয়ে তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, আমি সাতক্ষীরার দায়িত্বে নেই।
জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, আমি বিষয়টি জেনেছি। দুদক কার্যালয়ে জানানো হবে। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করে তিনি আরো বলেন, দুদক এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিলে প্রয়োজনীয় তথ্যউপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করব।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির বলেন, বাংলাদেশ সরকার শিক্ষায় সাফল্য অর্জন করেছে। করোনাকালীন সময়ের ৮ থেকে ১৪ বছরের ঝরেপড়া শিক্ষর্থীদের শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে সরকার নানামুখী প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন।
এর ধারাবাহিকতায় সাতক্ষীরায় ‘ড্রপ আউট অব স্কুল স্টুডেন্ট এডুকেশন’ শিক্ষা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে এনজিও সাস। স্কুল নেই, শিক্ষার্থী নেই, ঝরেপড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়