শাহজালাল বিমানবন্দর : মশা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তিনজনের মতামত চান হাইকোর্ট

আগের সংবাদ

ফের ‘ভেরিফিকেশন’ নাটক! : মিয়ানমার থেকে আসা ১৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল টেকনাফে

পরের সংবাদ

ব্যাটিং তাণ্ডবে সবার ওপরে শান্ত

প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে দারুণ ছন্দে ছিলেন টাইগার ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্ত। ব্যাট হাতে ১৪৪ রান করে হয়েছেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার ছাড়া আর কোনো ব্যাটার পূরণ করতে পারেননি তিন অঙ্কের কোটা। এর আগে ওয়ানডে সিরিজেও ধারাবাহিক ছিলেন এই ব্যাটার। তবে এই সিরিজে দুটি আক্ষেপ রয়েছে শান্তর। দ্বিতীয় ম্যাচে ৪ রান ও শেষ ম্যাচে ৩ রানের জন্য পাননি টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে তিন ম্যাচে ১৪৪ রান করে সিরিজ সেরা নির্বাচিত হন শান্ত।
জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি শান্ত। বারবার একাদশে জায়গা পেয়েও নিজেকে প্রমাণ করতে পারছিলেন না এই ব্যাটার। তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টাইগারদের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করে কিছুটা ছন্দে ফেরার আভাস দিয়েছিলেন তিনি। এরপর ভারত সিরিজে কিছুটা ব্যর্থ হলেও বিপিএলে সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে ব্যাট হাতে দাপট দেখিয়েছেন শান্ত। সেই ধারা বজায় রেখেছেন এবারের ইংল্যান্ড সিরিজে। ওয়ানডেতে সফরকারীদের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে হারলেও টি-টোয়েন্টিতে তাদের হোয়াইটওয়াশ করে টাইগাররা। টি-টোয়েন্টি সিরিজে তিন ম্যাচে ব্যাট করে ১৪৪ এভারেজ ও ১২৭.৪৩ স্ট্রাইক রেটে ১২টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৪৪ রান করেন শান্ত। প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৬ উইকেটে জেতে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। সেখানে ব্যাট হতে ৩০ বলে ৫১ রানের মারমুখী ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হন শান্ত। এরপর দ্বিতীয় ম্যাচে ৪৭ বলে ৪৬ রান করে দলের জয়ে অবদান রাখেন। প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে পরাস্ত করে চমক দেখায় বাংলাদেশ। এরপর তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে ব্যাট হাতে ৩৬ বলে ৪৭ রান করেন শান্ত।
তার সঙ্গে রানের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার ১৪২.৩১ স্ট্রাইক রেটে ৫৫.৫০ গড়ে ১১১ রান করেন। তিনে থাকা টাইগার ওপেনার লিটন দাস তিন ম্যাচে ১২৩ স্ট্রাইক রেটে করেন ৯৪ রান। চতুর্থ স্থানে থাকা ফিল সল্ট করেন ৬৩ রান। পঞ্চম স্থানে থাকা ডেভিড মালান করেন ৬০ রান।
এর আগে ওয়ানডে সিরিজেও সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় সেরা পাঁচে ছিলেন শান্ত। তিন ম্যাচে ৩৭ গড় ও ৭২.০৮ স্ট্রাইক রেটে ১১টি চারে ১১১ রান করেছিলেন তিনি। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি- টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় শান্তর। এরপর জাতীয় দলের হয়ে এ পর্যন্ত ২০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ১১২.৪২ স্ট্রাইক রেটে করেন ৫২৮ রান। যেখানে সর্বোচ্চ ইনিংস খেলেন ৭১ রানের।
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সিরিজ জেতার পর নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে উচ্ছ¡াসে ফেটে পড়েন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘প্রথম ম্যাচে জেতার পর আমার সঙ্গে শান্তর যখন দেখা হয়, আমি তাকে বলেছিলাম তুমি আউট হলে কেন? এই শেষ মুহূর্তে এসে তোমার শেষ করা উচিত ছিল। ভালো খেলেছ, ভালো কথা। কিন্তু তোমার শেষ করে আসা উচিত ছিল। এরপর দ্বিতীয় ম্যাচে শান্ত শেষ করে এসেছে। ও আউট হলে বিপদ আরো বাড়তে পারত। দলের সাহস নিয়ে, ভয়ডরহীন ক্রিকেট আর ফিল্ডিং নিয়ে আমার কখনোই সন্দেহ ছিল না। এই জিনিসগুলো আস্তে আস্তে হয়েছে। দল ইংল্যান্ডের সঙ্গে জিতবে টি-টোয়েন্টিতে, এটা আসলে ভাবি নাই।’
সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুই ফিফটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ১৮০ রান করেন শান্ত। এরপর ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে খেলেন ১৫৬ বলে ৬৭ রানের ইনিংস। ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন সর্বশেষ বিপিএলেও। সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে ৪ ফিফটিতে আসরের সর্বোচ্চ ৫১৬ রান আসে তার ব্যাট থেকে। বিপিএলে ১৫ ম্যাচ খেলে ৩৯ দশমিক ৬৯ গড় আর ১১৬ দশমিক ৭৪ স্ট্রাইক রেটে এই রান করেন তিনি। এবারের আসরে সেরা রান সংগ্রাহকের পাশাপাশি প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটার হিসেবে বিপিএলে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন শান্ত। বিপিএলের টুর্নামেন্ট সেরা পুরস্কারটি ওঠে বাঁহাতি এই ব্যাটারের হাতে। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে এখনো সর্বোচ্চ রানের মালিক তিনি। তার এই রানের ধারাবাহিকতা দেখে প্রশংসা করে সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক নাসের হুসেইন বলেন, ‘বড় তারকা হতে যাচ্ছে শান্ত। বাংলাদেশের এ রকম আরো বেশ কয়েকজন দুর্দান্ত ক্রিকেটার প্রয়োজন। তাদের জন্য এই সিরিজ অনেক বড় জয়।’

জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর থেকে সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারছিলেন না শান্ত। ভুগছিলেন ফর্মহীনতায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভক্তদের কটু কথা আর সমালোচনার মধ্যমণি হয়ে ওঠেন তিনি। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা শান্তকে বারবার ব্যর্থ হওয়ার পরও তিন ফরম্যাটেই সুযোগ দিচ্ছিলেন নিজেকে প্রকাশ করার। তারা আস্থা রাখছিলেন এ তরুণ প্রতিভার ওপর। তবে বারবারই ব্যর্থ হয়ে উইকেট থেকে ফিরছিলেন শান্ত। শেষ পর্যন্ত সবকিছু ছাপিয়ে টাইগারদের ভরসার অন্যতম নাম হয়ে উঠছেন শান্ত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়