শাহজালাল বিমানবন্দর : মশা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তিনজনের মতামত চান হাইকোর্ট

আগের সংবাদ

ফের ‘ভেরিফিকেশন’ নাটক! : মিয়ানমার থেকে আসা ১৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল টেকনাফে

পরের সংবাদ

নদী খনন করে সেই মাটি ফেলা হচ্ছে নদীতেই!

প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. সাজ্জাদ হোসেন শাহ্, সুনামগঞ্জ থেকে : নদী খনন করে সেই মাটি নদীতেই ফেলা হচ্ছে। ফলে খননের নামে নষ্ট হচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা। এমনই অনিয়ম ঘটেছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বৌলাই নদীর খনন কাজে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তাহিরপুর উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান সেলিম মাটি সম্পূর্ণ সরিয়ে ফেলা হবে বললেও স্থানীয়রা বিষয়টি বিশ্বাস করতে চাইছে না।
স্থানীয়রা বলছেন, এ নদী খননের জন্য চার বছর ধরে নদীতে ড্রেজার মেশিন দেখা যাচ্ছে। তারা মাঝে মাঝে মেশিন চালিয়ে খনন কাজ করে আবার বেশিরভাগ সময়ই মেশিন বন্ধ থাকে। এতে যে অংশ খনন করা হয় সেই অংশ আবার পলি পড়ে ভরাট হয়ে যায়। সময় পেরিয়ে গেলেও খনন কাজ শেষ হয় না। এখন কয়েক দিন ধরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক্সেভেটর মেশিন (মাটিকাটার মেশিন) দিয়ে নদী থেকে মাটি তুলে সেই মাটি নদীর তীরেই রাখছে। এতে করে আবারও এই মাটি নদীতে পড়ে ভরাট হবে। এভাবে খনন করার চেয়ে না করাই ভালো বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে এ আর কে নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৯-২০ অর্থবছরে তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন সংলগ্ন বৌলাই নদীর ৬ হাজার ৭০০মিটার খননের কাজ পায়। ওই খনন কাজে ৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। দুই বছর মেয়াদে ওই খনন কাজ চার বছরেও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। খননের বাকি ১ হাজার ৪০০মিটার। যার ৭০০মিটার ড্রেজারে আর বাকি ৭০০ মিটার এক্সেভেটর মেশিন দিয়ে খনন করা হবে বলে জানাযায়। এক্সেভেটর মেশিন দিয়ে নদী খননের মাটি নদী তীরেই ফেলা হচ্ছে। এতে স্থানীয়দের মনে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
নদীর তীরঘেঁষা রতনশ্রী গ্রামের আশিক নুর মিয়া, জানে আলম ও বিল্লাল মিয়া জানান, এক্সেভেটর মেশিনে মাটি খনন করে নদীর মাটি নদীর পাড়ে রাখা হচ্ছে। এ মাটি আবার নদীতেই পড়বে। এভাবে খনন করে সরকারি টাকা নষ্ট করার চেয়ে না করাই ভালো। তারা আরো বলেন, আমাদের রতনশ্রী গ্রামটি নদীর পাড় ঘেঁষা। নদী খননে আমাদের গ্রামটি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়বে। তাই নদী খননের মাটি যদি আমাদের গ্রামের উত্তর দিকে দেয়া হয় তাহলে আমাদের ঝুঁকিতে পড়তে হবেনা। চার বছর আগে উপজেলা পরিষদের রেজুলেশনে নদী খননের মাটি আমাদের গ্রামর উত্তর দিকে দেয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়। তাহিরপুর সদর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান তুজাম্মিল হক নাছরুম জানান, নদী খননের মাটি নদীর পাড়ে রাখলে বর্ষাকালে ওই মাটি স্রোতে ভেসে আবারো নদী ভরাট হয়ে যাবে। তাই জনস্বার্থে এভাবে খনন না করে নদীর পাড় ঘেঁষা গ্রামের পেছনের দিকে ড্রেজিং করে ফেললে ভালো হবে বলে জানান তিনি। হাওর, নদী ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন বাংলাদেশ এর আহ্বায়ক মিজানুর রহমান রাসেল জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড যেভাবে এক্সেভেটর মেশিন দিয়ে নদীর বালু বা মাটি নদীর পাড়ে ফেলে দেয়, সেভাবে এখানে নদী খনন হচ্ছে না। এক্সেভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে নদীর মধ্যেই ফেলে রাখার চেয়ে এ ধরনের নদী খনন না করাই ভালো। খননের মাটি নদীর ওপরে ফেলে বেঁধে দিলে খননের উপকারিতা মিলবে। কিন্তু এতে শুধু সরকারি টাকাই গচ্চা যাবে। এর সুফল আসবে না।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একাংশের সাইড ম্যানেজার অরুণ দাবি করেন, নদীর মাটি কেটে আপাদত নদীর পাড়ে রাখা হচ্ছে। কেউ যদি বেঁধে রাখতে পারে তাহলে থাকবে। তা নাহলে মাটি নির্ধারিত স্থানে সরিয়ে নেয়া হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তাহিরপুর উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান সেলিম ভোরের কাগজেকে বলেন, নদী খননের কোনো মাটি নদীর মধ্যে থাকবে না। সব সরিয়ে নেয়া হবে। এতে নদী প্রশস্ত হবে এবং গভীরতাও বাড়বে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়