শাহজালাল বিমানবন্দর : মশা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তিনজনের মতামত চান হাইকোর্ট

আগের সংবাদ

ফের ‘ভেরিফিকেশন’ নাটক! : মিয়ানমার থেকে আসা ১৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল টেকনাফে

পরের সংবাদ

চা বাগানের নামে জমি লিজ নিয়ে মৎস্য চাষ

প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রামগড় (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি : পেডরোলো গ্রুপের মালিকানাধীন ফটিকছড়িতে অবস্থিত রামগড় চা বাগানের জন্য ভূমি লিজ নিয়ে সেই ভূমির আকার-আকৃতি পরিবর্তন করে বেআইনিভাবে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল হ্রদ। হ্রদে বছরজুড়ে করা হয় কোটি কোটি টাকার মৎস্য চাষ।
অভিযোগ রয়েছে, চা বাগানের শ্রমিকদের দখলে থাকা জলাশয় থেকে উচ্ছেদ করে বাগান কর্তৃপক্ষ অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করে মামলাও খেয়েছেন শ্রমিক নেতারা। শ্রমিদের দাবি, প্রশাসন এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেবে ও বাগানের অনিয়ম বন্ধে ব্যবস্থা নেবেন।
জানা যায়, ১৯১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রায় ১৪০০ একর আয়তনের এই চা বাগানে চা প্লান্টেশন রয়েছে প্রায় ৮০০ একরেরও বেশি। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বাগানটিতে প্রায় ৫০ একর ফসলি ও জলাশয় জমি খনন করে কৃত্রিম হ্রদে মৎস্য প্রকল্প গড়ে তোলেন বাগান কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকদের ভোগদখলীয় জমি থেকে তাদের উচ্ছেদ করে সেখানে এই মৎস্য প্রকল্প এবং নানা প্রজাতির নারকেল গাছ এবং সুপারি গাছের বাগান করা হয়েছে, যা চা বাগানের সম্পূর্ণ নীতিমালা বহির্ভূত। বাংলাদেশ চা বোর্ড ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের ইজারা নির্দেশনায় চা বাগানের বরাদ্দকৃত ভূমিতে চা চাষ ব্যতীত অন্য কোনো ফসল আবাদ বা অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। তবে অনাবাদি জমিতে জেলা প্রশাসক ও চা বোর্ডের সুপারিশ সাপেক্ষে ভূমি মন্ত্রাণালয়ের অনুমোদনক্রমে কৃষি শিল্প গড়ে তোলা যাবে।
এমনকি বলা আছে, ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ ব্যতীত কোনোভাবেই চা বাগানের জন্য বরাদ্দকৃত ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। এ সকল অবৈধ কর্মকাণ্ডে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই এই বৃহৎ প্রকল্প গড়ে উঠেছে চা বাগানে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অবৈধভাবে গড়ে উঠা এই মৎস্য প্রকল্প ঘিরে নেয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা।
সাংবাদিকদের প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ এই প্রকল্পে। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলায় সম্প্রতি শ্যামা সিং এবং মঞ্জু সরদার নামে দুইজন শ্রমিককে কাজ থেকে সাময়িক প্রত্যাহার করে তোপের মুখে পরে পুনরায় চাকরিতে বহালও করা হয়। মৎস্য প্রকল্পে বিভিন্ন জাতের মাছের চাষ হয় । হ্রদ থেকে বছরে কয়েক কোটি টাকার মাছ বিক্রি করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক বলেন, চা বাগানে অবৈধভাবে মাছের প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে। এটির কোনো অনুমোদন নেই। চট্টগ্রামে অবস্থিত পেডরোলো গ্রুপের হালদা ফিশারিজ লিমিটিডের ক্যাশ মেমো ব্যবহার করে এই প্রকল্প থেকে মাছ বিক্রি করা হয়।
২০২০ সালে শ্রমিকদের সঙ্গে দ্বন্ধের পরে মালিকপক্ষ তাদের মাছ দেয়া বন্ধ করে দেয়। শ্রমিকদের দখলে থাকা ভূমি থেকে তাদের সরিয়ে মৎস্য প্রকল্পের পরিধি বাড়ানো হয়। এ নিয়ে তারা প্রতিবাদ করলে মালিকপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে।
ফটিকছড়ির বাগান বাজার এলাকার এক মাছ ব্যবসায়ী জানান, চা বাগানের মৎস্য প্রকল্প থেকে ছোট মাছ বিক্রির চুক্তি তাকে দেয়া হয়েছে।
হ্রদ থেকে মাছ ধরে তিনি চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় পাইকারি দামে সেগুলো বিক্রি করেন। আর বড় মাছগুলো কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামে তাদের নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে পাঠিয়ে দেন।
চা বোর্ডের সচিব মোসা. সুমণী আক্তারের মতে, চা বাগানের জন্য জমি লিজ নিয়ে অন্য কাজে ব্যবহারের সুযোগ নেই। তবে অন্য কাজে ব্যবহার করতে চাইলে অনুমতি নিতে হবে। ফটিকছড়ির রামগড় চা বাগানে বিনা অনুমতিতে এ ধরনের মৎস্য চাষ করলে তা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।
রামগড় চা বাগানের ব্যবস্থাপক জয়নাল আবেদীন জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে মৎস্য চাষের বিষয় অস্বীকার করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে ইরিগেশন প্রকল্প করা হয়েছে। এখানে কিছু মাছ চাষ হতে পারে। তবে এসব কিছুর অনুমোদন আছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদ কামাল বলেন, চা বাগানের জন্য জমি লিজ নিয়ে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না, এক্ষেত্রে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করাও যাবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়