চলতি সপ্তাহে ঝড় বৃষ্টির সম্ভাবনা

আগের সংবাদ

গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ ঘাটতির আশঙ্কা : সেচের জন্য নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে > ঘাটতি থাকবে ৩ হাজার মেগাওয়াট

পরের সংবাদ

শিখা চিরন্তনের মর্যাদা রক্ষায় উদ্যোগ জরুরি

প্রকাশিত: মার্চ ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মোগল শাসনামলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রতিষ্ঠিত হয়। সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে সুবেদার ইসলাম খান কর্তৃক ঢাকা মহানগরী প্রতিষ্ঠাকালীন এই স্থাপনাটি গড়ে ওঠে। অব্যবস্থাপনার কারণে মোগল শাসনামলের অবসানকালে এটি পরিত্যক্ত হয়ে জঙ্গলে পরিণত হয়। ঢাকায় ইংরেজ কালেক্টর মি. ডয়েসের উদ্যোগে এই স্থাপনাটি প্রাণ ফিরে পায় এবং চারদিকে কাঠের দেয়াল নির্মাণ করে ঘোড়দৌড় উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়। এর নামকরণ করা হয় রমনা রেসকোর্স ময়দান। ইংরেজ শাসনামলে এই স্থানটি ঘোড়দৌড়ের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। তৎকালীন সময়ে শাসক শ্রেণি থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের চিত্ত বিনোদনের স্থান ছিল এটি। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ঢাকায় ধর্মীয় মাহফিলে মুফতি দীন মোহাম্মদের ডাকে ঘোড়দৌড় বন্ধের আন্দোলনের ফলে পাকিস্তান সরকার ১৯৪৯ সালে ঘোড়দৌড় নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয়।
১৯৬৯-এর ২৩ ফেব্রুয়ারি আপামর জনগণের দুর্বার আন্দোলনে তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা (প্রকৃত নাম রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য) থেকে মুক্তি লাভের পর বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে জনগণের পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি তোফায়েল আহমেদ বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯৭০-এর গণরায়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত সমগ্র পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর চক্রান্ত মর্মে মর্মে উপলব্ধি করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখ লাখ জনতার উপস্থিতিতে ১৯৭১-এ ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকনির্দেশনা দেন। এই ভাষণ জাতিকে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় আরো শানিত করে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সার্বিক প্রস্তুতি নিতে উজ্জীবিত করে। ৯ মাসে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান ও অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে জাতি বিজয় লাভ করে। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই জেনারেল নিয়াজীসহ ৯৫ হাজার বর্বর পাকিস্তানি সৈন্যের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে খালেদার শাসনামলে ১৯৯২ সালের ১২ এপ্রিল এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭১-এর ঘাতক-দালাল তথা শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ঐতিহাসিক গণআদালত গঠিত হয়।
উল্লিখিত ঘটনাবলির নিরিখে আমাদের জাতীয় জীবনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গুরুত্ব অপরিসীম। এই ঐতিহাসিক উদ্যানের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘ একুশ বছর পর ১৯৯৬-এ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল সরকার গঠন করলে ১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিখা চিরন্তনে শিখা প্রজ্বালন করেন। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে উপস্থিত ছিলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা, ফিলিস্তিনি জনগণের নেতা ইয়াসির আরাফাত ও বীর কামাল পাশার দেশ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট সুলেমান ডেমিরেল। শিখা চিরন্তনের পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্লাজা চত্বরের পূর্ব দেয়ালে নির্মিত হয়েছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের চিত্র টেরাকোটা। শিখা চিরন্তনের পাশে ভূগর্ভস্থ জাদুঘরে মহান মুক্তিযুদ্ধের অনেক আলোকচিত্র বা ছবি ঠাঁই পেয়েছে। ছোট শিশুরা তাৎক্ষণিকভাবে কিছু না বুঝলেও ওদের কোমলমতি মনে এগুলো গেঁথে থাকবে, বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ওরা ক্রমান্বয়ে পূর্বপুরুষদের বীরত্বগাথা, গৌরবগাথা সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করবে। বাঙালি জাতির স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের সূতিকাগার মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিস্মরণীয় স্মৃতি রক্ষার্থেই নির্মিত হয়েছিল শিখা চিরন্তন। যা থেকে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাদের পূর্বপুরুষদের বীরত্বগাথা জেনে দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে তথা দেশ ও জাতি গঠনে আত্মনিয়োগ করবে। ভীষণ পরিতাপের বিষয় যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও এই গৌরবোজ্জ্বল শিখা চিরন্তনের গুরুত্ব ক্রমেই উপেক্ষিত হচ্ছে, আমরা জাতির ঐতিহাসিক, গৌরবোজ্জ্বল দিবসগুলোতে এখানে শ্রদ্ধা নিবেদন থেকে বিরত থাকছি, যা অপ্রত্যাশিত!
জাতীয় বীর, সাবেক ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের (মুসপ) পক্ষ থেকে আমরা উল্লেখিত দিবসগুলোতে প্রতিবার বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের পাশাপাশি শিখা চিরন্তনে শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে গিয়ে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি লক্ষ্য করি না! এবারো ৭ মার্চ তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি মুষ্টিমেয় কয়েকটি সংগঠনের উপস্থিতি চোখে পড়েছে। ইতোপূর্বে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে ২/১ বার দেখলেও এবার দেখা যায়নি!
আমাদের প্রত্যাশা অগ্নিঝরা মার্চ বিশেষত ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের স্মরণে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান তথা শিখা চিরন্তনে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমাগম হবে। উল্লিখিত বিষয় তথা শিখা চিরন্তনের মর্যাদা সুরক্ষায় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য।

হাসান-উজ-জামান : লেখক ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়