চলতি সপ্তাহে ঝড় বৃষ্টির সম্ভাবনা

আগের সংবাদ

গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ ঘাটতির আশঙ্কা : সেচের জন্য নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে > ঘাটতি থাকবে ৩ হাজার মেগাওয়াট

পরের সংবাদ

জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহের অনুষ্ঠানে সব শিক্ষক : খাগড়াছড়ির শতাধিক বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত

প্রকাশিত: মার্চ ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শংকর চৌধুরী, খাগড়াছড়ি থেকে : অফিস থেকে কোনো নোটিস বা সরকারি ছুটি ছাড়াই শুধুুমাত্র শিক্ষা কর্মকর্তার মৌখিক নির্দেশে শিক্ষকদের দিয়ে অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে, খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের বিরুদ্ধে। এতে করে জেলার প্রায় ১০০ টিরও বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, গত ২ মার্চ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ কবির উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১২-১৪ মার্চ জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৩ পালনের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক প্রস্তাবিত প্রাথমিক বিদ্যালয়, উপজেলা/থানা, জেলা ও বিভাগ পর্যায়ে তিন দিনের কর্মসূচি পালনের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। তারই আলোকে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করে খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।
গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে শহরের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে গিয়ে দেখা যায়, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের আয়োজনে আলোচনা সভা চলছে। এতে খাগড়াছড়ি জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় কর্মরত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান ও সহকারী শিক্ষকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপস্থিত শিক্ষকরা গোমরামুখে বলেন, স্কুলে না গিয়ে এখানে এসেছি। ইচ্ছা না থাকা সত্যেও শিক্ষক নেতা এবং শিক্ষা অফিসারদের নির্দেশে বদলি হওয়া ও শোকজের ভয়ে অনেকটা নিরুপায়ে বাধ্য হয়ে অনুষ্ঠানে আসতে হয়েছে তাদের। কেউ এসেছেন শিক্ষক নেতা-নেত্রী হিসেবে। আবার কেউ কেউ এসেছেন শিক্ষা অফিসার ও শিক্ষক নেতাদের মন রক্ষা করতে। কারণ দূরের বিদ্যালয় থেকে কাছে বদলি বা ডেপুটেশনে থাকার সুযোগ পাওয়া ইত্যাতি বিষয় আছে তায়।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি ও মাটিরাঙা উপজেলার গোকুলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাছুদ পারভেজ বলেন, খাগড়াছড়ি জেলা সদরের প্রায় ৮০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান ও সহকারী শিক্ষক এবং জেলা সদর থেকে বিভিন্ন উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত প্রধান ও সহকারীসহ এ অনুষ্ঠানে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা উপস্থিত হয়েছেন। এটিতো জাতীয় প্রোগ্রাম, আমাদেরতো আসতেই হবে ভাই, বিভিন্ন বিষয় আছেনা। বসেন চা-টা খেয়ে যাবেন।

এ বিষয়ে জানতে শহরের আলোচিত মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিশু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশকিছু বিদ্যালয়ে গেলে ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক মেডাম আসেননি, স্কুলের আরো দুই তিনজন স্যারসহ নাকি কোনো মিটিংয়ে গেছেন। আজ আর কালও নাকি আসবেন না। এ দুই তিন দিন শুধুু শুধুু ছেলেমেয়েদের নিয়ে স্কুলে আসছি, লেখাপড়া কিচ্ছুই হচ্ছে না।
সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে শিক্ষকদের দিয়ে কোনো কাজ করানো হলে তা অনৈতিক। আমাদের অনুষ্ঠানের কথা বলে স্কুল বন্ধ রাখলে বা বিদ্যালয়ে না যাওয়ার খবর পেলে জানাবেন। স্কুলে না গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকা বা ছাত্রছাত্রীরা আপনাদের অনুষ্ঠানে গিয়ে বসে থাকতে হবে এমন লিখিত কোনো আদেশ আছে কি?, না নেই, তবে আমাদের অফিস থেকে মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। প্রতিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ ৩-৪ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে আলোচনা সভা এবং শিক্ষা মেলা/উপকরণ প্রদর্শনীতে উপস্থিত থাকতে।
তবে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়, উপজেলা/থানা জেলা ও বিভাগ পর্যায়ে সুবিধাজনক স্থানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিত বক্তৃতা, বিষয়ভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতা, শিক্ষামূলক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন এবং বিদ্যাৎসাহী ব্যক্তিবর্গের অংশগ্রহণে আলোচনা সভা এবং শিক্ষা উপকরণ মেলার আয়োজন করতে হবে।
সোমবার দুপুরের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থীবিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি।
সদর উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর রিন্টু কুমার চাকমার সঞ্চালনায় এবং খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রæ চৌধুরী অপুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে, পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ও প্রাথমিক শিক্ষা আহ্বায়ক নিলোৎপল খীসা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মুনতাসির জাহান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মাহমুদা বেগম, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শানে আলম, সদর উপজেলা আনসার ও ভিডিপির কর্মকর্তা রোকেয়া পারভীন, ৪নং পেরাছড়া ইউপি চেয়ারম্যান তপন বিকাশ ত্রিপুরা, ৩নং গোলাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান উল্লাস ত্রিপুরা, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি মাসুদ পারভেজ, সাধারণ সম্পাদক কার্তিক ত্রিপুরা, শিক্ষক আশা প্রিয় ত্রিপুরা, অনক বরণ ত্রিপুরাসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়