মাদ্রাসা কর্মচারীর কাণ্ড : জাতীয় পরিচয়পত্র ও এমপিওতে ভিন্ন তারিখ!

আগের সংবাদ

যে কারণে দলে নেই মাহমুদউল্লাহ

পরের সংবাদ

পোশাক রপ্তানিতে নজর বাড়ান

প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেশের বড় রপ্তানি পোশাক শিল্পের প্রতি অবহেলা করা ঠিক হবে না। দীর্ঘদিন ধরে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রাখলেও সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশকে টপকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে গেছে ভিয়েতনাম। ২০১৯-২০ পর্যন্ত ভিয়েতনাম বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানি করেছে তিন হাজার কোটি ডলারের বেশি আর বাংলাদেশ এ সময় রপ্তানি করেছে দুই হাজার ৭০০ কোটি ডলার। আর করবেই না কেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শপিংমলে আমি নিজেই দেখেছি যে, বাংলাদেশের রপ্তানিকৃত গার্মেন্টস বা কাপড়-চোপড়ের গুণগত মান ভিয়েতনামের থেকে নিম্নমানের। পারলে ভিয়েতনাম চীন, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরকেও পেছনে ফেলে দেবে। জুতা শিল্পে বিশ্ববাজারেও ভিয়েতনাম ভালো করছে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা বেশির ভাগ অদক্ষ। বিদেশে এক্সপোর্ট কোয়ালিটির ওপর তাদের গুণগত জ্ঞান বা ধারণা নেই। ইতোমধ্যে ভিয়েতনামের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) হয়েছে।
গত এক দশক বাংলাদেশ ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানির প্রতিযোগিতা প্রায় কাছাকাছি ছিল। এখন ভিয়েতনামের পেছনে পরে বাংলাদেশকে আগামীতে পোশাক শিল্পের উন্নয়নে কাজ শুরু করতে হবে। আমি নিজেই ভিয়েতনামের কয়েকটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে তাদের উৎপাদিত মালামালের কোয়ালিটি কন্ট্রোল পদ্ধতি থেকে মুগ্ধ না হয়ে পারিনি। ফ্যাক্টরিতে কাজের সময় শ্রমিকদের মধ্যে ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা একেবারে নেই বললেই চলে। তারা কথা কম বলে, কাজ বেশি করে থাকে। জাপানিদের মতো শৃঙ্খলাই মনে হয় তাদের উন্নতির শেখর। বেশ কয়েকবার ভিয়েতনাম সফরে গিয়ে আমি এটুকু অনুভব অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি যে, ভিয়েতনামীরা জাপানের মতো পরিশ্রমী জাতি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তাদের বিনয়ী ব্যবহার ও কর্মের মাধ্যমে।
ভিয়েতনামে চীন ও জাপানের অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার মাধ্যমে তাদের অর্থনীতি এখন বিরাট শক্তিশালী। জাপানের মতো শৃঙ্খলাবোধ এই দেশটিকে অনেক উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ধ্বংসস্তূপের পর ভিয়েতনাম সর্বক্ষেত্রে আজ বাংলাদেশ থেকে অনেক দূর এগিয়ে। হো চি মিনের দেশ ভিয়েতনামে একবার ঘুরে এলে বারবার যেতে মন চায়। পর্যটন ক্ষেত্রেও দেশটি অনেক অগ্রগতির সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। শুধু কাপড় বা পোশাক শিল্পে নয়, জুতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ভিয়েতনামের সুনাম আজ সর্বক্ষেত্রে। জেনে অবাক হলাম ভিয়েতনাম এয়ারলাইন্স বাংলাদেশ বিমানের মতো অলাভজনক প্রতিষ্ঠান নয়। আগের পুরনো এয়ারপোর্টের থেকে এখনকার ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ের ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের তুলনা হয় না। করোনা ভাইরাস সংকটের মধ্যে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতেও নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তারপর এমনটিও সামনে আসে যে, বাতিল ও স্থগিতাদেশ হওয়া পোশাকের ক্রয়াদেশের পণ্য নিতে শুরু করে বিদেশি ক্রেতারা এবং আবার নতুন করে আসতে শুরু করেছে।
পোশাক শিল্পে প্রাণ ফিরতে শুরু করলে আবারো বিশ্বের পোশাক বাজারে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি করে নিতে পারবে বাংলাদেশ। তবে যথেষ্ট উদ্যম, আগ্রহ ও প্রচেষ্টা থাকতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মহামারি কোভিড-১৯ গোটা বিশ্বের অর্থনীতিকেই তছনছ করে দিয়েছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৮৫ শতাংশের মতো আসে তৈরি পোশাক শিল্প খাত থেকে। ২০২০-২১ অর্থবছরে পোশাক খাতে যথেষ্ট ধস নেমে আসে করোনা ও বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে। ২০২২ সালের আমাদের পোশাক শিল্পের অবস্থা নাজুক ছিল। বিশ্বে ইতোমধ্যে পোশাকের চাহিদা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। পোশাক শিল্পের জন্য বাংলাদেশকে নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে, কারণ এর কোনো বিকল্প নেই। এমতাবস্থায় সামগ্রিকভাবে এই পরিস্থিতিতে পোশাক খাতের সার্বিক অবস্থা আমলে নিয়ে যা যা করণীয় তা নির্ধারণ ও যথাযথ বাস্তবায়নে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অটুট রাখার অনুরোধ করছি, যাতে দেশের পোশাক শিল্প অচিরেই ভিয়েতনামকে টপকে আবার বাংলাদেশ তার পুরনো অবস্থায় ফিরে যেতে পারে।

মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী : গণমাধ্যমকর্মী, ঢাকা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়