মাদ্রাসা কর্মচারীর কাণ্ড : জাতীয় পরিচয়পত্র ও এমপিওতে ভিন্ন তারিখ!

আগের সংবাদ

যে কারণে দলে নেই মাহমুদউল্লাহ

পরের সংবাদ

পরিকল্পনায় জড়িত মানি প্ল্যান্টের একাধিক কর্মী! আরো আড়াই কোটি টাকা উদ্ধার > গ্রেপ্তার ৮ জন ৫ দিনের রিমান্ডে

প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : মানিপ্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি তাদের ১০টি গাড়িতে করে ৭টি ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা সরবরাহ করে। কিন্তু কোনো গাড়িতেই তারা নিরাপত্তাকর্মী বা গানম্যান রাখে না। টাকা পরিবহনের সময় অবহিত করা হতো না কোনো থানাকেও। আর এই সুযোগটিই কাজে লাগায় ছিনতাইকারী চক্রটি। দীর্ঘদিন ধরে অনুসরণ করা হয় মানিপ্ল্যান্টের গাড়ি। এরই ধারাবাহিকতায় ছিনতাইয়ের দিন আগাম তথ্য পেয়ে মানিপ্ল্যান্টের গাড়িটি অনুসরণ করা হয়। কোন নম্বরের গাড়িতে উত্তরা এলাকায় টাকা পাঠানো হয়েছে এটি মানিপ্ল্যান্টের কেউ ছিনতাইকারীদের জানিয়েছে এবং সামগ্রিক পরিকল্পনার সঙ্গে কোম্পানিটির একাধিক কর্মী জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দারা। তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আরো নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। এছাড়া মানিপ্ল্যান্টের মতো কোম্পানিগুলো নিরাপত্তা জোরদার না করলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও জঙ্গিরা এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন গোয়েন্দারা।
এদিকে উত্তরা থেকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে আরো প্রায় ২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এর আগে উদ্ধার করা হয়েছিল ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তাতে সব মিলিয়ে মোট ৬ কোটি ৪৩ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হলো। গতকাল রবিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সানোয়ার হাসান, ইমন ওরফে মিলন, আকাশ মাদবর, সাগর মাদবর, বদরুল আলম, মিজানুর রহমান, সনাই মিয়া ও এনামুল হক বাদশা। গত শনিবার রাতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা এবং সুনামগঞ্জে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযান ও টাকা উদ্ধার অভিযান সম্পর্কে হারুন বলেন, প্রথমে রাজধানীর বনানী থেকে সানোয়ার নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার হেফাজত থেকে ১ কোটি ১৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে সানোয়ারের দেয়া তথ্যানুসারে বনানী থেকে ইমনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার জোয়ার সাহারার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় ৩২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা। এরপর ঢাকার উত্তরা থেকে আকাশ ও সাগর নামে দুজনকে গ্রেপ্তারের পর ১ কোটি ৭ লাখ টাকাসহ ছিনতাইকাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়। ডিবির অপর একটি দল সুনামগঞ্জে অভিযান চালিয়ে বদরুল, মিজানুর, সনাই ও বাদশাকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, গত ৮ মার্চ সিলেট যাওয়ার কথা বলে একটি হায়েস মাইক্রোবাস ভাড়া করে ছিনতাইকারীরা। কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডের কাছে আসার পর পেছনের সিট ঠিক করার কথা বলে গাড়ির চালককে ডেকে পা বেঁধে সেখানে ফেলে রাখা হয়। এরপর ওই গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের টাকা বহনকারী মানিপ্ল্যান্টের গাড়ি ফলো করতে ওঁত পেতে থাকে তারা। ছিনতাইকারী দলটি দীর্ঘদিন ধরে মানিপ্ল্যান্টের টাকা বহনকারী গাড়ি অনুসরণ করে আসছিল। তারা জানত টাকা বহন

করার ক্ষেত্রে মানিপ্ল্যান্টের কোনো সিকিউরিটি ও অস্ত্র থাকে না।
মিরপুর ডিওএইচএস এলাকা থেকে ছিনতাইকারী দল ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের টাকা বহনকারী মানিপ্ল্যান্টের গাড়ি অনুসরণ শুরু করে। এভাবে ছিনতাইকারী দলের ভাড়া করা মাইক্রোবাস তুরাগের নির্জন স্থানে পৌঁছার পর ইচ্ছাকৃতভাবে দুই গাড়ির ধাক্কা লাগায়। এ অজুহাতে ছিনতাইকারীরা গাড়ি থেকে নামে ও তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। তারা মানিপ্ল্যান্টের গাড়ি থেকে কয়েকজনকে নামিয়ে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এরপর গাড়িতে থাকা ম্যানেজারকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে টাকার ট্রাংকসহ নিজেদের হায়েস গাড়ি নিয়ে ৩০০ ফিটের নির্জন এলাকার দিকে চলে যায়।
পরে ছিনতাইকারীরা দুটি টাকার ট্রাংক ভেঙে দুটি চালের বস্তা ও পাঁচটা ব্যাগ ভর্তি করে। বাকি দুই ট্রাংকের টাকা দেখে তারা ভয় পেয়ে যায়। কোনো ব্যাগ না থাকায় টাকা ও ট্রাংক ফেলেই পালিয়ে যায়। অবশ্য তার আগে নিজেরা কাপড়চোপড় পরিবর্তন করে নেয়। তবে ভুলে মাইক্রোবাসের ড্রাইভারের সিটের উপর একটা টাকাভর্তি ব্যাগ ফেলে যায় তারা। মাইক্রোবাসের পেছনের সিটে থাকা ড্রাইভার পায়ের বাঁধন খুলে ব্যাগটি নিজ হেফাজতে নেয়। এছাড়া সে ট্রাংক থেকে অবশিষ্ট টাকা বের করে তার ভাইয়ের হেফাজতে দেয়। পরবর্তীতে ওই চালকের বাসা থেকে ১ কোটি ৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, ঘটনার দিন মানিপ্ল্যান্টের কয়েকজন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আটক করা হয়েছিল। প্রয়োজনে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবারো ডাকা হবে। আর গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডে এনে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত আট আসামির ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বিকালে তাদের আদালতে হাজির করে প্রত্যেককে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের মিরপুর জোনাল টিমের ইন্সপেক্টর সাজু মিয়া। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্ত ইসলাম মল্লিকের আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর উত্তরার তুরাগ থানাধীন দিয়াবাড়ী ১১ নম্বর সড়কে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের টাকা বহনকারী মানিপ্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের গাড়ি থেকে সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করে ৯ মার্চ রাতে মানিপ্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে তুরাগ থানায় একটি মামলা করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়