মাদ্রাসা কর্মচারীর কাণ্ড : জাতীয় পরিচয়পত্র ও এমপিওতে ভিন্ন তারিখ!

আগের সংবাদ

যে কারণে দলে নেই মাহমুদউল্লাহ

পরের সংবাদ

আহত ৩ শতাধিক, বিজিবি মোতায়েন : সংঘর্ষের সূত্রপাত নিয়ে যা বললেন সেই রাবি ছাত্র

প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাইদুর রহমান ও আমানুল্লাহ আমান, রাজশাহী থেকে : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষে অন্তত ৩০০ জন আহত হয়েছেন। গত শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় ঘটনার সূত্রপাত। পরিস্থিতি সমালাতে রাত ১০টার দিকে মোতায়েন করা হয় ৭ প্লাটুন বিজিবি। গতকাল রবিবার দিনভর উত্তপ্ত ছিল রাবি এলাকা। দুপুর দেড়টায় উপাচার্য, উপউপাচার্য ও প্রক্টরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। তবে যে শিক্ষার্থীকে নিয়ে ঘটনার উদ্ভব, পুরো বিষয়টি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন ভোরের কাগজের সঙ্গে।
জানা গেছে, বগুড়া থেকে রাজশাহী আসছিলেন রাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী আলামিন আকাশ। মূলত তার সঙ্গেই মোহাম্মদ পরিবহনের বাসের সুপারভাইজার ও হেলপারের কথা কাটাকাটি হয়। এরই জেরে ভিন্ন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। বিনোদপুর বাজারে ব্যবসায়ীদের দোকানপাট পুড়িয়ে দেয়া ছাড়াও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে স্থানীয় পুলিশ বক্সে।
এছাড়া সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন কয়েকজন সাংবাদিক।
গতকাল রবিবার দিনভর আগুন জ¦ালিয়ে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। ফলে নগরীর আমচত্বর হয়ে ভিন্ন সড়কে চলাচল করে সব ধরনের যানবাহন। সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তারসহ উপউপাচার্য এবং প্রক্টরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যকে প্রায় তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। এ সময় তাদের মুহূর্মুহূ স্লোগান ও বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো রাবি ক্যাম্পাস। ‘জ্বালোরে-জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘আমার ভাইয়ের ওপর সন্ত্রাসীদের হামলা কেন প্রশাসন জবাব চাই, ‘আমার ভাই আহত কেন, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘এক দুই তিন চার, প্রক্টর তুই গদি ছাড়’, ‘হৈ হৈ রই ভিসি, প্রক্টর গেল কই’, ‘এক দফা এক দাবি, ভিসির পদত্যাগ’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরে ছাত্রলীগ নেতারা গিয়ে অবরুদ্ধ উপাচার্যসহ অন্যদের উদ্ধার করেন।
বিক্ষোভকালে হ্যান্ডমাইকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, প্রক্টর থাকা সত্ত্বেও পুলিশ আমাদের ওপর নির্মমভাবে গুলি চালিয়েছে। আমার ভাইদের জখম করেছে। রামেক এখন আহত রাবি শিক্ষার্থীতে ভরপুর। আমার ভাইয়েরা মেডিকেলের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছে। আমাদের দাবি ছিল, উপাচার্য বিনোদপুরে (ঘটনাস্থল) গিয়ে আমাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেবেন। কিন্তু ভিসি কোনোমতেই সেখানে যেতে রাজি হননি। আমরা তাদের পদত্যাগ চাই। যদিও উপাচার্য সম্মুখ আলোচনার জন্য শিক্ষার্থীদের সাবাস বাংলাদেশ মাঠে আসার আহ্বান করেন। কিন্তু বিক্ষুব্ধ

শিক্ষার্থীরা বিনোদপুর গিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনায় বসতে বলেন। এতে উপাচার্য সম্মত না হলে তাকে ভেতরে রেখে চারদিক থেকে ঘিরে আন্দোলন করতে থাকেন তারা।
এ ঘটনায় এখনো পুলিশের সতর্ক অবস্থান রয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) রফিকুল আলম। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো পুলিশ সদস্য আহত হয়নি। তবে আমরা টহল বাড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সতর্ক রয়েছি। রাবি এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আর রাবি উপউপাচার্য অধ্যাপক সুলতানুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা আন্তরিক। আপাতত ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যথারীতি ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হবে।
তবে এসব ঘটনার উদ্ভব যে শিক্ষার্থীকে নিয়ে, সেই আলামিন আকাশ ভোরের কাগজকে বলেছেন, ‘অশ্রাব্য ভাষায় দু-তিনবার আমার মা-বাবাকে তুলে গালাগাল করে আমাকে পেটাতে চান মোহাম্মদ পরিবহন বাসের সুপারভাইজার ও হেলপার। ফলে বিনোদপুর বাজারে আমার বন্ধুদের ডাকি।’ আকাশ বলেন, আমি টিকেট কেটে শনিবার বেলা ২টা ৫৮ মিনিটে বাসে উঠি। বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে বগুড়া থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে বাস ছাড়ে। এক কিলোমিটার এসে আরো কয়েকজন যাত্রী তোলেন বাসের লোকজন। বাসে জানালার পাশে সিটে বসেছিলাম। কিন্তু আমার সিট ছেড়ে দিতে বলেন ওই যাত্রী ও বাসের সুপারভাইজার। আমার ভাই বিদেশ চলে যাবেন সেজন্য মনটা আমার খারাপ ছিল ও বাসে মাথা ব্যথা করছিল, তাই সিটটা ছাড়তে চাইনি। আর তখনই আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘চল, রাজশাহী চল, বিনোদপুর নেমে তোকে পেটাব’। আকাশের ভাষ্য, এমন হুমকিতে তিনি ভয় পান এবং বন্ধুদের বিনোদপুর বাজারে ডাকেন।
বাসটি বিনোদপুর পৌঁছালে বাসের চালক ও সুপারভাইজারকে কয়েকটা চড়-থাপ্পড় মারেন তার কয়েকজন বন্ধু। তবে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা লাঠিসোটা নিয়ে তাদের ধাওয়া করেন। ফলে রাবি ক্যাম্পাসের ভেতরে চলে যান তারা। এরপর যাকে সামনে পান, তাকেই পেটাতে থাকেন ওই ব্যবসায়ীরা। যে কারণে পরবর্তীতে এসব ঘটনার উদ্ভব হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়