অর্থনৈতিক অঞ্চলে সৌদিকে জমির প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর

আগের সংবাদ

চিকিৎসা গবেষণায় আগ্রহ কম : বরাদ্দ, অবকাঠামো সীমিত > প্রণোদনা স্বল্পতা > প্রাইভেট প্র্যাকটিসে মনোযোগ বেশি

পরের সংবাদ

সংবাদ সম্মেলনে বিচার দাবি : কুবিতে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ ও হামলায় ইন্ধন প্রক্টরের!

প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আহমেদ ইউসুফ, কুবি থেকে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ব্যক্তিগত আধিপত্য বিস্তারে শাখা ছাত্রলীগের প্রতিটি সংঘর্ষ এবং হামলার ঘটনায় প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ইন্ধনের। এতে আহত শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ, সংবাদ সম্মেলনে বিচার দাবি এবং মৌন প্রতিবাদ করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। এভাবে সার্বিক বিষয়ে ফের অশান্ত হয়ে উঠেছে কুবি ক্যাম্পাস।
গত ৮ মার্চ শাখা ছাত্রলীগের তিন নেতাকে প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালমান হৃদয়, বিজ্ঞান অনুষদ ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইদুল ইসলাম রোহান। ঘটনার মূল হোতা রেজা-ই-এলাহী সমর্থিত স্থানীয় যুবদল নেতা রনি, হত্যা মামলার আত্মস্বীকৃত আসামি বিপ্লব চন্দ্র দাস, ইকবালসহ ১২ থেকে ১৫ জন কর্মী।
তবে শাখা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, এ ঘটনায় প্রক্টর সরাসরি ইন্ধন দিয়েছেন। শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি হাসান বিদ্যুৎ বলেন, খুনি বিপ্লব ও ছাত্রদলের লোকজন কীভাবে একজন হল ছাত্রলীগের সেক্রেটারিকে মারধর করে? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আগের ঘটনায়ও দেখেছি প্রক্টর তার ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারে ছাত্রলীগের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি এবং যখন পদক্ষেপ নেয়া দরকার তখন নীরব ভূমিকা পালন করেছেন। তার ইন্ধনেই বহিরাগত এবং যুবদলের নেতা আজ আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমরা প্রক্টরের অপসারণ এবং ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
কাজী নজরুল ইসলাম হলের সভাপতি নাজমুল হাসান পলাশ বলেন, আমরা বিভিন্ন ঘটনায় দেখেছি প্রক্টর সশরীরে সব ঘটনার সময় উপস্থিত থাকলেও কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেননি। বরং তিনি অছাত্র, সন্ত্রাসী এবং ছাত্রদলের লোকদের দিয়ে ছাত্রলীগের নেতাদের মারধর করিয়েছেন। এছাড়া বিগত ১ জানুয়ারি কিছু বহিরাগত অছাত্র বঙ্গবন্ধু হলে অবৈধভাবে প্রবেশ করার চেষ্টা করলে আমরা বাধা দিয়েছি। এতে প্রক্টর বহিরাগতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন এবং ছাত্রলীগের দুই নেতাকে বহিষ্কার করেছেন। এসব ঘটনায় প্রমাণ হয় প্রক্টর সরাসরি ইন্ধনদাতা।
অভিযোগ আছে, গত ৬ মার্চ শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ২০১৭ সালে বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-এলাহির অনসারী নেতাকর্মীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলেও কোনো পদক্ষেপ নেননি প্রক্টর। সে সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদে শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, প্রক্টরের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। ক্যাম্পাসে বহিরাগতরা আসবে সেটা প্রক্টরিয়াল টিম কীভাবে জানত? এটা তো পূর্বপরিকল্পিত। ক্যাম্পাসে পুলিশ থাকার পরও একটা গ্রুপ কীভাবে ঢুকতে পারে এবং ক্যাম্পাসে শোডাউন দিতে পারে।
সেসময় রেজা-ই-এলাহির নেতৃত্বে মোটরবাইক শোডাউন, ককটেল বিস্ফোরণ, ফাঁকাগুলি ছোড়ে বহিরাগতরা। গত ১ অক্টোবর দুপুর ৩টায় প্রক্টরিয়াল টিমের উপস্থিতিতে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীসহ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে শোডাউন দেয়।
সে বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী মহড়ার ঘটনায় প্রক্টরিয়াল টিমকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন এবং সে অনুযায়ী মামলার কথা জানালেও পরবর্তীতে এ বিষয়ে আর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
আবার গত ৩০ জানুয়ারি রেজা-ই-এলাহী সমর্থিত কয়েকজন কর্মী ও সাবেক ছাত্ররা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ‘অবৈধভাবে’ উঠতে গেলে তাদের বাধা দেন ইলিয়াস হোসেন সমর্থিতরা। এ সময় সহকারী প্রোক্টর অমিত দত্তের সঙ্গে ইলিয়াস সমর্থিত এনায়েত ও সালমানের বাগ্বিতণ্ডা হয় এবং উভয়পক্ষকেই উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায়। এ ঘটনাকে প্রক্টরিয়াল বডির কর্তব্য পালনে বাধা, শিক্ষককে হেনস্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ দাবি করে উভয় নেতাকে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অবৈধভাবে যারা হলে ওঠার চেষ্টা করেছিল তাদের বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত কমিটি বা পদক্ষেপ নেয়নি প্রক্টরিয়াল বডি।
যদিও দুই নেতাকে বহিষ্কারের বিষয়ে প্রক্টর এবং রেজিস্ট্রারের কাছে জানতে চাইলে তারা উভয়ে এসব বিষয়ে উপাচার্য জানেন এবং তিনি পদক্ষেপ নিয়েছেন দাবি করেন। এদিকে উপাচার্যের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
গত ১ অক্টোবর শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্তিকে কেন্দ্র করে রেজা-ই-এলাহী সমর্থিত অনুসারীদের ক্যাম্পাসে মোটরসাইকেল নিয়ে শোডাউন, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় বহিরাগতদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে আবাসিক হল সিলগালা করে প্রক্টরিয়াল টিম। পরে বাড়ি ফেরার পথে ইমরান হোসেন এবং আবির রায়হান নামে দুই নেতার ওপর হামলা করে খুনের মামলার আসামি বিপ্লব চন্দ্র দাসসহ কয়েকজন নেতাকর্মী। ওই ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দিলেও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেয়নি প্রক্টরিয়াল টিম।
গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও কাজী নজরুল ইসলাম হলে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে প্রায় ২৫ নেতাকর্মী আহত হন। কিন্তু দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও কেন পুলিশ মোতায়েন হয়নি এবং প্রক্টরিয়াল টিমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শিক্ষার্থীরা। এমনকি ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও কোনো ধরনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি প্রশাসনকে।
গত ২২ মার্চ ২০২২ কাজী ওমর সিদ্দিকী (ভারপ্রাপ্ত) প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭২ জন সহযোগী অধ্যাপক এবং ২০ জন অধ্যাপক কর্মরত ছিলেন। ‘অজানা কারণে’ সহকারী অধ্যাপক হয়েও এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করায় বিস্ময় প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অধ্যাপক। ফলে প্রক্টরের অদক্ষতা এবং একপাক্ষিক আধিপত্যের জন্য সমালোচনার মুখে পড়েছে প্রশাসন। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে এসব ঘটনা প্রক্টরের আধিপত্য বিস্তার বিষয়ের ইঙ্গিত করছে বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া প্রক্টরের বিরুদ্ধে ভূমি বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে ভূমি বাণিজ্যের সঙ্গেও জড়িত রয়েছেন তিনি। অধিগ্রহণের বিভিন্ন নথি থেকে পাওয়া যায়, প্রক্টর ভূমি অধিগ্রহণের আগে ৬১১৩ ও ৬১১৪ নম্বর দাগে নিজের নামে জমি কিনে রাখেন। এছাড়া প্রক্টরের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে ব্যক্তিগত সিন্ডিকেট সদস্যদের পদ পাইয়ে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের এতসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, তারা কেন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে সেটা আমি বলতে পারছি না। তদন্ত কমিটি ছাড়া বহিষ্কার আদেশ নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এটার দায়ভার উপাচার্যের। এটা প্রক্টরের দায়িত্ব না। সেটা নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।
তবে তারা কেন আপনার বিরুদ্ধেই অভিযোগ তুলছে? এই প্রশ্নে তিনি বলেন, তারা আমার বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে অভিযোগ করে যাচ্ছে। এটা ষড়যন্ত্র।
এই বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে অছাত্র এবং বহিরাগতরা কেউ হলে বা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না। ক্যাম্পাসে শান্তি রাখার জন্য যে ব্যবস্থা নেয়া দরকার সেটা আমরা নেব।
প্রক্টরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, যারা অপরাধ করেছে তারা যে কেউ হোক তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদি প্রক্টরের বিরুদ্ধে সঠিক প্রমাণ পাওয়া যায় সেটাও দেখব। কারণ আমি অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে পারি না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়