পার্বত্য শান্তি চুক্তি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার

আগের সংবাদ

‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট’ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী : সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে বিদেশিদের বিনিয়োগের আহ্বান

পরের সংবাদ

ভেদরগঞ্জের ডিএমখালী মুন্সিকান্দি আশ্রয়ণ : শাকসবজি আর ফুল-ফলে ভাগ্য বদল বাসিন্দাদের

প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার ডিএমখালী মুন্সিকান্দি আশ্রয়ণ প্রকল্প যেন আদর্শ কৃষিখামার। কৃষিতেই ভাগ্য ফিরেছে এ আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের। বদলে গেছে এক সময়ের ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারগুলোর জীবনধারা। ভিটেমাটি পেয়ে প্রশাসনের সহায়তায় শাকসবজি চাষ করে তাদের অনেকেই এখন স্বাবলম্বী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের প্রকল্প ‘আশ্রয়ণ-২’ থেকে মাত্র এক বছর আগে ৩০ জন গৃহহীন পরিবারকে একটি করে আধাপাকা ঘর ও দুই শতক জমি দেয়া হয় মুন্সিকান্দি আশ্রয়ণে। এ আশ্রয়ণের বাসিন্দারা ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে উদ্বাস্তু পরিচয়ে অন্যের জমিতে রায়ত হিসেবে বসবাস করত। আশ্রয়ণে ঘর বরাদ্দ দেয়ার পরে বাসিন্দাদের আত্মপ্রত্যয়ী করে তোলতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন। শাকসবজির বীজ, সার, কিটনাশক দিয়ে তাদের কৃষি কাজে উৎসাহিত করা হয়। অল্প দিনের ব্যবধানে ডিএমখালী আশ্রয়ণ প্রকল্পটিকে একটি আদর্শ কৃষিখামারে রূপান্তরিত করেছে ভূমিহীন গৃহহীন পরিবারগুলো। এক একটি গৃহ যেন একটি খামার। কি নেই সেখানে? হাঁস-মুরগি, কবুতর ও গবাদি পশু। শাকসবজি আর ফলফুলে সোনালী হাঁসি যেন আশ্রয়ণে। সিম আর লাউ ছোট্ট টিনের চালাগুলো পূর্ণ হয়ে আছে। আমের মুকুল মন মাতাবে যে কারো। নারিকেল, সুপারি, পেয়ারা, পেঁপে আর কলা গাছের সবুজে ছেঁেয় আছে পুরো আশ্রয়ণ।
আশ্রয়ণের বাসিন্দা জাহিদা বেগম বলেন, আমি খুবই অসহায় ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী আমাকে একটি ঘর দেয়ায় আমি এখন অনেক সুখে আছি। আমি ঘরের চারপাশে সবজি চাষ করি। এই সবজি বিক্রি করেই বাজারের টাকা হয়ে যায়। আমার স্বামী ভ্যান চালায়। প্রধানমন্ত্রীর কারণে আজকে আমি ছেলে সন্তান নিয়ে শান্তিতে আছি। আল্লাহ যেন প্রধনমন্ত্রীকেও শান্তিতে রাখে। আশ্রয়ণের আরেক বাসিন্দা মাকসুদা বেগম বলেন, আমাদের জায়গা ছিল না। ইচ্ছে করলের অন্যেও জায়গান একটি বীজ লাগাতে পারতাম না। প্রধানমন্ত্রী জায়গা দিয়েছে। এখান ফসল করে নিজেরা খাই, আত্মীয় স্বজনকেই দেই। বিক্রি করে যা পাই তাতে সংসার চলে যায়। এত দিন সিম ছিল। এখনো বেগুন, টমেটো, দুন্দোল, রেখা সব সিজনেই সবজি থাকে এভাবেই স্যাররা বীজ দেয়। আমরা আবাদ করি। আশ্রয়ণের বাসিন্দা রুনা বেগম বলেন, আমাদের কোনো জায়গা জমি নাই। প্রধানমন্ত্রী এই ঘরটা দিছে এটুকুই আমাদের সম্বল। শুধু ঘর হইলেই কি হয়? খাব কী- সেই দুশ্চিন্তায় নিয়েই এ আশ্রয়ণে এসেছি। কিন্তু উপজেলার বড় স্যারে এসে আমাদের ঘরের আসপাশে শাক-সবজি বিভিন্ন ফলের চারা লাগানোর পরামর্শ দেয়। লাউ, সিম, টমেটো, বেগুন, বিভিন্ন চারা জীব সার সবই স্যাররা দিছে। এখন দেখি আল্লাহর রহমতে আমরা খাইয়াও অনেক বিক্রি করছি। এখন আর সংসার চলতে চিন্তা করি না। ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আশ্রয়ণে নিজ গ্রাম ছেড়ে অন্য একটি জায়গায় গিয়ে নতুন পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নেয়া ভূমিহীনদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ঘর দেয়ার পরেও আর্থ কষ্টে ভোগে অনেকেই। কীভাবে আশ্রয়ণের বাসিন্দারা ওই ঘরের আশপাশ থেকেই আয় করতে পারে- এমন চিন্তা থেকে সার, বীজ দিয়ে কৃষিতে উৎসাহ দিতে শুরু করলাম তাদের। আমার জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান স্যারও বিষয়টিকে অত্যন্ত পজেটিভ নিলেন। আমাকে সাহস যোগালেন। সারের প্রেরণায় বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ভাগ্যেও চাকা ঘুরতে শুরু করেছে ভূমিহীন গৃহহীন পরিবারগুলোতে। একটি ঘর মানুষের জীবনকে কিভাবে পাল্টে দিতে পারে- এ আশ্রয়ণটি না দেখলে তা বুঝানো যাবে না। আশ্রয়ণটিতে সকল বাসিন্দাদের উঠানোর পরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মত একটি মানবিক কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ। এ উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর মাধ্যেমে এ পর্যন্ত ৬৬৮ জন ভূমিহীনকে আমরা পাকাঘর ও দুই শতক জমি দিয়েছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়