পার্বত্য শান্তি চুক্তি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার

আগের সংবাদ

‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট’ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী : সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে বিদেশিদের বিনিয়োগের আহ্বান

পরের সংবাদ

বহুবিবাহ ও বড় পরিবার নিয়ে উদ্বেগ : রোহিঙ্গাদের বাড়ি ভেঙে দিয়েছে সৌদি সরকার

প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কামরুজ্জামান খান, সৌদি আরবের মক্কা থেকে : বহুবিবাহ ও বড় পরিবারের কারণে সৌদি আরবে রোহিঙ্গারা এখন বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় পাঁচ দশকের বেশি সময় আগে যারা মিয়ানমার থেকে এখানে এসে বসতি গড়েছিলেন বংশপরম্পরায় তাদের সংখ্যা এখন কয়েক লাখ। অনেকেই বহুবিবাহ করেছেন এবং ১০-১২ জন করে সন্তান রয়েছে তাদের। এখানকার রোহিঙ্গারা মূলত জারোয়াল, তাকিয়া ও নাক্কাছা বাজার এলাকায় বসবাস করে আসছে। তবে সম্প্রতি তাকিয়া ও নাক্কাছা বাজার এলাকার অনেক রোহিঙ্গা পরিবারের ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়েছে সৌদি সরকার। জানা গেছে, বাদশাহ সালমানের ঘোষিত ভিশন-২০৩০ কর্মসূচির আলোকে এসব স্থাপনা ভেঙে নতুন স্থাপনা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শুধু রোহিঙ্গা বসতি নয় আশেপাশের আরো হাজার হাজার বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে।
বাদশা ফাহাদের আমল থেকে এরা ওইসব এলাকায় বসবাস করে আসছিল। ওই সময়ে যাদের আকামা হয়েছিল তাদের সন্তানরা এখন সেগুলো নবায়ন করে চলছে। নতুন করে কোনো আকামা দেয়া না হলেও এখানে সরকার বিশেষ ছাড় দিয়ে থাকে। এই সুযোগে রোহিঙ্গারা অনেকেই এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা নিজেদের মধ্যে বিয়ে শাদী করলেও সৌদি আরবের নাগরিকরা রোহিঙ্গা নারীদের বিয়ে করতে পারে। এতে বিয়ের খরচ কম

লাগায় সৌদি আরবের লোকজন সেই সুযোগ নিচ্ছে। সেদেশে বসবাসরত পুরুষ রোহিঙ্গারা কনস্ট্রাকশন, বিভিন্ন দোকানে কর্মচারীর কাজ ছাড়াও পাহাড়ের উপরে মুদি দোকানে, কসমেটিকস, টেইলার্স, রেস্টুরেন্টে কাজ করছে। অনেকেই গড়ে তুলেছিল নিজেদের ব্যবসা। ফলে রোহিঙ্গাদের অনেকেই ব্যবসায়ী। রোহিঙ্গা নারীরা বিভিন্ন হোটেলে পরিচ্ছন্নকর্মী ও হাসপাতালে নার্স হিসেবে কাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জারোয়াল পাহাড়ে প্রায় ২ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারের বসতি থাকলেও সেগুলো এখনো ভাঙা হয়নি। যেসব স্থানে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি ভাঙা হয়েছে তারা মালেকান হোসেনিয়াসহ জেদ্দা ও বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। ভেঙে দেয়ার পর কোনো ক্ষতিপূরণ না পেয়ে একসময়ের সচ্ছল রোহিঙ্গা পরিবারগুলো এখন নিঃস্ব ও অসহায় হয়ে পড়েছে। অনেকের সংসার চলছে হাত পেতে। ইব্রাহিম খলিল রোড, হিজড়া রোড, মুসিয়া রোড, আজিজিয়া রোড এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। এমনকি যেসব রোহিঙ্গা এক সময় ঈদে কুরবানি দিতেন তারাও এখন হাত পাতছেন অন্যের দুয়ারে। আরবি মাসের ১ তারিখে পাশে সাফা টাওয়ারের মালিক ফজরের নামাজের পর থেকে হাজার হাজার মানুষকে দান করে থাকেন। তিনি ছোটদের ২০ রিয়াল, কিশোরদের ৫০ রিয়াল ও বয়স্কদের ১০০-২০০ রিয়াল করে দান করেন। সেখানে বিভিন্ন দেশের মানুষের পাশাপাশি হাত বাড়ান রোহিঙ্গারাও। এদেশে গাড়ি চালকের পেশায়ও রোহিঙ্গাদের দাপট রয়েছে। এদিকে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন মাদক কারবারে জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে ইয়াবা ও গাজা ব্যবসা অন্যতম। তারা নিজেরা সেবন করে ও তা বিক্রি করে। এজন্য গড়ে উঠেছে বিশাল মাদক সিন্ডিকেট।
মক্কায় কর্মরত গাজীপুরের কাপাসিয়ার বাসিন্দা মুক্তাদির, টাঙ্গাইলের আব্দুল মালেক, কুমিল্লার তিতাসের বোরহানউদ্দিনসহ একাধিক বাংলাদেশির সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আগে রোহিঙ্গা পরিবার ও সন্তানরা নিয়মিত ভাতা পেলেও বাদশাহ সালমান এসে তা বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে রোহিঙ্গারা অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে আছেন। আগে যেসব রোহিঙ্গা শুয়ে বসে অলস সময় পার করতেন তারাও এখন বাধ্য হয়ে কাজে নেমে পড়েছেন। তবে যে অবস্থায়ই থাকুক না কেন রোহিঙ্গারা কোনোভাবেই সৌদি আরব ছাড়তে রাজি নয়। দেশটিতে কর্মরত যে কোনো দেশের মানুষের চাইতে তারা বেশ দাপটের সঙ্গে আছে। মক্কা ও জেদ্দার আশপাশের অলিগলিতে ছড়িয়ে আছে তাদের ছোটবড় বসতি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়