পার্বত্য শান্তি চুক্তি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার

আগের সংবাদ

‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট’ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী : সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে বিদেশিদের বিনিয়োগের আহ্বান

পরের সংবাদ

বরিশালে বাড়ছে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার : পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা

প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এম কে রানা, বরিশাল থেকে : বরিশালে বেড়েই চলছে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার। বরিশালের বিভিন্ন হাট-বাজার, বিশেষ করে মাছ ও সবজির বড় বাজারগুলোতে বেশি ব্যবহার হয় নিষিদ্ধ পলিথিন। পচনশীল না হওয়ায় জমির উর্বরতা শক্তি কমে যাওয়ার পাশাপাশি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এই পলিথিনের ব্যবহার মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় পরিবেশ মারাত্মক বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। পলিথিন বন্ধে আইন থাকলেও সেটির যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় এমনটা হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার বন্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।
২০০২ সালে সরকারি সিদ্ধান্তে সব ধরনের পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রি, বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুত, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশে পরিবহন ও ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা যায়নি। তাছাড়া বরিশালের বিভিন্ন হাট-বাজারে হাতের নাগালেই পাওয়া যায় পলিথিন। ফলে এর ব্যবহার দিন দিন মাত্রাতিরিক্ত হারে বাড়ছে।
সরজমিন নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি খুচরা পণ্যের বিক্রেতারা বিভিন্ন সাইজের পলিথিন ব্যবহার করছেন। বিশেষ করে তরকারি, মাছ, মাংস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রেতারা নিষিদ্ধ পলিথিন নির্ভর হয়ে বেচা বিক্রি করছেন। নতুন বাজারের মাছ বিক্রেতারা জানান, পলিথিনে মাছ না দিলে বিক্রি হচ্ছে না বিধায় বাধ্য হয়ে পলিথিন রাখতে হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, কিছু ব্যক্তি বাজারে এসে পলিথিনের প্যাকেট সরবরাহ করছেন।
নগরীর রূপাতলী এলাকার কাঁচা বাজারে দেখা যায়, পলিথিনে ভরে তরকারি বিক্রি করছেন মো. শামীম হাওলাদার। পলিথিন কোথায় পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলে ওঠেন, সাইকেলে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা পলিথিন নিয়ে আসে। তার কাছ থেকে ২৫০ গ্রাম কিনেছেন। বাজারের অন্য ব্যবসায়ী নাসির বলেন, ‘আমাদের পলিথিন ব্যবহার করার ইচ্ছা নাই। কিন্তু অনেক ক্রেতা সঙ্গে ব্যাগ আনেন না। তাই বাধ্য হয়ে পলিথিন রাখতে হয়।’ ওই বাজারের ক্রেতা মামুন বলেন, দোকানে পলিথিন থাকে, এজন্য বাসা থেকে ব্যাগ আনা হয় না।
স্থানীয় লোকজন বলেন, পলিথিন ব্যাগের বিকল্প হিসেবে বাজারে এক সময় কাগজের ঠোঙা (খাম), চটের ব্যাগ, নেটের ব্যাগ, ঝুড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করা হতো। বিশেষ করে খাবারের হোটেলে কাগজের ঠোঙা ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন আবার পলিথিন সহজে কিনতে পাওয়ায় কাগজের থলের চাহিদা কমে গেছে।
পরিবেশবিদদের তথ্যমতে, পলিথিনের যাবতীয় বর্জ্য বর্ষাকালে খাল ও নদী হয়ে সরাসরি সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে। পরে এসব পলিথিনের বর্জ্য লবণাক্ত পানির সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। আবার লবণ চাষিরা সমুদ্রের লবণাক্ত পানি দিয়ে তৈরি করছে রান্নাবান্নার অন্যতম উপাদান লবণ। যা খাবারের সঙ্গে মিশে এসব পলিথিন মিশ্রিত লবণ মানবদেহে প্রবেশ করছে। এতে বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে অকালে মানুষ মৃত্যুবরণ করলেও পলিথিন ব্যবহারে কেউ সতর্ক হচ্ছে না। এছাড়া যত্রতত্র এসব পলিথিন ফেলে দেয়ায় তা বিভিন্ন ড্রেনে গিয়ে আটকে পানি নিষ্কাশনে বাধার সৃষ্টি করছে। ফলে বর্ষা এলেই বরিশাল নগরী পানিতে ডুবে যায়।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করা বিডি ক্লিন বরিশালের সাবেক বিভাগীয় সমন্বয়ক ইব্রাহিম মাসুম বলেন, আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় এবং প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে প্রকাশ্যে এসব পলিথিন ব্যাগ ও প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বাড়ছে। এগুলো অপচনশীল হওয়ায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এটি বন্ধে আইনের সঠিক ব্যবহার এবং এলাকার সচেতন ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) বরিশাল জেলার সমন্বয়কারী এডভোকেট লিংকন বাইন বলেন, বিভিন্ন কালোবাজারি, অধিক মুনফালোভিরা অধিক লাভের আশায় মূলত রাতের আঁধারে এই অবৈধ পলিথিন বাজারজাত করছেন। তিনি বলেন, অভিযান যে পরিমাণ থাকার কথা, সে পরিমাণ না হওয়ার কারণে এইসব অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে অবৈধ পলিথিনে। তিনি আরো বলেন, এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে কঠোর হতে হবে। পাশাপাশি নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার না করার জন্য জনসাধরণকে সচেতন হতে হবে। তাহলেই পলিথিন বিক্রি এবং ব্যবহার অনেকটাই কমে আসবে বলেন তিনি।
বরিশাল কৃষিস্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. শওকত ওসমান বলেন, পলিথিন সহজে পচে না। এটি পলিইথাইনিল নামে একটি রাসায়নিক পদার্থ। এটি পানিরোধক বলে জমিতে ব্যাকটেরিয়া তৈরিতে বাধা দেয়। ফলে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়। এটি মানবদেহের জন্যও ক্ষতিকর। এর ব্যবহারে ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ হতে পারে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. আব্দুল হালিম বলেন, পলিথিন ব্যাগের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে পলিথিনের ব্যবহার কমেছে। বর্তমানে চুরি করে কেউ কেউ ব্যবহার করছে জানিয়ে তিনি বলেন, বরিশাল বিভাগে পলিথিন উৎপাদনের কোনো কারখানা নেই। বিভাগের বাইরে থেকে এগুলো চোরাইপথে বরিশালে আসে বলে দাবি করেন তিনি।
বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী লুকিয়ে পলিথিন বিক্রি করছে। তাদের খোঁজা হচ্ছে। অবৈধ পলিথিনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। শহরের পাশাপাশি গ্রামের বাজারগুলোতেও অভিযান অব্যাহত রাখতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়