পার্বত্য শান্তি চুক্তি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার

আগের সংবাদ

‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট’ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী : সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে বিদেশিদের বিনিয়োগের আহ্বান

পরের সংবাদ

নারী দিবসের প্রয়োজন আছে কি?

প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এগিয়ে যাচ্ছে নারী, এগিয়ে যাবে অনেকদূর। বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন সারাবিশ্বে প্রশংসনীয়। সংসার থেকে রাজনীতি। রাজনীতির উচ্চশিখর, দেশ শাসন- সবকিছুই আজ নারীর আয়ত্তে। সব সেক্টরেই নারী আজ সম্পৃক্ত। বাংলাদেশ এখন নারীর সমঅধিকারের রোলমডেল। আলাদা করে নারী দিবসের প্রয়োজন আছে কি? কী বললেন শোবিজ তারকারা? শুনেছেন সোহানুর সোহাগ

অরুণা বিশ্বাস
নারী দিবস নিয়ে প্রত্যাশা হচ্ছে, সমাজ বা আমাদের পুরুষ তান্ত্রিক সমাজে মানুষরা নারীদের সম্মান দিতে পারুক বা না পারুক নারীদের এমনভাবে তৈরি হতে হবে যাতে কারো কাছ থেকে সম্মানের আশা করতে না হয়। কারণ নারী নিজেই শক্তিময়ী, দশভুজা। প্রতিটা দিনই নারীদের দিন, মায়েদের দিন। কিন্তু তারপরও পৃথিবীতে নারী যে একটা বিশেষ সত্তা সেটার গুরুত্ব বুঝাতে নারী দিবসের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি। নির্যাতনের শিকার নারীরা প্রতিনিয়তই হচ্ছে সেটা বিভিন্নভাবে হচ্ছে। যেমন শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন, কথার নির্যাতন। শুধু মাত্র বাংলাদেশেই নয় সমগ্র পৃথিবীতেই নারী নির্যাতিত হচ্ছে। যদিও নারী নির্যাতন এখন অনেকাংশে কমে এসেছে। এখন নারীরাও প্রতিবাদ করতে শিখেছে। পুরুষদের গলায় গলা মিলিয়ে কথা বলতে শিখেছে।

কাজী নওশাবা আহমেদ
সবসময় ভালো দিকে এগিয়ে যাবো বলেই প্রত্যাশা করে এসেছি। শুধু নারী হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবেও। প্রত্যন্ত এলাকায় নারীদের প্রতি বৈষম্যটা চোখে পড়ার মতো। শুধু নিজের ক্ষমতা জাহির করার জন্য, নারীদের দুর্বল ভেবে তাদের প্রতি অত্যাচার করা হচ্ছে। নারী যে সৃষ্টির অন্যতম একটা বিশেষ সত্তা সেটা বুঝানোর জন্য নারী দিবসের প্রয়োজন আছে বৈকি। নারী দিবসটা হয়তো একটা উপলক্ষ হিসেবে পালন করতে পারি। তাদের জয়গান করতে পারি। কিন্তু সেটা পুরুষ ব্যতীত না। কারণ একটা সমাজে শুধু নারী নয় পুরুষদেরও অবদান রয়েছে। এখনো নারী নির্যাতন হচ্ছে কারণ পুরুষদের মাঝে এখনো ওই বিষয়টা গড়ে উঠেনি যে তারা একা কিছু করতে পারবে না। সুন্দরভাবে সমাজ গড়ার জন্য নারী পুরুষের সমতা প্রয়োজন, এটা এখনো বুঝতে পারেনি। আসলে ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য পুরুষরা নারীদের নির্যাতন করছে মূলত। ছোট বেলা থেকে যদি তার পরিবার তাকে শেখায় নারীদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করা উচিত তাহলেই একটি পুরুষ বুঝতে পারবে তার জীবনে নারীর অবদান ঠিক কতটুকু। এই চিন্তা- ভাবনাগুলো পোষণ করলে একজন পুরুষ কখনোই নারীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবে না।

জ্যোতিকা জ্যোতি
নারী দিবসে প্রত্যাশা করি নারীরা তাদের শ্রম, প্রাপ্য অধিকার ও নিজের পাওনা সম্পর্কে আরো সচেতন হবে এবং তা আদায়ে সোচ্চার থাকবে। যে কোনো দিবসই উদযাপন করার পক্ষে আমি। তাতে করে আলাদা করে এক ধরনের উদ্দীপনা কাজ করে, নির্দিষ্ট বিষয়ে মানুষের দায়িত্ব এবং অনুভূতিকে নতুন করে শান দেয়া হয়। সেই জায়গা থেকে নারী দিবস পালিত হতেই পারে। তবে যে ইতিহাস থেকে নারী দিবসের উৎপত্তি সেই উদ্দেশ্য যেন ঠিক থাকে। গোলাপি- বেগুনি রঙের পোশাক পরে সেদিন চলাফেরা করা মানে নারী দিবস না। নারী দিবসের নির্দিষ্ট তাৎপর্য রয়েছে। এখনো নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নির্যাতন, বৈষম্যের শিকার পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার জন্য। সেই আদিকাল থেকে পুরুষেরা নিজেদের সুবিধামতো যেসব প্রথা, নিয়ম তৈরি করেছে তার শিকার পৃথিবীর সব প্রান্তের নারী। এর থেকে বের হওয়ার যুদ্ধ নারীরা যুগ যুগ ধরে করে যাচ্ছে। আমি আশা করি নারী দিবস নারীদের চলমান এই যুদ্ধকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে।

সোহেল মণ্ডল
বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়। আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র যেটাই হোক সেখানে আমরা নারীদের যেভাবে দেখি, যেভাবে চিন্তা করি নারীকে মানুষ হিসেবে বিবেচনার ক্ষেত্রে যে ধরনের আচরণ করি, সেগুলোই আসলে নারীর প্রতি নির্যাতন বা বৈষম্যের কারণ। নারীদের আলাদা চোখে দেখা দমন করার যে চেষ্টা, এগুলোর জন্যই নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে। যদি নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো যেত তাহলে নারী দিবসের আলাদা করে প্রয়োজন হতো না। নারী দিবস নিয়ে এটুকুই প্রত্যাশা, আমরা যেন এমন একটা সমাজ গড়তে পারি যেখানে আলাদা করে নারী দিবস পালন করতে না হয়।

ইমতু রাতিশ
নারী দিবস বিশেষভাবে পালন করা হয়। পিছিয়ে পড়া, সুবিধা বঞ্চিত এবং অধিকার থেকে বঞ্চিত যেসব নারী রয়েছে তাদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য আসলে নারী দিবস পালন করা হয়। যে বিষয়গুলো মাথায় রেখে নারী দিবস পালন করা হয় সেগুলো পূরণ হোক সেটাই আমার প্রত্যাশা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের দমিয়ে রাখার পরোক্ষ ব্যাপার রয়েছে সেই অর্থে নারী দিবস আলাদা করে পালন করার দরকার আছে। যখন এই চাওয়াগুলো পূর্ণ হয়ে যাবে তখন আর নারী দিবসের প্রয়োজন হবে না। যখন নারীরা পুরুষের সমতুল্য হবে বা পুরুষের চেয়ে এগিয়ে যাবে তখন নারী দিবস পালন করার আর প্রয়োজন হবে না। নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে এটাকে আলাদাভাবে দেখার কিছু নাই, সমাজে তো বাচ্চারা নির্যাতিত হচ্ছে অনেক দারোয়ানরাও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। নারীরা যে আলাদাভাবে নির্যাতনের শিকার হয় সেটা নয়। তবে নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতি নারীবাদীতাও সমসর্থন করা উচিত না। আমাদের পুরুষদের যেমন উদার হতে হবে তেমনি নারীদেরও উদার হতে হবে। আর নারী নির্যাতনের যে বিষয়টা, এটা সামাজিক সচেতনতা আর পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোটা খুব জরুরি।

জয় চৌধুরী
সর্বপ্রথম হচ্ছে কোনো দিবসকে কেন্দ্র করে কোনো কিছু মূল্যায়ন করা উচিত না। যেদিন নারী দিবস তাই নারীদের সম্মান করছি বা নারীদের সম্মান জানাচ্ছি এরকম কিছু নয়। নারীদের আমাদের সারাবছরই সম্মান করা উচিত। প্রত্যেকদিনই আমাদের নারী দিবস হওয়া উচিত। আমার মনে হয় আলাদা করে নারী দিবস পালন করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমার মনে হয় সারাবছরই দিবসগুলো পালন করা উচিত। কারণ নারীদের প্রতি সম্মান, ভালোবাসা যদি থেকে থাকে তাহলে সারাবছরই দিবস পালন করা উচিত। কারণ কাউকে সম্মান করার জন্য আলাদা দিবসের প্রয়োজন নেই। আমি যেহেতু একটা সংস্থায় কাজ করি সেহেতু অবশ্যই আমার আশপাশে যারা আছে বিশেষ করে নারীরা যারা আছে তাদের প্রতি সবসময় আমার ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, সম্মান সবসময় থেকেই থাকে। আমি মনে করি আমি একজন দায়িত্ববান বন্ধু, আমার মেয়ে বন্ধু যারা আছে তাদের জন্য আমি সবসময় একটা নিরাপত্তার জায়গা। আমার আত্মীয় স্বজন যারা আছে, আমার আশপাশে যে মেয়েগুলো আছে তাদের সবসময় আমি সম্মান করার চেষ্টা করি এবং তাদের সমস্ত ভালো কাজগুলোর পাশে থাকার চেষ্টা করি। আসলে আমার মনে হয় নারীরা যত বেশি স্বাধীনতা পাচ্ছে তত বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কারণ একজন মানুষ যখন বেশি স্বাধীনতা পায় তখন সে বেপরোয়া হয়ে যায়। নারাীরা অবশ্যই স্বাধীনতা পাবে, অবশ্যই তার ব্যক্তি স্বাধীনতা আছে। কিন্তু সেটা যখন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায় তখন সেটা হিতে বিপরীত হয়ে যায়। আমার মতে, আমাদের পোশাক অবশ্যই মার্জিত হওয়া উচিত যেটা মানুষের চক্ষুশূল না হয়, মানুষের চোখে না লাগে। কেননা পোশাক এর কারণেও বিপদ হতে পারে। সেজন্য নিজেকে সংযত রেখে চলার চলা উচিত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়