পার্বত্য শান্তি চুক্তি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার

আগের সংবাদ

‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট’ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী : সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে বিদেশিদের বিনিয়োগের আহ্বান

পরের সংবাদ

ডাচ-বাংলা ব্যাংকের টাকা ছিনতাই, ৭ কোটি টাকা গেল কোথায়!

প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকা থেকে বেসরকারী ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের ছিনতাই হওয়া টাকা উদ্ধারের খবরে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও এর পরিমাণ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গত বৃহস্পতিবার সকালে ছিনতাই হওয়া সোয়া ১১ কোটি টাকার ভেতর ৯ কোটি টাকা উদ্ধারের কথা জানিয়েছিল ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। আর তুরাগ থানা বলছে, উদ্ধার হয়েছে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে প্রায় ৫ কোটি টাকা ‘হাওয়া’ হওয়ার ঘটনায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে থানা পুলিশ ও ডিবি টাকার অঙ্ক নিয়ে ঠেলাঠেলি করলেও আসলে তা গেল কই? ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে জড়িত মাইক্রোবাস ও চালককে আটক করা হলেও এখনো বাকি ৭ কোটি টাকা উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, ছিনতাইকৃত কালো রংয়ের মাইক্রোবাস ও ৪টি ট্রাংকের মধ্যে তিনটি ট্রাংক উদ্ধার করা হয়েছে। আর ওই তিন ট্রাংকে রয়েছে ৯ কোটি টাকা। কিন্ত থানায় নিয়ে ট্রাংক খুলে পাওয়া গেছে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা! এ নিয়ে খোদ ডিবি ও থানা পুলিশের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। যদিও থানা পুলিশ বলছে, তিনটি ট্রাংকের মধ্যে একটি ছিল ফাঁকা! অপর দুই ট্রাংক খুলে পাওয়া যায় ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। একাধিক কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ডিবির দায়িত্বশীল কর্মকর্তার বক্তব্যে থানা পুলিশও বিব্রত। ছিনতাই হওয়ার বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে পুলিশ। সাংবাদিক সম্মেলনের আগে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া জরুরি ছিল। তা না করে ৯ কোটি টাকা উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে। আদতে সেই টাকা ছিল না।
এদিকে টাকা বহনকারী প্রতিষ্ঠান মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের দুই পরিচালকসহ ৭ জনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়েও সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। থানা পুলিশ সূত্র জানায়, আটককৃতরা মামলার আসামি নন। গাড়িটি জব্দ করা হলেও গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত কাউকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি পুলিশ। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে কোনও তথ্য পাওয়া গেছে কি না তাও নিশ্চিত করতে পারছে না পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার রাতে তুরাগ থানায় দায়েরকৃত মামলায় অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। কালো রংয়ের হায়েস ও চালককে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
উদ্ধারকৃত টাকার পরিমাণ সম্পর্কে ডিএমপির উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) বদরুল হাসান বলেন, টাকা উদ্ধার করেছে ডিবি পুলিশ। তাই এ বিষয়ে তারাই বলতে পারবেন। অন্যদিকে, মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন, যে টাকাগুলো ডিবি পুলিশ উদ্ধার করেছে তা এখনো আমাদের বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। উদ্ধার হওয়া টাকা থানায় রয়েছে। তবে পুলিশ গত বৃহস্পতিবার আমাদের সামনে টাকাগুলো গুনে ছিল। পুলিশের গণনা অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে উদ্ধার হওয়ার টাকার পরিমাণ ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার?।
গতকাল রাতে পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মোর্শেদ আলম বলেন, সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারিনি। তিনটি ট্রাংক থেকে

মালিকের উপস্থিতিতে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। একটি ট্রাংক ফাঁকা ছিল। চালককে আটকের বিষয়ে তিনি বলেন, মাইক্রোবাসটি ভাড়া করা ছিল। যখন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে তখন মাইক্রোচালককে হাত-পা মুখ বেঁধে পেছনে ফেলে রাখা হয়। পুরো সময়টা তার হাত পা মুখ বাঁধা ছিল। গাড়িটি ছিনতাইকারীদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে টাকাগুলো নিয়ে চম্পট দেয় দুর্বৃত্তরা। এরপর খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ এলাকায় মাইক্রোবাসটি চালকসহ উদ্ধার করা হয়।
ডিসি মোর্শেদ আলম বলেন, চালককে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার কাছ থেকে পুরো ঘটনার বর্ণনা নেয়া হচ্ছে। আমরা মামলাটি গভীরভাবে তদন্ত করছি। শিগগিরই ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করতে পারব। এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, এত মোটা অঙ্কের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার পর আমাদের ডিবি পুলিশের একাধিক টিম কাজ শুরু করে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল টাকাসহ ছিনতাইকারীদের ধরা। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ছিনতাই হওয়া ৪টি ট্রাংকের মধ্যে ৩টি উদ্ধার করা হয়। ট্রাংক ৩টি উদ্ধারের পরপরই ডিএমপির উত্তরা বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
তিনি আরো বলেন, আমরা যখন গাড়িসহ টাকা উদ্ধার করেছি, তখন ট্রাংকগুলো লক ছিল। সাংবাদিকদেরও লক অবস্থায় দেখানো হয়েছে। ট্রাংকের চাবি ছিল সিকিউরিটি কোম্পানির কাছে। ট্রাংকগুলো তুরাগ থানায় নিয়ে থানা পুলিশ ও সিকিউরিটি কোম্পানির মালিকদের কাছ থেকে চাবি নিয়ে খুলে টাকা গোনা হয়। বৃহস্পতিবার আনুমানিক সংখ্যা বলা হয়েছিল ৯ কোটি টাকা থাকতে পারে। কারণ চারটি ট্রাংকে ছিল সোয়া ১১ কোটি টাকা সে হিসেবে তাৎক্ষণিক ধারণা করা হয়েছিল তিনটি ট্রাংকে ৯ কোটি টাকা থাকতে পারে। তাই টাকার সঠিক পরিমাণ উত্তরা বিভাগের পুলিশ বলতে পারবে।
মামলার এজাহারে মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, শবেবরাতে তিনি ছুটি নিয়ে পারিবারিক কাজে শরীয়তপুর যান। পরে জানতে পারেন তাদের মাইক্রোবাসটি ছিনতাইকারীদের কবলে পরে পুরো টাকা নিয়ে গেছে। এরপর তিনি ঢাকায় আসেন। এসে ঘটনার বিষয়ে জানতে পারেন। টাকার পরিমাণ ছিল ১১ কোটি ২৫ লাখ। এর মধ্যে চার কোটি ৬৫ লাখ টাকা ছিল ১ টাকা হাজার আর ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা ছিল ৫০০ টাকা নোট। টাকাগুলো সাভারের ইপিজেডের ডাচ বাংলা ব্যাংকের বিভিন্ন বুথের ফিডিংয়ের জন্য নেয়া হয়। এ সময় গাড়িতে ছিলেন কোম্পানি সুপার ভাইজার কামাল হোসেন, চালক ওয়াহিদুজ্জামান, গার্ড বিল্লাল হোসেন ও ওয়াহিদুল, নির্বাহী খালিদ হোসেন শেখ। পাঁচজনের টিম মিরপুরের বিওএইএস থেকে সাভারের উদ্দেশে রওনা হন। পথে ছিনতাইকারীর কবলে পরলে টাকাগুলো ছিনতাই হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়