পার্বত্য শান্তি চুক্তি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার

আগের সংবাদ

‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট’ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী : সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে বিদেশিদের বিনিয়োগের আহ্বান

পরের সংবাদ

টানা তৃতীয় মেয়াদে চীনের প্রেসিডেন্ট পদে শি জিনপিং : মোকাবিলা করতে হবে যেসব চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : টানা তৃতীয় মেয়াদের জন্য চীনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন শি জিনপিং। গতকাল শুক্রবার দেশটির পার্লামেন্ট ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস (এনপিসি) সর্বসম্মতভাবে তাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছে। ৫ বছর মেয়াদে তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে মাও সেতুংয়ের পরে সব চেয়ে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করলেন ৬৯ বছর বয়সি শি।
২০১৮ সালে চীনের সংবিধান পরিবর্তন করে প্রেসিডেন্টের মেয়াদের প্রচলিত বিধিনিষেধ বাতিল করেন শি জিনপিং। দেশটিতে এর আগে প্রেসিডেন্ট পদে দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকার অনুমতি ছিল না। গত বছরের অক্টোবরে দেশটির ক্ষমতাসীন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান হন শি। তখন তিনি আরো ৫ বছরের জন্য দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ পান। ফলে তিনি যে আরেক দফায় চীনের প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন, তা অনেকটাই অনুমিত ছিল।
চীনা পার্লামেন্টে ৩ হাজার সদস্যের ভোটের মাধ্যমে গতকাল প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হয়। তবে শির কোনো প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন না। এক ঘণ্টার মধ্যে ২ হাজার ৯৫২ ভোট পেয়ে সর্বসম্মতিক্রমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন শি। ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে মাত্র ১৫ মিনিটে ভোট গণনা শেষ হয়। একই সঙ্গে শিকে চীনের কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের প্রধান হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত করেছে এনপিসি।
আগামী দুদিন ধরে মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিজের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেবেন শি জিনপিং। এর মধ্যে চীনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে নিয়োগ পেতে চলেছেন লি কিয়াং। তিনি শির অনুগত হিসেবে পরিচিত।
ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের (এনপিসি) নতুন সভাপতি হয়েছেন সাবেক দুর্নীতিবিরোধী প্রধান ঝাও লেজি (৬৬)। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে হ্যান ঝেং (৬৮) দায়িত্ব পেয়েছেন। তারা উভয়ই ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট দলের শীর্ষ নেতা।
মোকাবিলা করতে হবে যেসব চ্যালেঞ্জ : আগামী ৫ বছর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশের শাসনভার পরিচালনা করবেন শি জিনপিং। নতুন শাসনামলে তাকে কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা : যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বর্তমান কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রায় তলানিতে রয়েছে। করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি, মানবাধিকার ও বাণিজ্য ইস্যু নিয়ে দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা চলছে দীর্ঘদিন ধরেই।

গত মাসে গোয়েন্দা নজরদারি বেলুন পাঠানোর অভিযোগে শেষ মুহূর্তে চীন সফর স্থগিত করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। তবে নজরদারি বেলুন পাঠানোর বিষয়টি কঠোরভাবে অস্বীকার করেছে চীন।
ব্লিংকেন সফর বাতিল করার পরই যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিভিন্ন মন্তব্য করা শুরু করে বেইজিং। গত সপ্তাহে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুইন গ্যাং হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি আগ্রাসী মনোভাব পরিহার না করে তাহলে দুই দেশের মধ্যে দ্ব›দ্ব ও বিবাদ লেগে যেতে পারে, যার পরিণতি হবে ভয়াবহ।
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমারা চীনের উত্তরণ বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে।
তাইওয়ান হুমকি : শি জিনপিং আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে তাইওয়ানকে একত্রীকরণ করতে উদ্যোগ নিতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সা¤প্রতিক সময়ে তাইওয়ানের দিকে নিজেদের সামরিক শক্তি প্রদর্শন অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে বেইজিং।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান সফরে আসার পর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয় চীন। পেলোসি চলে যাওয়ার পরপরই ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রটিকে ঘিরে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া চালায় বেইজিং।
তাইওয়ানকে কখনো শাসন না করলেও চীন দাবি করে এটি তাদেরই অঞ্চল। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গত বছরও বলেছেন, তাইওয়ানকে প্রথমে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় একত্রীকরণ করার চেষ্টা করবেন তিনি। এতে কাজ না হলে শক্তি ব্যবহার করবেন।
তবে তাইওয়ানে যদি কোনো ধরনের হামলা হয় তাহলে স্থবির হয়ে যাবে পুরো বিশ্ব। কারণ বিশ্বের বেশিরভাগ ইলেকট্রিক পণ্যের যন্ত্রাংশ তাইওয়ানে উৎপাদিত হয়। এছাড়া তাইওয়ানে যে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রকেও ক্ষুব্ধ করে তুলবে।
ধীরগতির অর্থনীতি : চীনের ধীরগতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিষয়টি আগামী ৫ বছরের জন্য শি জিনপিংয়ের জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং হবে। তবে কমিউনিস্ট পার্টির উচ্চপদগুলোতে যেভাবে নিজেদের বিশ্বস্তদের তিনি সুযোগ করে দিয়েছেন, সে বিষয়টি ইঙ্গিত দিচ্ছে তিনি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে প্রাধান্য দেয়ার বদলে নিজের রাজনৈতিক স্বার্থটি দেখছেন।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীনের গত বছরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৩ শতাংশ। ২০২৩ সালে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৫ শতাংশ, যা গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম।
মানবাধিকার : শি জিনপিংয়ের আমলে চীনের বেশিরভাগ মানবাধিকার কর্মী হয় দেশ ছেড়েছেন, না হয় চুপ হয়ে গেছেন। দেশটির জিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর ব্যাপক ধরপাকড় এবং নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে শি জিনপিংয়ের বিরুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশগুলো দাবি করে থাকে, জিনজিয়াংয়ে যে তাণ্ডব চালানো হয়েছে, এটি অনেকটা গণহত্যারই শামিল।
শির ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে আগামী ৫ বছরে চীনে মানবাধিকারের এ পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এছাড়া তাকে কেউ চ্যালেঞ্জ জানাবে এমন কিছুও হয়ত হবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়