পার্বত্য শান্তি চুক্তি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার

আগের সংবাদ

‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট’ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী : সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে বিদেশিদের বিনিয়োগের আহ্বান

পরের সংবাদ

গম আমদানি সংকটে

প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আমরা ভেতো বাঙালি বলে বিখ্যাত। প্রধান খাদ্য হিসেবে চালই প্রধান আমাদের। কিন্তু তারপরও আমরা যে গম উৎপাদন করি, সেই তথ্যটি অনেকটাই ঢাকা পড়ে থাকে। বর্তমানে দেশে প্রতি বছর উৎপন্ন হয় ১১ লাখ টন গম। গত শতকের ষাটের দশকের গোড়া থেকে মধ্য ষাটের দশকে খাদ্য সংকটের কারণে আমরা গম ও ভুট্টা চিনেছিলাম। সেই তো শুরু গম বা আটার রুটি খাওয়া। ভেতো বাঙালির দেশে এখন বছরে ১১ লাখ টন গম উৎপন্ন হয়, এটা প্রায় অবিশ্বাস তথ্য! অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটা সত্য। আমাদের পরিসংখ্যান ব্যুরো, রাজস্ব বোর্ড ও জাতিসংঘ এই তথ্য জানিয়েছে। সরকারের পরিসংখ্যান তো এই সত্যই আমাদের জানাচ্ছে।
রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযানের এক বছর পর নতুন করে খাদ্যশস্য রপ্তানি নিয়ে একটি মোচড় দিয়েছে, লক্ষ করা যাচ্ছে। তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় খাদ্য রপ্তানির বাধা দূর করতে চুক্তি হয়েছিল ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার। মার্চের ১৮ তারিখে সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। নতুন চুক্তি না করলে, কৃষ্ণসাগরে ইউক্রেনের বন্দরগুলোকে কাজ করতে দেবে না বন্দর অবরোধকারী রাশিয়া। কৃষ্ণসাগরের বড় তিনটি বন্দর দিয়েই মূলত গম রপ্তানি হতো। ওডেসা বন্দর তার একটি। সব বন্দরই রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। ফলে রাশিয়া নতুন করে চুক্তিতে রাজি আছে যদি তাকে ফার্টিলাইজার/সার ও শস্য রপ্তানিতে যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তা থেকে মুক্ত করে দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপিয়ান রাজনৈতিক অ্যালিদের দেয়া বহু নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার শস্য ও সার রপ্তানি অচল হয়ে পড়ে আছে। তাই সে বিনিময় করতে চায় রপ্তানির ওপর এই নিষেধাজ্ঞা। মার্কিনি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হলে ইউক্রেনের বন্দরগুলোও অবমুক্ত করে দেবে রাশিয়া। রাশিয়ার শস্য ও সার সরবরাহ ও ইউক্রেনের গম সরবরাহ যদি স্বাভাবিক না হয় তাহলে কি ফল দাঁড়াবে, তা বাংলাদেশের খাদ্যবাজারের দিকে লক্ষ করলেই অনুমান করা যায়। পরিসংখ্যান দেয়া যাক, তাহলে বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন শস্যচুক্তির আওতায় যে পরিমাণ শস্য রপ্তানি হয়েছে, তার একটি চিত্র দেয়া যাক : জাতিসংঘ, রাজস্ব বোর্ড, পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে- স্পেন সবচেয়ে বেশি গম আমদানি করে ইউক্রেন থেকে। তার পরিমাণ ১৫.৪৩ লাখ টন, তুরস্ক করেছে ১১.৩৪ লাখ টন, তৃতীয় স্থানে আছে বাংলাদেশ ৬.০৫ লাখ টন, চার নম্বরে আছে ইতালি ৩.৭৬ লাখ টন, পাঁচে আছে ইন্দোনেশিয়া ৩.৪০ লাখ টন গম। আমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছি দেশ কতটা সমস্যার মধ্যে পড়েছে খাদ্যশস্য আমদানি সংকটের মুখে পড়ে। কেন খোলাবাজারে আটার দাম বাড়াচ্ছে আমদানিকারকরা, এবার নিশ্চয় বুঝতে পারবেন সবাই। কিন্তু সংকট শুরুর আগেই যদি তার গন্ধ পেয়ে যারা দাম বাড়িয়ে দেয়, তাদের দিল মে কুছ কালা হ্যায়, তা বলাই যায়। কেননা দেশে গমের ঘাটতি হয়নি এবং এর মধ্যেই গমভর্তি তিনটি জাহাজ চট্টগ্রামের পথে রয়েছে এবং আমরা আশা করতেই পারি, বৃহত্তর স্বার্থে রাশিয়ার গম ও সারের রপ্তানির ওপর থেকে মার্কিনি ও অ্যালিদের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে। যদি তা না করা হয়, তাহলে কেবল রাশিয়াই আর্থিক সংকটে পড়বে না, গোটা পৃথিবীর খাদ্য সংকটকে আরো ঘনীভূত করে তুলবে। আমরা কি এটাই বিশ্বাস করব যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর মানুষের বিরুদ্ধে তাদের ‘নিষেধাজ্ঞা-অস্ত্র’ ব্যবহার করছেন? যে সব কারণে রাশিয়ার সামরিক ঘেরে থাকা ইউক্রেনের বন্দরগুলোকে খাদ্যশস্য রপ্তানির সুযোগ দিয়েছে রাশিয়া একই কারণে মার্কিনিদেরও উচিত মানুষের স্বাভাবিক জীবনের স্বার্থে রাশিয়ান খাদ্য গম ও সার রপ্তানি করতে দেয়া। যদি যুক্তির বদলে যুক্তিই ন্যায় তুলে আনে, তাহলে তাকে যারা পরিহারের দিকে ঠেলে নিয়ে যাবে, তারা যে মানবতার শত্রæ বলে চিহ্নিত ও চিত্রিত হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা মনে করি রাশিয়ার খাদ্যশস্য ও সার রপ্তানির বাধা দূর করে দেয়া উচিত। কারণ তাতে মানুষের বেঁচে থাকার যে সংগ্রাম তা অনেকটাই সহজ ও স্বাভাবিক হবে।
না, এখনো এ বিষয়টি আলোচনার টেবিলে আসেনি, তবে আসতে বাধ্য। সময় এত দ্রুত গড়িয়ে চলেছে যে, সংকট থেকে বের হতে না পারলে তা কেবল শঙ্কাই সৃষ্টি করবে না, আরো কিছু কুচিন্তা মাথায় জড়ো হতে পারে। রাশিয়ার সামরিক হুমকি কি আমাদের সেই চেতনায় চাপ দেয়নি? রাশিয়া বলেছে, প্রয়োজনে তারা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে। ভøাদিমির পুতিনের এই হুমকি মানবজাতিকে মারাত্মকভাবে আহত করেছে। রাজনৈতিক নেতাদের এই সামরিক চিন্তা যে মানুষের বসবাসকেই ধ্বংস করবে, তা ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই।

দুই.
সংকটকে পুঁজি করে ফায়দা লোটার মানসিকতা যে মানবতাবিরোধী এই সত্য জানি আমরা কিন্তু সেই সংকটকে লুকিয়ে রেখে বাকোয়াজ করাটাও মানবতাবিরোধী অপপ্রচার। আমাদের আর্থিক সমস্যা গুরুতর, সেটা বোঝা যায় যখন কাগুজে নোট ছাপিয়ে বলা হয় ব্যাংকে তারল্য সংকট নেই। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার সংকট নেই, তবে চাপ আছে। প্রায়ই বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ফার্নেস অয়েলের এলসি খুলতে দিচ্ছে না দেশের কোনো ব্যাংক। শুধু এ খাতেই নয়, কোনো খাতেই এলসি খোলা যাচ্ছে না। এটি সাধারণ চিত্র। অসাধারণ চিত্র হচ্ছে, কেউ কেউ, বিশেষ গোষ্ঠীর কিছু মানুষ এলসি খোলার সব কিছু পাচ্ছেন। বিশেষ করে যারা গম আমদানিতে জড়িত, মাত্র ছোট বড় মিলিয়ে ১০/১২টি প্রতিষ্ঠান এলসি পাচ্ছেন। যারা গার্মেন্টের এলসি পাচ্ছেন, তাদের টাকা ফেরত আসছে না পুরোপুরিভাবে। রপ্তানির এই খাতের বৈদেশিক মুদ্রা ৪ মাসের মধ্যে দেশে আনার বাধ্যবাধকতা আছে, কিন্তু সেই নিয়মের চর্চা হচ্ছে না। ফলে গতকালকেই ৬ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কিছু নির্দেশনা দিয়েছে, যাতে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসার গতি পায়। রপ্তানিকারকরা কিছু অংশ যথাসময়ে তা আনছেন না। যত টাকা লগ্নি হচ্ছে তার একটি অংশ যদি বিদেশেই থেকে যায় বৈদেশিক মুদ্রায়, তাহলে কাগুজে হিসাব দিয়ে তো আর খাদ্য কেনা বা অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করা যাবে না।
পরিস্থিতিটা সেই বন্দুকের লাইসেন্স দিয়ে বাঘের সামনে পড়া শিকারি যেমন শিকার করতে পারেন না, তেমনি ব্যাংকের কাগুজে হিসাব দিয়ে আর যাই হোক আমদানি করা যাবে না। এই পরিস্থিতির ওপর সরকারের অর্থমন্ত্রীর কোনো মন্তব্য বা ব্যাখ্যা নেই। বিশেষ করে আমদানির এলসি খুলতে না পারলে যে রপ্তানি লক্ষ্য পূরণ করা যাবে না, সেটা তো অর্থমন্ত্রী ভালোভাবেই জানেন। তিনি নিজেও একজন ব্যবসায়ী। গত বছরের হিসাবে মাত্র ১০ শতাংশ ওয়ার্কঅর্ডার কমেছে গার্মেন্টসে। আর শিল্প খাতের অবস্থা যে নাজুক, সেটা মালিকদের মুখ দেখলেই বোঝা যায়। শিল্প সেক্টরের কাঁচামাল আমদানি সীমিত হওয়ায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্থবির হওয়ার পথে।
ঋণ করে বাহবা পাওয়া যায় বা আন্তর্জাতিক মনিটরিং ফান্ডের (আইএমএফ) ভালো সার্টিফিকেট নিয়ে তাদের ঋণ পাওয়াও সহজ, তাতে প্রকৃত সংকট থেকে বেরিয়ে আসা যায় না, যাবে না। মনে আছে তো আগের নেয়া ঋণের সুদ গুনতে হবে এ বছর। কেউ বলছেন ৩/৪ বিলিয়ন ডলার, কারো কারো ব্যাখ্যায় মিলছে ১৬/১৭ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে। একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার আয় কমছে, বিশেষ করে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়, তাতে শঙ্কা তো বুকের সাহস কেড়ে নিচ্ছে।
কয়েক দিন আগেও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সামনে দুঃসময় আসছে, তার জন্য তৈরি হতে হবে আমাদের, এখনই। হ্যাঁ, তিনিই তো সবার আগে টের পান, দুর্ভিক্ষ আসছে নাকি অর্থনৈতিক মন্দা ধেয়ে আসছে সুনামির মতো, সেটা তিনি আঁচ করতে পারেন। তাই তো সবাইকে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। কিন্তু আমরা কী নিয়ে প্রস্তুতি নেব? কী আছে আমাদের? জমিও আমাদের সীমিত। শস্য উৎপাদনের সবরকম উপকরণের দাম তো আকাশছোঁয়া- তাহলে মুখে বললেই কি প্রস্তুতি নেয়া যায়? তাই দেশের জনগণ পড়েছে এক ধন্ধের মধ্যে। তারা তো আর স্পেশালিস্ট নয় যে উৎপাদন ক্ষেত্রে নতুন ধরনের ব্যবস্থা চালু করবে। সেই ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে এবং বিশেষজ্ঞদের, যারা জাতিকে নেতৃত্ব দেন। আমরা প্রস্তুত, কেন না আমাদের পেটে ক্ষুধা ও ক্ষুধা পাওয়ার মারাত্মক ভয়। এই ভয়কে জয় করব কেমন করে, সেটা জানান দয়া করে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা চালানোর পর থেকেই আমরা বৈশ্বিক সংকটে পড়েছি। তার আগেও আমাদের নানা সমস্যা সংকট ছিল, তবে তা এতটা জেঁকে বসেনি। অর্থনৈতিক সচলতা ছিল, কিন্তু ২০২২ সালটি গেছে কোভিড-১৯ ভাইরাসের হত্যাযজ্ঞ আর প্রণোদনাপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে করতে। মূলত সেই আর্থিক সংকট থেকেই বর্তমান সংকটের সূচনা। সেই সঙ্গে যুদ্ধের রাজনৈতিক অভিঘাত ও সামরিক শঙ্কা বেড়েই চলেছে। ইন্দো-প্যাসিফিকে যুক্তারষ্ট্রের উপস্থিতি আগেও ছিল কিন্তু ন্যান্সী পেলোসির তাইওয়ান সফরের ভেতর দিয়ে তা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে চীন যে একটি আর আঞ্চলিক পরাশক্তি নয়, বৈশ্বিক পরাশক্তির অন্যতম প্রধান হয়ে উঠেছে, ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজির ভূ-রাজনৈতিক প্যাটার্নই তা প্রমাণ করে দেয়। আমরা ছোট অর্থনীতির দেশ। তারপরও আমাদের বৈদেশিক নীতি হচ্ছে সবার সঙ্গে সহাবস্থান। সবাই আমাদের বন্ধু, কেউ শত্রæ নয়। কিন্তু আমরা দেখলাম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেশিনারিজ বয়ে আনা জাহাজকে ঢাকা প্রত্যাখ্যান করেছে মার্কিনি নিষেধাজ্ঞার কারণে। এখানে বাংলাদেশ পশ্চিমা শক্তির পক্ষে। বড় অর্থনীতির সুবিধা অনেক। প্রথম থেকেই রাশিয়ার জ্বালানি কম দামে কিনে দেশে আনছে ভারত। যুক্তরাষ্ট্র তাকে থামাতে পারেনি বা থামায়নি। ওই একই কাজ আমরা করলে তামাদের ওপর খড়্গ নেমে আসত। বড় অর্থনীতির কারণেই এক বছর যুদ্ধ চালিয়ে অনেক অস্ত্র ও সৈন্য হারিয়েও রাশিয়া তেমন কোনো আর্থিক চাপের মধ্যে পড়েনি বলেই মনে হয়। যদিও রাশিয়ার অর্থনীতি ২০ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে। জিডিপিও কমেছে। একজন রাশিয়ান ধনকুবের বলেছেন রাশিয়া ফতুর হয়ে গেছে। তা সমালোচনার জন্য যথেষ্ট শোভন শব্দ, কিন্তু রাশিয়া হাতে আছে বিকল্প ব্যবস্থা। প্রথমত তার ৫৮২ বিলিয়নের (জানুয়ারি ৬ তারিখের হিসাব) বিশাল রিজার্ভের ১৭ শতাংশ রেখেছে চীনা ইউয়ানে। ফলে একটি ওয়েআউট তার আছে। দ্বিতীয় পথটি তার খনিজসম্পদ বিক্রিতে তেমন কোনো শঙ্কা দেখা দেয়নি। গত মাসেও ভারত সবচেয়ে বেশি তেল কিনেছে রাশিয়া থেকে। সেই তেলের দাম সে রুবেল পরিশোধ করেছে না কি ডলারে করেছে, সেটা বড় জিনিস নয়, তার অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে ওই অর্থ কাজ দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো ভেবেছিল যে স্যাঙ্কসন দিলে রাশিয়ার অর্থনীতি বিশাল চাপে পড়বে এবং যুদ্ধও শেষ হবে। কিন্তু তেমনটা হয়নি এক বছরেও। তার পাশে আছে চীন, ইরান ও ভারত। ভেনিজুয়েলাও যোগ দিয়েছে ওই দলে। ভারতের সঙ্গে চীনের রাজনৈতিক বিরোধ যতই থাক না কেন, সীমান্তে প্রায়ই যুদ্ধের দামামা বাজুক, বাণিজ্য বিষয়গুলোতে উভয় দেশই বন্ধুত্বের আবহাওয়ায় বাস করে। রাশিয়ার পাশে চীনের সুসম্পর্ক দেখে ভারতের উচিত ছিল তার রাজনৈতিক অ্যালি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাঙ্কসনের পক্ষে থাকা। কিন্তু দেখা গেল তার উল্টোটা। এতে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর ক্ষেপেনি, এমনকি তার ওপর কোনো জবরদস্তিও করেনি। এটাই হচ্ছে রাজনৈতিক পৃথিবীর জটিল এক দাবাখেল ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজিকে ভারতকে তার কবজার মধ্যে দরকার, এটা যুক্তরাষ্ট্র ভালোভাবেই বোঝে।
যুদ্ধের কেন্দ্রে ইউক্রেন থাকলেও পেরিফেরিয়াল বাংলাদেশও যে তার অভিঘাতে নাস্তানাবুদ হচ্ছে সেটা যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াকে বুঝতে হবে। বুঝতে হবে ইউরোপিয়ান দেশগুলোকেও। রাশিয়ার গ্যাস না হলে ইউরোপের শিল্প ও জনজীবন যে শীতার্ত হয়ে জমে থাকবে, সেই উপলব্ধি করেছে। কিন্তু বাকি পৃথিবীর কথাও ইউরোপকে ভাবতে হবে। রাজনৈতিক বিরোধ যতই সামরিক বিরোধে গড়াক না কেন, রাশিয়া তার গ্যাস উৎপাদন ১২ শতাংশ কমালেও তার পাইপলাইনগুলো বন্ধ করেনি। সীমিত করলেও বন্ধ করে দেয়নি গ্যাস সরবরাহের গতি। কারণ তার ইউরো/ডলারের যেমন প্রয়োজন আছে, তেমনি গ্যাস বিক্রিরও প্রয়োজন আছে। এ জন্য বাণিজ্যের বিষয়ে তত কঠোর হয়নি উভয়পক্ষ।
ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির যুদ্ধবাজ অস্ত্র উৎপাদকদের খাই মেটানোর জন্য কোনো দেশ তার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করতে পারে না। এবার মানুষ রক্ষার প্রকল্প নেয়া হোক, যুদ্ধবাজদের কাছে আমাদের এই আহ্বান।

ড. মাহবুব হাসান : সাংবাদিক ও কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়