পার্বত্য শান্তি চুক্তি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার

আগের সংবাদ

‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট’ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী : সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে বিদেশিদের বিনিয়োগের আহ্বান

পরের সংবাদ

কাজ শেষ না হওয়ায় কৃষকদের ক্ষোভ : হাওড়ের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে অস্বাভাবিক ধীরগতি

প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. সাজ্জাদ হোসেন শাহ্, সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওড় ঘুরে এসে : ২৮ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের হাওড়ের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী সুনামগঞ্জে এসে বাঁধ পরিদর্শন করে কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে ৭ মার্চ করেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনের দাবি ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ প্রায় ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। কিন্তু সরজমিন গিয়ে দেখা যায় কাজ হয়েছে সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ। এখনো অনেক বাঁধে ফেলা হচ্ছে মাটি। কোনো কোনো প্রকল্পে এখনো হয়নি দুর্মুজ, ঘাস লাগানো ও প্যালাসাইটিংয়ের কাজ।
কিন্তু দ্বিতীয় দফায় ৭ মার্চ হাওড়ের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের কাজের মেয়াদ শেষ হলেও গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এখনো অনেক ফসলরক্ষা বাঁধে চলছে মাটি ফেলার কাজ। কোনো কোনো বাঁধে দুর্মুজ, দূর্বাঘাস লাগানোর কাজ চলছে। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়াইন হাওরের ৭৩, ৭২, ৭১, ৭০, ৬৯, ৬৪, ৬৫, ৩৭, ৩৮, ৪১ ও ৪২নং বাঁধে গিয়ে দেখা যায় শুধুমাত্র মাটি ফেলার কাজ চলছে।
এ সময় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মতিউর রহমান, শাহাব উদ্দিন, মহিবুল ইসলাম, উজ্জ্বল মিয়া, জুবায়ের আহমদ, সোহাগ মিয়া, মাহবুব আলম হৃদয়সহ পিআইসি সভাপতিদের খোঁজ করলেও তাদের কাউকেই বাঁধে পাওয়া যায়নি। এমনকি পুরো হাওড় ঘুরেও পাওয়া যায়নি পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তাকে (এসও)। দিনব্যাপী হাওরে ঘুরলেও দেখা মেলেনি সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তাকে। পরে পিআইসি সভাপতিদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে বাঁধ নির্মাণে ধীরগতির কারণ জানতে চাইলে তারা এ বিষয়ে কোনো সঠিক জবাব দিতে পারেননি।
শান্তিগঞ্জে নিয়ম অনুযায়ী হচ্ছে না বাঁধের কাজ : শান্তিগঞ্জে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও অনেক জায়গায় হাওড়রক্ষা বাঁধের কাজে গড়িমসি করছেন পিআইসিরা। প্রশাসনের জোর তদারকিতে বাঁধের কাজ শেষ হলেও নিয়ম মানেননি অনেকেই। এতে ক্ষোভ প্রকাশ

করেছেন কৃষকরা। গত বৃহস্পতিবার উপজেলার বিভিন্ন হাওড় পরিদর্শন করে দেখা যায়, অনেক জায়গায় বাঁধের কাজ শেষ হলেও নিয়ম মানা হয়নি। বাঁধে ঘাস লাগানোর আলাদা বরাদ্দ থাকলেও অনেকে এখনো ঘাস লাগাননি কেউ কেউ। নিয়মরক্ষার মাটি ফেলে রেখেছেন বাঁধে। কম্প্রেশন, হাইড কোনো কিছুই ঠিক নেই বাঁধগুলোতে।
কৃষক আব্দুস সত্তার জানান, সরকার অনেক টাকা বরাদ্দ দিলেও পিআইসিরা ঠিকমতো কাজ করে না। তারা এলোপাতাড়ি মাটি ফেলে বাঁধ তৈরি করে। বাঁধের নিয়ম অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না জানিয়ে আরেক কৃষক চমক আলী বলেন, বাঁধ নিয়ে ভয়ে আছি। অনেক জায়গায় নড়বড়ে বাঁধ করেছে পিআইসিরা। ঘাস লাগানো, দুর্মুজ দেয়ার কথা থাকলেও কেউই মানছেন না এ নিয়ম। যে যার মতো করে করছেন বাঁধের কাজ। এ অবস্থায় ফসল নিয়ে শঙ্কায় আছি আমরা।
জগন্নাথপুরে এখনো শেষ হয়নি ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ : প্রথম দফা সময়সীমা অনুযায়ী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জগন্নাথপুরে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় আরো ৭ দিন সময় বর্ধিত করা হয়। বর্ধিত সময়সীমাও শেষ হয়েছে ৭ মার্চ। অথচ এ সময়েও শেষ হয়নি ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ। এদিকে বাঁধের কাজ শেষ না হওয়া ও বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আতঙ্কে আছেন কৃষকরা। হাওড়ের ফসলরক্ষায় বাঁধ নির্মাণের জন্য এবার সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
৪৭টি পিআইসির মাধ্যমে হাওড়রক্ষা বাঁধের এসব কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি বাঁধ নির্মাণের নির্ধারিত সময় শেষে বাঁধের কাজ শতকরা ৬০ ভাগ শেষ হয়েছিল। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত কাজের সময়সীমা বর্ধিত করা হয়। কিন্তু বর্ধিত সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও বাঁধ নির্মাণের ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব জানান, ৫১, ৫৭নং পিআইসির ওপর দিয়ে অন্য পিআইসির গাড়ি চলাচলের কারণে তারা কাজ শুরু করতে পারেননি। আমাদের দুটি পিআইসির মাটির কাজ বাকি আছে। অন্যান্য পিআইসির ড্রেসিংয়ের কাজ বাকি রয়েছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে বাকি কাজ শেষ হয়ে যাবে।
বিশ্বম্ভরপুরে শুধু মাটির কাজ শেষ হয়েছে : সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বেশ কিছু বাঁধে এখনো কাজ চলছে। এ বছর বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বৃহৎ করচার হাওড়, অঙ্গারুলি হাওড়, পুঠিয়া হাওড় এবং আংশিক শনিরহাওড়, আংশিক হালিরহাওড়সহ মোট ছোটবড় ৫৪টি প্রকল্পের মাধ্যমে হাওড়ের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ করা হয়েছে।
খরচার হাওড়ে ঝুঁঁকিপূর্ণ হরমোনের বনগাঁ, বেকাবাঁধ জিরাগ তাহিরপুরের বাঁধ রাবার ড্যামের কাছে বাঁধের ক্লোজার, অঙ্গারুলি হাওড়ের গুদামের কাছে দুটি ক্লোজার, আবওয়ার মুখ, ফুলবরি গ্রামের কাছে বাঁধ, ঘনটামারা ক্লোজার, শনি ও হালির হাওড়ের কালা গাঙের বাঁধ, কলাচাঁদপুর বাঁধ, মাসুমের কারা শামছুল কারাসহ বেশ কয়েকটি ক্লোজার রয়েছে এগুলো বিগত বছর অত্যন্ত ঝুঁঁকির মধ্যে ছিল। এ বছর এগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিউর রহিম জাদিদ জানান, আমাদের বাঁধগুলোতে মাটির কাজ সময়মতো শেষ হয়েছে অন্যান্য কাজগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার ভোরের কাগজকে বলেন, আমি এখন বিভিন্ন হাওড়ে ঘুরছি। যেসব বাঁধ এখনো নির্মাণকাজ শেষ হয়নি তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা কাবিটা স্কিম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী ভোরের কাগজকে জানান, ইতোমধ্যে বাঁধের কাজ প্রায় ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। এখনো যেসব বাঁধের কাজ শেষ হয়নি খোঁজ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়