পার্বত্য শান্তি চুক্তি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার

আগের সংবাদ

‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট’ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী : সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে বিদেশিদের বিনিয়োগের আহ্বান

পরের সংবাদ

অভিযানের পরও সক্রিয় প্রভাবশালী চক্র : নোয়াখালীতে রাতের আঁধারে মাটি ও বালু বিক্রির মহোৎসব

প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মোহাম্মদ সোহেল, নোয়াখালী থেকে : নোয়াখালীর নয়টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভূমি আইনকে অমান্য করে নির্বিচারে ফসলি জমিসহ খাস জমির মাটি ও ভূগর্ভ থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে আসছে প্রভাবশালী সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা। এই চক্রে খোদ জনপ্রতিনিধিরাও জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এই চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিকবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও আইনের আওতায় আনার পর এখন রাতে এবং সরকারি ছুটির দিনে চলছে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলনের মহোৎসব।
জেলার কবিরহাট উপজেলার ধানশালিক, বাটইয়া, ঘোষবাগ, ধানসিঁড়ি, সুন্দলপুর, চাপরাশিরহাট, নরোত্তমপুর ও কবিরহাট পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় তিন ফসলি জমি থেকে কৃষকদের নামে মাত্র টাকা দিয়ে জংিমর ওপরের অংশের উর্বর মাটি বিক্রি এবং সরকারি খালসহ কৃষি জমির ভূগর্ভ থেকে বালু উত্তোলনের অভিযোগ ওঠে।
কবিরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতিমা সুলতানা তানজিন জানান, মাটি কাটার কিছু অভিযোগ পেয়ে গত ৪ ও ৫ মার্চ ২ জন এস্কেভেটর মালিক, ১ জন পাওয়ার ট্রাক্টর মালিক ও ১ জন জমির মালিককে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
জেলার সদর উপজেলার ১নং চর মটুয়া, ১৯নং পূর্ব চর মটুয়া, ২০ নং আন্ডার চর, ৮নং এওজবালিয়া, ৬নং নোয়াখালী, ৭নং ধর্মপুর, ৯নং কালাদরাপ, ১০নং অশ্বদিয়া ইউনিয়নসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের নানাভাবে চাপে ফেলে নামে মাত্র টাকার বিনিময়ে ফসলি জমির ওপরের অংশের উর্বর মাটি কেটে রাতারাতি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে দেয়া হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি জমি ও কৃষক। অন্যদিকে জমির ভূগর্ভ থেকে বালু উত্তোলনের মহোৎসব এই উপজেলায় ব্যাপক।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি উপজেলার কালাদরাপ ইউনিয়নের মুন্সিরতালুক গ্রামে কৃষি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন করে বিক্রির অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে নেহাল হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এরআগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী ইউনিয়নের সল্লা এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অপরাধে সৌরভ ইসলাম নামে একজনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে ২টি ড্রেজার মেশিন বাজেয়াপ্ত করা হয়। ১১ জানুয়ারি দুপুরে একই ইউনিয়নের চর উরিয়ায় কৃষি জমি থেকে বালু উত্তোলনের অপরাধে একজনের কাছ থেকে ৫০ হাজার

টাকা জরিমানা আদায় করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
জেলার চাটখিল উপজেলারয় অবৈধভাবে ফসলি জমি থেকে চলছে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন। গত ২৫ জানুয়ারি অবৈধভাবে ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আবদুল কাইয়ুম নামে এক ব্যক্তিকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। অন্যদিকে, উপজেলার রামনারায়নপুর ইউনিয়নের গোমাতলী-ইটপুকুরিয়া ৫ কি.মি খাল পাড়ের মাটি বিক্রির প্রতিবাদে গত ২ মার্চ মানববন্ধন করে স্থানীয়রা।
জেলার সেনবাগ উপজেলার নবীপুর, ছাতারপাইয়া, কৈশাড়পাড়, ডমুরুয়া, অর্জুনতলা, মোহাম্মদপুর, কাদরা ও বীজবাগ ইউনিয়নে চলছে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলনের মহোৎসব। ওই ইউনিয়নে বেশিরভাগ ফসলি জমির মাটি নেয়া হচ্ছে ইটভাটায়। গত ১৫ ও ২৩ জানুয়ারি ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে ইটভাটায় নেয়ার অপরাধে এবং ফসলি জমি থেকে মাটি কাটায় পৃথক দুটি স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালিত হয়। এতে তিনটি মামলার দুটি মামলায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
কোম্পানীগঞ্জের ৭নং মুছাপুর ইউনিয়নে ছোট ফেনী নদী ও বামনী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এতে যে কোনো মুহূর্তে মুছাপুর ক্লোজার ও স্লুইস গেট বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনসহ উপজেলার সর্বত্র ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে প্রভাবশালী একটি চক্র। এই চক্রের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালিত হলেও পুনরায় চক্রটি সক্রিয়ভাবে বালু উত্তোলন ও মাটি কাটা অব্যাহত রেখেছে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি চর পার্বতী ইউনিয়নে অবৈধভাবে ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার অপরাধে একজনকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
সুবর্ণচর উপজেলার চর জব্বর, চর আমান উল্যাহ, চর বাটা, পূর্ব চর বাটা, চর জুবলি, চর ওয়াপদা, চর ক্লার্ক ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নেও চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জোরালো ভূমিকা না থাকায় অবাধে চলছে এই মাটি কাটা ও বালু উত্তোলনের মতো ভয়ঙ্কর অপরাধ। জেলার বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ি ও হাতিয়া উপজেলার সর্বত্র একই চিত্র দেখা গেছে।
বিভিন্ন উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলনের সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও প্রভাবশালীরা যুক্ত থাকায় প্রশাসনের অভিযানের পরও স্থানীয় ইউনিয়ন তহসিলদারের মাধ্যমে উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে রাতের আঁধারে এবং সরকারি ছুটির দিনে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলনের মহোৎসব চালানো হচ্ছে। এইসব মাটি ও বালু খেকোদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযানে বের হলেই ভূমি অফিসের কর্মচারী ও ইউনিয়ন তহসিলদাররা আগেই অপরাধীদের সতর্ক করে দেয়ায় বেশিরভাগ অভিযান ব্যর্থ হয়।
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি ও ভূ-গর্ভ থেকে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে রাতের বেলা অথবা ছুটির দিনেও যদি কেউ এমন অপরাধ করে থাকেন, আমরা অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়