কাতার নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী : প্রবাসে অপরাধে জড়ালে দায় নেবে না সরকার, দালালের মাধ্যমে কেউ বিদেশমুখী হবেন না

আগের সংবাদ

বিপর্যয় সামালের সক্ষমতা কম : ইঞ্জিনিয়ার ও প্যারামেডিকেল টিম নেই, প্রয়োজন উন্নত প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম

পরের সংবাদ

মূল্যস্ফীতির প্রভাবে বাজারে আগুন

প্রকাশিত: মার্চ ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরেই খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে অনেকবার অসন্তোষ দেখা গেছে। আর সাম্প্রতিক কয়েক মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে খরচ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষরা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছে, গত বছরের জুন মাস শেষে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মূল্যস্ফীতির এই হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে পরিসংখ্যান ব্যুরো। বিশেষ করে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশে আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ, যা খুবই দুঃখজনক।
তিন কারণে দেশের মূল্যস্ফীতি বাড়ছে বলে মনে করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এগুলো হলো স্থানীয় বাজারে কেরোসিন, ডিজেলসহ বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং কোভিডে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রণোদনা ও নগদ সহায়তা দেয়া। মুদ্রাস্ফীতিকে অন্যভাবেও ব্যাখ্যা করা যায়। যদি কোনো মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়, তাহলে সেই অবস্থাকেও মুদ্রাস্ফীতি বলা চলে। যেমন ২০১২ সালে ১ কেজি চালের দাম ছিল ২৫ টাকা অথচ ২০২৩ সালে ১ কেজি চালের দাম ৬০ টাকা। অর্থাৎ ২০১২ সালে ২৫ টাকায় যে পরিমাণ চাল পাওয়া যেত, আজ ২০২৩ সালে ওই একই টাকায় তার চেয়ে কম পরিমাণ চাল পাওয়া যায়। এর অর্থ হলো মুদ্রার ক্ষমতা বা তার মূল্যের অবনমন হয়েছে, যার ফলস্বরূপ মুদ্রাস্ফীতির অবস্থা তৈরি হয়েছে। সাধারণত দুটি কারণে মুদ্রাস্ফীতি ঘটে। প্রথমত, চাহিদা বৃদ্ধিজনিত কারণে বিশ্বে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে যদি কোনো দেশে পণ্য ও পরিষেবার সুবিধা নেয়ার চাহিদা বৃদ্ধি পায় অথচ সেই অনুপাতে পণ্যের উৎপাদন বা পরিষেবা সরবরাহ না থাকে, তাহলে যেটুকু পণ্য ও পরিষেবা পর্যাপ্ত আছে, তার মূল্যবৃদ্ধি হয় এবং মুদ্রাস্ফীতির অবস্থা তৈরি হয়। দ্বিতীয়ত, মূল্যবৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি। এ ক্ষেত্রে যদি কাঁচামাল অথবা সেসব পণ্য বা পরিষেবা, যার ওপর কোনো দেশের অর্থনীতি প্রবলভাবে নির্ভরশীল তার মূল্যবৃদ্ধি হয়, তবে মুদ্রাস্ফীতির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে সামাজের মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত মানুষগুলো। পণ্যের বাজারে আগুন লাগার কারণে সাধারণ মানুষ কিনতে পারছেন না তাদের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় পণ্য। সব ধরনের পণ্যের দাম হু হু করে বেড়ে চলার কারণে অসহায়ভাবে জীবনযাপন করছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
আপনাদের দুটি গল্প শুনাব। যে দুটি গল্প আমার বিবেককে ব্যথিত ও আহত করেছে। একজন মা এক সমুদ্র কষ্ট বুকে চেপে কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলছিলেন- আমার একটিই ছেলে। ক্লাস ফোরে পড়ে। অন্তত চার মাস হলো আমরা গরুর মাংস খাইনি। স্কুলে যাওয়ার সময় ছেলে জেদ করেছে, শুক্রবার যেন গরুর মাংস দিয়ে ভাত দিই। আমি অন্যের বাসায় কাজ করি। ছেলের বাবা রিকশা চালান। ২০০ টাকা নিয়ে আসছি গরুর মাংস কিনতে। কিন্তু কসাই দিল না। ২৫০ গ্রাম মাংস চেয়েছিলাম। আমার কাছে ২০০ টাকার বেশি নেই। ছেলেটি ছোট মানুষ, মায়ের সামর্থ্য সংকটের কষ্ট হয়তো সে বুঝবে না। বলতে পারেন কি ছেলের ইচ্ছা পূরণে ব্যর্থ হওয়া মা দিন শেষে অন্ধকারে কষ্টের তাপে কান্না করবে কিনা।
এখন একজন অসহায় বাবার গল্প শুনুন- রাতের কাওরানবাজার। আমার সামনেই প্যান্ট-শার্ট পরা কেতাদুরস্ত এক ভদ্রলোক এসে মুরগির গিলা-কলিজা-গলা মিলিয়ে কেজিখানেক কিনল, আর সঙ্গে চেয়ে নিল ওই ট্রের এক কোনায় রাখা দুই পিস ভালো মাংস। অভিযোগের সুরে বলতে লাগল যেই টাকা বেতন পাই, তাতে করে এই দামে আস্ত মুরগি কেনা আর সম্ভব না। আগে সোনালি কিনতাম। ব্রয়লার ছুঁয়েও দেখতাম না, সেই ব্রয়লার এখন ২৫০ টাকা কেজি! ভাবতে পারেন? এই গিলা-কলিজা দিয়েই কাজ চালাতে হচ্ছে। কিন্তু ঘরে তো ছোট ছেলে আছে, সে তো এসব বোঝে না। তার তো গলা-গিলা ভালো লাগে না, খাইতে চায় না এসব। তাই তার জন্য জাস্ট দুই পিস ভালো মাংস নিলাম। নিশ্চয়ই ঘরে ফিরে ওইগুলো রান্না করার পর ছেলের পাতে ওই দুই পিস ভালো মাংস তুলে দিতে দিতে এই অসহায় বাবা বলতে থাকবে ওই মাংস তার ভালো লাগে না, ছেলেকে হয়তো বুঝাতে থাকবে যে মুরগির গলার মাংসই তার সবচেয়ে প্রিয়!
দেশের মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত মানুষের কান্না থেকে আমরা মুক্তি চাই। অসহায় মা-বাবাগুলোর চিৎকার আমার কানে বিঁধছে। বাজারের আগুনে পুড়ছে সাধারণ মানুষ। মহামারি মোকাবিলায় দেশজুড়ে লকডাউনের ফলে আঘাত আসে প্রবৃদ্ধির গতিতে। যে কারণে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ২ শতাংশ থেকে নামিয়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশে নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। তবে চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে বলে আশা করছে অর্থ বিভাগ। আগামী অর্থবছরে আশা করছি অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়াবে। তাই এসব সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

মিজানুর রহমান মিজান : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়